|
|
|
|
স্কুল বাঁচিয়েছেন বিনা পয়সার দুই শিক্ষক |
বরুণ দে • শালবনি |
স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান ওরা দু’জন। ১৬১ জন ছাত্রছাত্রীর স্কুলে ৬ জন শিক্ষক কমে যখন ৪ হল, তখন এগিয়ে এসে কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে পড়ানোর আশ্বাস দিলেন আশিস দাস ও অলোককুমার মাহাতো। হাঁফ ছাড়লেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আর পড়ুয়ারাও স্কুলে এসে শিক্ষকের অভাবে ক্লাস না করে বাড়ি ফিরল না।
রাজ্য জুড়েই ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে আছে প্রবল অসামঞ্জস্য। কোথাও ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক কম, আবার কোথাও তা বেশি। প্রথমদিকে অবশ্য একদা মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত রামেশ্বরপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে সীমানা প্রাচীর, শৌচাগার সংক্রান্ত সমস্যা থাকলেও ছিল না ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের সমস্যা। ১৬১ জনের জন্য ছিলেন ৬ জন শিক্ষক। কিন্তু গোল বাধল বাংলা মাস্টার রতন মাহাতো ২০০৯ সালে মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়ার পর থেকেই। আবার সমীর মাহাতো নামে অন্য এক শিক্ষক ২০১০ সালে প্রাথমিক স্কুলের চাকরি পেয়ে চলে গেলে শিক্ষক সংখ্যা কমে হয় ৪। স্বাভাবিক ভাবেই দৈনন্দিন পঠন-পাঠন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে হিমসিম অবস্থা হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের। এমন সময়েই এগিয়ে আসেন শালবনি থানার বহড়াবনির আশিস দাস এবং কন্যাবলির অলোককুমার মাহাতো। এঁরা দু’জন আসার পর এখন স্বস্তিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ। |
দুই হোতা |
আশিস দাস |
অলোক দাস |
|
আশিস ও অলোক দু’জনেই টিউশন করেন। তারই মধ্যে বিনা পারিশ্রমিকে রানেশ্বরপুরের স্কুলে পড়ান। চলতি বছরের জুলাই থেকে আশিস ইংরেজি আর অলোক গত এক বছর ধরে বাংলা পড়ান। কিন্তু কেন বিনা পারিশ্রমিকে? আশিস জানান, “টিউশন করি, পড়াতেও ভাল লাগে। স্কুলের পরিস্থিতি দেখে নিজেরাই এগিয়ে আসি। তাছাড়া পড়ালে নিজেরও চর্চা হয়।” প্রায় একই বক্তব্য অলোকের। তাঁর কথায়, “এখানে পড়ালে একটা শিক্ষার পরিবেশের মধ্যে থাকা যায়। সেই জন্যই পড়াতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলাম।”
দুই যুবক এগিয়ে আসায় পঠন-পাঠন স্বাভাবিক রাখতে সুবিধে হয়েছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমলচন্দ্র ভুঁইয়া বলেন, “ওঁদের এই সহযোগিতা ভোলার নয়।” একই বক্তব্য পরিচালন সমিতির সম্পাদক হরিপদ মাহাতোর। তাঁর কথায়, “৪ জন শিক্ষকের পক্ষে স্কুল চালানো সম্ভব হত না। ওরাই এগিয়ে এসে স্কুলকে বাঁচিয়েছে।” আর তাই অষ্টম শ্রেণির গগন মাহাতো, সপ্তম শ্রেণির বাসন্তী সরেনরা আজ আবার স্কুলের পথে।
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|