পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে বীরভূমের জেলাশাসকের দফতরের সামনে জনসভা করল লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। পাশাপাশি নিজেদের দাবিতে জেলাশাসককে একটি স্মারকলিপিও দেয় কমিটি। তবে আগে থেকে জানালেও দফতরে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয় কমিটি।
এ দিনের কর্মসূচিতে কমিটির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন অন্যান্য বেশ রাজনৈতিক দলও। ছিলেন পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পুততুণ্ড, বীরভূমের জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, আইএনটিইউসি-র নেতা মৃণাল বসু, জেলা আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবিন সোরেন-সহ এসইউসি, বিজেপির কিছু নেতা। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সভাপতি ফেলারাম মণ্ডল, সম্পাদক জয়দীপ মজুমদারের নেতৃত্বে লোবা এলাকা থেকেও এসেছিলেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ।
স্মারকলিপিতে প্রশাসনের কাছে কমিটির দাবির দু’টি দিক আছে। প্রথমত তাঁরা চান, সেদিনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। পাশাপাশি লোবার ঘটনায় আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গেই আন্দোলনকারীদের উপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দাবিও তাঁরা প্রশাসনের কাছে রেখেছেন। দ্বিতীয়ত, সমস্যার সমাধানে রাজ্য সরকারকে দায়িত্ব নেওয়ার দাবি। কমিটি স্পষ্টই জানিয়েছে, খোলামুখ খনি প্রকল্প ঘিরে অচলাবস্থা তখনই কাটতে পারে যখন কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থার সঙ্গে গ্রামবাসীদের আলোচনার বিষয়ে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হবে। সেই আলোচনাতেই জমির দাম, জমির উপভোক্তাদের (জমির মালিক থেকে ভাগচাষি, পাট্টাদার, খেতমজুর ও মৎসজীবী ইত্যাদি) উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন ও জীবিকার নিশ্চয়তা-সহ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে বলে কমিটি দাবি জানিয়েছে। |
এ দিন সমীরবাবু বলেন, “লোবার ঘটনায় রাজ্য সরকার ফেল করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন গুলি চলেনি। তাহলে পুলিশ সুপারকে বদলি করলেন কেন? আমরা বারবার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি। অথচ এতদিন পরেও তিনি ওই তদন্তের নির্দেশ এখনও দিচ্ছেন না।” তাঁর মত, “সরকার, শিল্পপতি ও স্থানীয় লোকজন এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্যে দিয়েই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সরকারই তার ব্যবস্থা করুক।”
জগদীশবাবুকে না পেয়ে রীতি মতন ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, “আমরা সুস্থ ভাবে সমাধান চাই। তার জন্য আগে আলোচনার সুযোগ তো দিতে হবে! অথচ সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে জেলাশাসক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।” তাঁর হুমকি, “জগদীশবাবু এ ভাবে পালিয়ে বেড়ালে ভবিষ্যতে আমরা তাঁর দফতরের সামনেই আমরণ অনশনে বসব।” পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর মহাকরণের সামনে লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি আন্দোলন শুরু করবে।
এ দিন বহুবার মোবাইলে জেলাশাসককে ফোন করা হলেও তিনি তার উত্তর দেননি। |