কে রাঁধবে মিডডে মিল, জটে স্কুল ভাগ চন্দ্রকোনায়
মিড ডে মিল নিয়ে জটিলতার জেরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রামচক প্রাথমিক স্কুলে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের লক্ষ্মীপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই স্কুলে রুইদাস সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরাই সংখ্যায় বেশি। মোট ৪৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২৯ জনই রুইদাস। বেশ কিছু দিন আগে ওই সম্প্রদায়ের অভিভাবকেরা অভিযোগ তোলেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের আলাদা ভাবে বসিয়ে মিড ডে মিল দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি ছিল, আলাদা ভাবে যখন খেতে দেওয়া হচ্ছে, তখন স্কুলে রান্নার দায়িত্বও তাঁদের সম্প্রদায়ের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘হরিজন স্ব-সহায়ক দল’কে দেওয়া হোক। কিন্তু তেমন কোনও নিয়ম না থাকায় রুইদাসদের দাবি পূরণ হয়নি। প্রতিবাদে প্রথমে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করেন রুইদাস সম্প্রদায়ের অভিভাবকেরা। পরে গ্রামেরই আটচালায় পৃথক ‘স্কুল’ চালু করেন তাঁরা। সেখানেই রুইদাস সম্প্রদায়ের ২৯ জন ছেলেমেয়ে পড়ছে। পড়ানোর দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় একজন।
প্রশাসনের কাছে রুইদাসদের জন্য নতুন স্কুলের অনুমোদন চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। বিডিও আসেক রহমান বলেন, “সমস্যা সমাধানে বহু আলোচনা হয়েছে। বারবার ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে বলেছি। ওঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আচমকা স্কুল পরিদর্শনে যাবে এমন একটি কমিটিও গড়া হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা তা না শুনে নিজেদের মহিলাদের রান্নার কাজে নিতে হবে বলে দাবি করতে থাকেন। কিন্তু তা মানা সম্ভব নয়।”
হেঁসেলের জন্য সংসার ভাগ হয়। এ বার ভাগ হল স্কুলও। —নিজস্ব চিত্র।
এখন গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরই মিড ডে মিল রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়। রামচক প্রাথমিক স্কুলে সেই দায়িত্বে রয়েছে ‘কালীমাতা’ স্বনির্ভর গোষ্ঠী। গোষ্ঠীর সম্পাদিকা কাকলি দে বলেন, “স্কুল সব ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে বসিয়েই খাওয়ানো হয়।” যদিও রুইদাসপল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে খাওয়ানোর সময় আলাদা ভাবে বসানো হত। স্থানীয় শ্রীমন্ত রুইদাস, বাসুদেব রুইদাসদের কথায়, “দিনের পর দিন এমনটা চলায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তবে ওঁরা বিষয়টি অস্বীকার করেন।” শ্রীমন্তবাবুর কথায়, “আমরা গোপনে নজর রাখতে শুরু করি। দেখি ছেলেমেয়েদের কথাই ঠিক। তারপর গ্রীষ্মের ছুটির আগে থেকে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিই।” সমস্যা মেটাতে তৎপর হয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। স্কুলের দুই শিক্ষিকা শিবানী নায়েক ও অর্পিতা লাহা বলেন, “আমরা বারবার ওই পাড়ায় গিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ আসেনি। আর মিড মিল নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা।”
ইতিমধ্যে অনেকগুলো মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি। ওই ২৯ জনের মিড ডে মিলের বরাদ্দ চাল-টাকা জমা থাকছে স্কুলেই। সমান্তরাল ভাবে চলছে রুইদাস পাড়ার আটচালায় অস্থায়ী স্কুল। এতে তো ২৯ জন ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সমস্যা তৈরি হবে? ক’দিন বাদেই বার্ষিক পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা না দিলে এই ছাত্রছাত্রীদের বছর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। স্কুলপড়ুয়া শম্ভু রুইদাস, অর্চনা রুইদাস, বাসন্তী রুইদাসরা বলে, “পরীক্ষায় না বসলে তো আরও এক বছর ওই ক্লাসেই পড়তে হবে।”
রুইদাসপাড়ার অভিভাবকেরা কিন্তু অনড়। তাঁদের বক্তব্য, “বছর নষ্ট হয় হবে। দাবি মানা না হলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাব না।” নতুন স্কুলের দাবির কথা জানে প্রশাসন। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “এখন ওই পাড়ায় একটি সরকারি স্কুল তৈরির দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তবে আলোচনা চলছে যাতে ওদের পরীক্ষায় বসানো যায়।” জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) শিশির মিশ্রও বলেন, “এভাবে নতুন স্কুলের আবেদন মঞ্জুর করা যায় না। মিড ডে মিলের সমস্যা মিটিয়ে ছাত্রছাত্রীদের যাতে ফের স্কুলে পাঠানো যায় ও বার্ষিক পরীক্ষায় বসানো যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.