দেড় মাস ধরে বন্ধ মিড-ডে মিল
রাঁধুনি আছে, রান্নার সরঞ্জাম আছে। বন্ধ নেই স্কুলও। তবু কোনও এক ‘অজানা’ কারণে গত দেড় মাস ধরে মিড-ডে মিল পাচ্ছে না রামপুরহাটের একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। একদিকে মজুত চাল নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে মিড-ডে মিল না পেয়ে পড়ুয়ার উপস্থিতিও কমছে। কিন্তু কার্যত স্কুল ও প্রশাসনের গাফিলতিতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের দীঘিরপাড় প্রাথমিক স্কুলের।
রান্না বন্ধ কেন?
স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউ-ই।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানালেন, অসুস্থ হয়ে গত দেড় মাস ধরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্রকুমার মণ্ডল ভেলোরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মিড-ডে মিলটা তিনিই দেখতেন। তাঁর অনুপস্থিতির জন্য বন্ধ হয়ে রয়েছে মিড-ডে মিল। কিন্তু তিনি না থাকলে পরিচালন সমিতি বা অন্যান্য শিক্ষিকেরা কোনও উদ্যোগ নিলেন না কেন? ওই স্কুলের সহ-শিক্ষিকা আকতার জাহানি ও খালিদা আকতারের দাবি, “যতদূর জানি বরাদ্দ টাকা না মেলায় পুজোর এক মাস আগে থেকে মিড-ডে মিল বন্ধ আছে।” তাঁদের আরও অভিযোগ, স্কুলের একটি ঘরে মিড-ডে মিলের জন্য চাল মজুত আছে। কিন্তু চাবি না থাকায় ঘর খোলা যাচ্ছে না। দুই শিক্ষিকার দাবি, “প্রধান শিক্ষক তার চাবি দিয়ে যাননি।”
স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইছেন মিড-ডে মিল চালু হোক। কিন্তু সমস্যা কাটানোর জন্য তাঁরা নিজেরা কি কোনও উদ্যোগ নিয়েছেন? তার অবশ্য উত্তর নেই। আবার ওই সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য তথা স্কুল শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শিলা সাহা-র দাবি, “মাস তিনেক আগে সিউড়ির প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ থেকে প্রধান শিক্ষককে স্কুল সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র দেখানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কাগজ জমা দিয়ে আসার মাস খানেকের মধ্যেই শৈলেন্দ্রবাবু মিড-ডে মিলের বরাদ্দ টাকা নেই বলে মিড-ডে মিল বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন। তারপর থেকে বারবার চালু করতে বললেও কোনও সহযোগিতা পাইনি।”
ঘরে মজুত চাল। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
রামপুরহাট দক্ষিণ চক্রের অধীন ওই প্রাথমিক স্কুলে এমনিতে পড়ুয়া সংখ্যা ৯২। কিন্তু মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল মাত্র ৪২ জন পড়ুয়া হাজির হয়েছেন। মিড-ডে মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই হাজিরা কমছে বলে জানালেন শিক্ষকদের একাংশ। স্কুলে ছয়জন শিক্ষক রইলেও ওই দিন তার অর্ধেকই হাজির ছিলেন। বাকি তিনজন নানা কারণে ছুটিতে। দেখা মিলল মিড-ডে মিল রান্নায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হরিমায়া মণ্ডলের। রান্না কেন হচ্ছে না? “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে রান্না করছি। গত চার মাসের টাকাও পাইনি। তবু গ্রামের অন্য ৪-৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রান্না করতে চাইছে। তারাই সমস্যা তৈরি করছে। তাই রান্না হচ্ছে না।” মত হরিমায়াদেবীর।
বরাদ্দ টাকা না থাকার জন্যই রান্না হচ্ছে না বলে দাবি করছেন স্থানীয় দখলবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের দীনবন্ধু মণ্ডলও। যদিও তা মানতে নারাজ রামপুরহাট দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কিশোরকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, “ঠিক কী কারণে ওই স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ, এই তথ্য আমার কাছে নেই। তবে পুজোর আগেই মিড-ডে মিলের জন্য বন্ধ থাকা চার মাসের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর তো রান্না বন্ধ থাকার কথা নয়।” তাঁর দাবি, মিল বন্ধ থাকার কথা বিডিও থেকে এসডিও সবাই জানেন।
রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় অবশ্য বলেন, “যে কারণেই হোক মিড-ডে মিল বন্ধ আছে। বিষয়টি দেখার জন্য বিডিওকে বলা হয়েছে।” সংশ্লিষ্ট রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও আব্দুল মান্নান শুধু বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি কী কারণে বন্ধ আছে।” অন্য দিকে, এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বীরভূমের জেলা প্রাথমিক সংসদ চেয়ারম্যান রাজা ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “আমার কাছে এমন খবর ছিল না। এমন ঘটনা একদমই অভিপ্রেত নয়। এ ভাবে মজুদ থাকা চাল নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে খবর থাকা সত্ত্বেও কেন মিল চালু করতে ব্যবস্থা নেওয়া হল না তার খোঁজ নিচ্ছি।” পুরো ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানালেন রাজাবাবু। আর পড়ুয়ারা। কী বলছে তারা? দেড় মাস ধরে মিড-ডে মিল নেই। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র উজ্জ্বল শেখ, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সিতাব শেখ, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রফিকুল ইসলামরা বলে, “আমরা চাই তাড়াতাড়ি রান্না চালু হোক। খাবার পাই না বলে অনেক বন্ধুই আসছে না।” আপাতত বাড়ি থেকে ছিটেফোটা এনেই খিদে মেটাচ্ছে খুদেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.