প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া একশো দিনের প্রকল্পের কাজ নিয়ে গোঘাট ১ ব্লক প্রশাসন আবার সঙ্কটে পড়ল। মজুরির দাবিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বও সামনে এসেছে। অন্য দিকে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কাজ শুরু হয়েছিল বলে মেনে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান।
কয়েক মাস আগে মজুরির দাবিকে কেন্দ্র করে ওই ব্লকেরই কুমুড়শা পঞ্চায়েতের শ্রমিকদের নিয়ে গোঘাট ১ ব্লক অফিসে অনশনে বসে তৃণমূল। চাপের মুখে প্রকল্পের অন্য কর্মসূচির তহবিল থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিল ব্লক প্রশাসন। এ বারও ওই ব্লকেরই শ্যাওড়া পঞ্চায়েত এলাকায় আমোদর খাল সংস্কারে প্রায় ২১ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে বলে পঞ্চায়েতের দাবি। কিন্তু প্রশাসনের লিখিত অনুমতি ছিল না ওই প্রকল্পে। আদৌ কাজ হয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যদিও শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির দাবিতে অনশনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাতে মদত আছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের। আবার ‘বেআইনি’ কাজের মজুরি দেওয়া হলে অনশনে বসা হবে বলে পাল্টা হুমকি দিয়েছে দলেরই অন্য একটি গোষ্ঠী। গোঘাট ১ বিডিও দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “সমস্ত বিষয়টি মহকুমা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। মহকুমা-স্তরে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মহকুমা প্রশাসনের তরফে বাস্তুকারদের নিয়ে দু’দফায় তদন্ত হয়েও গিয়েছে। তদন্তকারী অফিসার তথা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর সরকার বলেন, “জুলাই মাসের ৯ তারিখ কাজটি করতে চেয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের প্রধান। পর দিনই ব্লক প্রশাসন চিঠি দিয়ে জানতে চায়, বর্ষায় ওই খাল সংস্কারের কাজ করা আদৌ সম্ভব কিনা। দিন দু’য়েকের মধ্যে পঞ্চায়েতের তরফে লিখিত ভাবে জানানো হয়, ইতিমধ্যেই ২১ দিন কাজ হয়ে গেছে। সমস্ত বিষয়টি নিয়েই ধোঁয়াশা আছে।” সংস্কারের কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়েও সন্তুষ্ট নয় প্রশাসন। শুভঙ্করবাবু জানান, কাজের চিহ্ন হিসেবে খালের পাড়ে সদ্য তোলা মাটি দেখা যায়নি। বছর দু’য়েক আগে একই জায়গায় কাজ হয়েছিল। খালের পাড়ে ঘাস গজিয়েছে বলেও দেখা গিয়েছে। তিনি বলেন, “আরও বড় তদন্তের জন্য মহকুমাশাসকের কাছে সুপারিশ করেছি।” মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের কথায়, “প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া একশো দিনের প্রকল্পের কাজ আইনসম্মত নয়। কাজ সম্পর্কে প্রামাণ্য কিছু পাওয়া যায়নি। তবু খতিয়ে দেখার চেষ্টা হচ্ছে কতটুকু কাজ হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জেলাশাসকের নির্দেশ নেওয়া হবে।”
শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সন্তোষ পণ্ডিত বলেন, “এলাকার মানুষের চাপে প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই বেআইনি ভাবে কাজ শুরু হয়েছিল। তবে কাজটা হয়েছে। মোট ৬৫০০ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে।”
এ দিকে, এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের ‘বকেয়া’ আটকে গিয়েছে। মাঝে মধ্যেই সেই দাবিতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। তৃণমূলেরই আরেকটি গোষ্ঠী আবার উল্টো দাবি করছেন। তাঁরা বলছেন, বেআইনি কাজে মজুরি দেওয়া যাবে না। কাজটি আদৌ হয়নি বলে ৭৭ জন গ্রামবাসীর সাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ জমা পড়েছে বিডিওর কাছে। তৃণমূল নেতা শান্তিনাথ রায় বলেন, “কাজ না করে অন্যায় ভাবে মজুরি আদায়ে বাধা দেব আমরা।” দলের অন্য নেতা প্রদীপ রায়ের বক্তব্য, “শ্রমিকদের বঞ্চনা করা যাবে না। প্রয়োজনে কুমুড়শার মতো অনশনই হবে।” |