|
|
|
|
ফেমায় ভোট চেয়ে তৃণমূল সুবিধাই করল কেন্দ্রের |
দরজা খোলা রেখেই এফডিআই-বিরোধিতা |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
জাতীয় রাজনীতিতে দুই নৌকায় ভর করে এগোনোর কৌশল নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভায় খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) নিয়ে আলোচনার প্রথম দিনেই এটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল রাজধানীতে।
আজ এক দিকে সরকারের এফডিআই নীতিকে তুলোধনা করে সংসদে বক্তৃতা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কাল ১৮৪ ধারায় আনা বিজেপি-র প্রস্তাব সমর্থন করে সরকারের বিরুদ্ধে ভোটও দেবেন তাঁরা। কিন্তু বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (ফেমা) সংশোধনের বিলে ভোটাভুটির প্রস্তাব নিয়ে এসে কার্যত আজ সরকারের সুবিধাই করে দিয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেস চাইছিল, এফডিআই নিয়ে বিতর্কের পর ভোটাভুটির সময় ফেমা সংশোধনীটি নিয়েও ভোটাভুটি সেরে ফেলতে। কিন্তু বিজেপি এবং সিপিএমের কৌশল ছিল, ফেমা সংশোধনীকে আরও এক মাস (সংসদে পেশ হওয়ার পর ৩০ দিন তা জমা থাকতে পারে) আটকে রাখা। তাতে এফডিআই-এর ভবিষ্যৎও ঝুলে থাকত এক মাস। এই সময়ের মধ্যে সপা এবং বসপা-র সঙ্গে কংগ্রেসের রাজনৈতিক সমীকরণ বদল হয় কিনা সেটাও দেখে নিতে পারত বিরোধীরা।
সৌগতবাবু এ দিন বিজেপি এবং বামেদের খানিকটা স্তম্ভিত করে দিয়েই ফেমা-সংশোধনী নিয়ে ভোটাভুটির প্রস্তাব আনেন। একই সংশোধনী জমা দেন লাদাখের নির্দল সাংসদ। এর পরই প্রতিবাদে সরব হয় বিজেপি-সিপিএম। সুষমা স্বরাজ, গুরুদাস দাশগুপ্তদের বক্তব্য, আরও ৩০দিন এই সংশোধনী জমা থাকার কথা। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের সাংসদরা অনেকেই অভিযোগ জমা দিতে পারেন। কেন তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে? সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ বলেন, “ফেমা নিয়ে দু’টি প্রস্তাব এসে গিয়েছে। সুতরাং আমরা ভোটাভুটির জন্য আর কেন অপেক্ষা করব? কোনও দলের আপত্তি থাকলে তারাও বরং এখনই সংশোধনী জমা দিক।” শেষ পর্যন্ত স্পিকারের নির্দেশ, আইন মোতাবেক এফডিআই নিয়ে আলোচনার পর একই সঙ্গে দু’টি বিষয় নিয়ে (ফেমা এবং এফডিআই) ভোটাভুটি করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর এই কৌশল রচনার জন্য মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন খোদ কমলনাথ। তিনিই তৃণমূলকে অনুরোধ জানান এই পদক্ষেপ করতে। তৃণমূলের রাজি হওয়ার কারণ, এতে বিজেপি বা সিপিএমের হাতে তামাক খেতে হল না, আবার কংগ্রেসের জন্য একটা দরজাও খোলা রইল। বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব এখন যথেষ্ট চাপে। তাই কংগ্রেসকে কিছুটা সুবিধা করে দেওয়ার রাজনৈতিক পদক্ষেপ করেছেন মমতা।
দলের তরফে সৌগতবাবু অবশ্য এফডিআই নিয়ে বিতর্কে বিজেপি-র সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েই সরকারের তুমুল সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, “আমেরিকার স্বার্থরক্ষা করতেই মনমোহন সরকার এফডিআই আনতে চাইছে। এটি ঔপনিবেশিকতাকে ফিরিয়ে আনা ছাড়া কিছুই নয়। দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ জড়িয়ে রয়েছেন খুচরো ব্যবসার সঙ্গে। কৃষকদেরও সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।” সৌগতবাবুর প্রশ্ন, “প্রতি বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সরকার কেন একটা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয় যা ও দেশের সরকারের হাত শক্ত করে?”
এ জাতীয় আক্রমণের জেরে কংগ্রেসের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদরা। আমেরিকা এবং হিলারি ক্লিন্টনের প্রসঙ্গ বারবার তোলায় বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ উঠে আপত্তি জানিয়ে বলেন, “বিদেশি নেতাদের নাম তোলা সংসদীয় নীতিবিরুদ্ধ।” সেই আপত্তি খণ্ডন করতে গিয়ে সৌগতবাবুর কটাক্ষ, “সলমন খুরশিদ দু’জনের ব্যাপারে স্পর্শকাতর। ইতিবাচক ভাবে হিলারির সম্পর্কে আর নেতিবাচক ভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সম্পর্কে!” রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী এ দিন বারবার উঠে চিৎকার করে বাধা দেন সৌগতবাবুর বক্তব্যে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন অধীরবাবু ও দীপা দাশমুন্সি। |
|
|
|
|
|