|
|
|
|
এক মঞ্চে ফের জেভিএম-কংগ্রেস |
পাকুড়ের খনি আন্দোলনে উত্তপ্ত ঝাড়খণ্ড রাজনীতি |
সঞ্জয় চক্রবর্তী • রাঁচি |
খনি এলাকায় উচ্ছেদ হওয়া গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনের দাবিতে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা (জেভিএম)-এর আন্দোলনে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ঝাড়খণ্ডের রাজ্য-রাজনীতি।
পাকুড়ের আমড়াপাড়া এলাকার এই কয়লা খনিটির কাছে গত ১৬ নভেম্বর থেকে চলছে জেভিএমের অবস্থান-বিক্ষোভ। খনির সামনের রাস্তা ঘিরে তৈরি হয়েছে অবস্থান মঞ্চ। জমি অধিগ্রহণ চুক্তি অনুযায়ী গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান আন্দোলন চলছে। অবস্থান মঞ্চে হাজির রয়েছেন জেভিএম প্রধান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মরান্ডি নিজে। সম্প্রতি জেভিএমের মঞ্চে সদলে উপস্থিত হয়েছেন এলাকার কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী স্টিফেন মরান্ডিও।
 |
জেভিএম প্রধান
বাবুলাল মরান্ডি |
পাকুড়ের এই আন্দোলন পাকুড়েই সীমাবদ্ধ নেই। জেভিএম-কংগ্রেস যৌথভাবে তা ছড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য বিধানসভা থেকে রাজধানী শহর রাঁচিতেও। দুই বিরোধী দলের সাঁড়াশি আক্রমণে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে কোণঠাসা জোট সরকার। জোট সরকারের পক্ষে আরও যেটা অস্বস্তির কারণ হল, এই আন্দোলনকে সামনে রেখে জেভিএম ও কংগ্রেসের নতুন করে কাছাকাছি চলে আসা। প্রবীণ রাজনীতিকদের ধারণা, পুনর্বাসনের আন্দোলনকে পুঁজি করে বিজেপি এবং জেএমএমের দখলে থাকা সাঁওতাল পরগণার রাজনৈতিক জমিতে থাবা বসাতে চাইছে জেভিএম-কংগ্রেস।
আন্দোলনের ফলে বন্ধ খনির কাজ। অবরোধ হঠিয়ে খনির কাজ স্বাভাবিক করতে এখনও পর্যন্ত প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। করতে সাহস পাচ্ছে না। যদিও জেভিএমের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে জোট সরকারের প্রধান দুই শরিক, বিজেপি এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। নাম-না করে বাবুলাল মরান্ডির আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। মরান্ডির আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেছেন জেএমএম নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েও শুরু হয়েছে বিজেপি-জেভিএম চাপানউতোর।
জেভিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ যাদবের বক্তব্য, “অধিগ্রহণ চুক্তি অনুযায়ী উচ্ছেদ হওয়া পরিবার পিছু একজনকে খনিতে চাকরি দেওয়ার কথা। গ্রামবাসীদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল এবং দু’টি স্কুল নির্মাণ করার দায়িত্ব ছিল খনি কর্তৃপক্ষের। কিছুই হয়নি।” এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের ১০ শতাংশ শর্তও কার্যকর করেনি বলে তাঁর অভিযোগ। পুনর্বাসনের শর্ত কার্যকর করতে রাজ্য সরকারও হাত গুটিয়ে আছে বলে জেভিএম কাঠগড়ায় তুলেছে মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডাকেও।
বাবুলাল মরান্ডির নাম উল্লেখ না-করে অর্জুন মুন্ডার কটাক্ষ, “খনিটি গড়ে ওঠার সময় যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এখন তিনিই পুনর্বাসনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন।” একই বক্তব্য জেএমএম নেতা তথা উপ-মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনেরও। উল্লেখ্য, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জন্মের পর প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বাবুলাল মরান্ডিই। পুনর্বাসনের কাজ ঝুলে থাকার দায়ও বাবুলাল মরান্ডির ঘাড়েই চাপিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী। তিনি বলেন, “ওই খনির জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ হয়, তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বাবুলাল মরান্ডি। পুনর্বাসনের চুক্তি কার্যকর করার দায়িত্ব তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মরান্ডি এড়াতে পারেন না।”
বিজেপি নেতৃত্বের এই বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ এবং রাজনৈতিক কুৎসা’ বলে খারিজ করে দিয়েছে জেভিএম। জেভিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ যাদবের কথায়, খনিটি চালু হয়েছে ২০০৪ সালে। বাবুলাল মরান্ডি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০৩ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ গ্রহণ করেন অর্জুন মুন্ডা। তিনি ২০০৫ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। |
|
|
 |
|
|