সংস্কারের পক্ষেই সওয়াল
কংগ্রেসের পাল্টা চাপে রক্ষণাত্মক বিরোধীরা
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) বিরুদ্ধে সংসদে ভোটাভুটি দাবি করে সরকারকে চাপে ফেলতে চেয়েছিল বাম-বিজেপি। পাল্টা চাপের কৌশলে সেই সঙ্কটকে সুযোগে পরিণত করতে সচেষ্ট হলেন সনিয়া-মনমোহন।
একে তো ভোটাভুটির আগেই লোকসভায় সরকারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক সুনিশ্চিত করে আত্মবিশ্বাসের ঝলক দেখাল কংগ্রেস। এবং তাতে ভোটাভুটির আগেই হার মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হল বিজেপি। সভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেস এ-ও বোঝাতে চাইল, খুচরোয় এফডিআই নিয়ে বিরোধীদের হইচই অনেকটাই লোকদেখানো। তাদের যুক্তি, খুচরোয় এফডিআই নিয়ে আজ যে বিজেপি সরব, এনডিএ জমানায় তারাই এ ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব করেছিল। বামেদেরও নিশানা করতে ছাড়েননি তাঁরা। আর সেই আক্রমণের ধাক্কায় পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে অনেকটাই রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েন বিরোধীরা।
সংসদে আজকের বিতর্কে অতীতের পরমাণু চুক্তি পর্বেরই প্রতিফলন দেখছেন রাজনীতির কারবারিরা। তাঁদের মতে, লোকসভায় এ দিন যে বিতর্ক হল, তা যতটা না অর্থনৈতিক তত্ত্বের লড়াই, তার থেকে অনেক বেশি রাজনীতির মল্লযুদ্ধ। বিজেপি, বাম, তৃণমূল এমনকী সরকারের সমর্থক দল সপা-বসপাও মনে করছে, খুচরোয় এফডিআই-এর বিরোধিতা করলে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক তুষ্ট হবে। হিন্দিবলয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিজেপির পোক্ত জনভিত্তি রয়েছে। বিপরীতে সংস্কারের পথেই হাঁটল কংগ্রেস। পরমাণু চুক্তি পর্বে তারা যেমন আগ্রাসী প্রচার চালিয়েছিল, আজ সেই রাস্তাতেই হাঁটলেন কপিল-কমলনাথরা।
সব মিলিয়ে এফডিআই-বিতর্কে প্রথম রাউন্ডে কৌশলের লড়াইয়ে এগিয়ে কংগ্রেসই। এর অন্যতম কৃতিত্ব সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথকে দিচ্ছে দল। কারণ, ভোটাভুটির আগেই সপা-বসপাকে কাছে টেনে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে তাঁর কৌশল কাজে লেগেছে। আবার লাদাখের এক নির্দল সাংসদ ও তৃণমূলকে দিয়ে ফেমা সংশোধন নিয়ে ভোটাভুটি ডেকে বিরোধীদের কিছুটা বেকুবও করেছেন কমলনাথ।
ফলে বিতর্ক শুরুর আগেই কিছুটা পিছিয়ে পড়ে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। লোকসভায় বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজের কথাতেও তার প্রতিফলন ঘটে। বিতর্কের শুরুতে সুষমা বলেন, “সরকারকে পরাস্ত করে বোঝাতে চাই না, বুঝিয়ে রাজি করতে চাই।” সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সুষমার কটাক্ষ, “দেশের মানুষের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিন, বিদেশের মানুষের কথা ভেবে নয়!” বিজেপি তথা বিরোধীদের মোকাবিলায় কংগ্রেসের আজ চমক ছিলেন কপিল সিব্বল। সুষমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আজ হিন্দিতে বক্তৃতা দেন কপিল। তিনি বলেন, ২০০২ সালে বাজপেয়ী জমানায় খুচরো ব্যবসায় একশো শতাংশ বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব দেন তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী মুরাসোলি মারান। ২০০৪ এবং গত লোকসভা ভোটে দলীয় ইস্তেহারেও খুচরোয় এফডিআই-এর দরজা খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীরা। অথচ সেই বিজেপি এখন বিরোধিতা করছে।
এ দিন বার বার পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম এবং তৃণমূলকেও অস্বস্তিতে ফেলতে সক্রিয় হন সিব্বল। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পেপসি বিনিয়োগ করার পর কৃষকদের একাংশের থেকে সরাসরি আলু কিনছে। ২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের ১৮০০ চাষি পেপসিকে আলু বেচতেন। এখন সংখ্যাটা দশ হাজার। কপিল যখন এই উদাহরণ দিচ্ছেন, তখন পাশে বসে সনিয়া বলেন, পোট্যাটো চিপসের জন্য প্রায় সব আলুই এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরবরাহ হচ্ছে। বামেদের চাপে ফেলতে কপিল বলেন, ২০০৪ সালে একটি সংবাদপত্রে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, খুচরোয় বিদেশি লগ্নিতে তাঁদের আপত্তি নেই। যদি সেই বিদেশি সংস্থা এ দেশে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়, প্রযুক্তি আমদানি করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সরকারের দাবি, সেই সব শর্ত মানা হলেও বিরোধিতা করছেন বামেরা।
জবাবে বিরোধীরা অনেকটাই রক্ষণাত্মক ছিলেন। ফলে সংসদে বিতর্কে অন্তত প্রথম দিনে এগিয়ে রইল সংস্কারই কাল লোকসভায় ভোটাভুটিতে জয় নিয়েও এক রকম নিশ্চিত কংগ্রেস। যদিও রাজ্যসভা নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়ে গিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.