|
|
|
|
টাটা-হিতাচি যৌথ উদ্যোগ জমির সঙ্কটে |
দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত • খড়্গপুর |
রাজ্যের সমস্ত শর্ত পূরণ করে এ রাজ্যে লগ্নি করেছিল টেলকন। ধাপে ধাপে বাড়িয়েছে বিনিয়োগও। বিনিময়ে রাজ্য কিন্তু তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের গেরোয় আটকে যাচ্ছে তাদের সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। ফলে সঙ্কটে পড়েছে এখানকার বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে টাটা গোষ্ঠী ও জাপানের হিতাচি-র যৌথ সংস্থা টেলকন।
মঙ্গলবার সংস্থাটির নাম পরিবর্তন হয়ে হল ‘টাটা হিতাচি কনস্ট্রাকশান মেশিনারি কোম্পানি’। সেই উপলক্ষে হওয়া অনুষ্ঠানেই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রণবীর সিংহ সামাজিক পরিকাঠামোর অভাবে কারখানার পরিচালনা-সঙ্কটের কথা জানান। কর্মীদের ৮০%-ই জমিদাতাদের পরিবারের লোক।
এই প্রকল্পে মোট লগ্নি হওয়ার কথা ৫৭৫ কোটি টাকা। রণবীরবাবু জানান, আবাসন-সহ সামাজিক পরিকাঠামো বাদ দিয়ে লগ্নি হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। কিন্তু উপযুক্ত বাসস্থান, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের অভাবে কারখানাটির অফিসার পর্যায়ে কাজ ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা খুবই বেশি। তাই শিল্প তালুক এলাকার ঠিক বাইরে তাঁরা নিজেরাই ২২৫-২৫০ একর জমি কিনে সে সব গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠেছে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন। ওই আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় ২৪.২০ একরের বেশি জমির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ১৪ ওয়াই ধারায় ছাড়পত্র নিতে হয়। সে জন্যই রাজ্যের দ্বারস্থ হয়েছিল সংস্থাটি। আগে বিভিন্ন কর্মীদের আবাসন-সহ বিভিন্ন সামাজিক পরিকাঠামো গড়ার প্রস্তাব দিলেও নতুন সরকারের রাজনৈতিক অবস্থানের কথা ভেবে মাস ছয়েক আগে সার্বিক ভাবে সেখানে সামাজিক ও বাণিজ্যিক (গুদাম, ছোট শিল্প ও ব্যবসা ইত্যাদি) পরিকাঠামো গড়ার নতুন প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু তাতেও কোনও সাড়া মেলেনি এখনও। |
|
জমি দিয়ে কারখানায় চাকরি পেয়েছেন মিতালি পাত্র। — নিজস্ব চিত্র |
সংস্থার এমডি বলেন, “কারখানা চালাতে হলে ভাল কর্মী-অফিসার চাই। না হলে সমস্যা। সরকার অনুমতিটুকু দিক, জমি আমরাই কিনে নেব।” জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের সমস্যার কথা বারবারই তুলেছে শিল্পমহল। সম্প্রতি ‘বেঙ্গল লিডস’-এর অনুষ্ঠানেও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একই প্রসঙ্গ তোলে শিল্পমহল।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনও জানিয়েছেন, কোনও শিল্প সংস্থাকে আবাসন গড়ার অনুনতি দেওয়া হবে না। কিন্তু সংস্থার দাবি, এর সঙ্গে সাধারণ আবাসন শিল্পের যোগ নেই। হাসপাতাল, স্কুলের মতো পরিকাঠামোর সুযোগ পাবেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তৈরি হবে কাজের সুযোগও। কিন্তু আবাসন শিল্পের যুক্তিতে রাজ্য তাতে ছাড়পত্র দিতে নারাজ। সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণের দায় তা হলে কি রাজ্য নেবে, না কি তার অভাবে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ সব প্রশ্নের জবাব অবশ্য দিতে চাননি শিল্পমন্ত্রী।
এই কারখানাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন সমীর মাহার, পাপিয়া দাস, সোমা ঘোষ, মিতালি পাত্র, অংশুমান পাত্রের মতো জমিদাতা-কর্মীরাও। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি কাজ পাওয়ায় তাঁদের পারিবারিক আয় বেড়েছে। সকলেই প্রশিক্ষণ পেয়েছেন সংস্থার কাছ থেকেই। পেন্ট শপের এক কর্মী আরও প্রশিক্ষণ নিতে ছয় মাসের জন্য পাড়ি দিয়েছেন জাপানে হিতাচির কারখানায়। বাকিরাও উন্নতির স্বপ্ন দেখছেন।
সবই কিন্তু নির্ভর করছে কারখানাটি কতটা নির্বিঘ্নে চলবে তার উপরই। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কর্মীরাও। |
|
|
|
|
|