স্টেশন থেকে বেরোলেই রয়েছে সব্জি বাজার। নতুন প্ল্যাটফর্মে কোনও সব্জি বিক্রেতা বা হকারকে বসতে দেওয়া হবে না, চার বছর আগেই বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা মানেননি বেশ কিছু বিক্রেতা। সব্জির পসরা নিয়ে প্ল্যাটফর্মে বসার ফলে ব্যস্ত সময়ে অসুবিধা হয় বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তবু প্ল্যাটফর্মে এই বিক্রেতাদের বসতে দিতে হবে, এ বার এই দাবি তুলে আন্দোলনে নেমেছে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ইস্টার্ন রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের ব্যান্ডেল-আজিমগঞ্জ লুপ ইউনিট। আরপিএফের কাটোয়া আউটপোস্টে বিক্ষোভও দেখিয়েছে তারা।
বছর চারেক আগে কাটোয়া স্টেশনে তৈরি হয় ‘ওয়ান এ’ প্ল্যাটফর্মটি। সেখান থেকে ব্যান্ডেল ও হাওড়ার লোকাল ট্রেন ছাড়ে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে থাকেন সব্জি বিক্রেতারা। ফলে ট্রেনে উঠতে-নামতে অসুবিধা হয়। নিত্যযাত্রী অনিন্দ্য মণ্ডল, অন্তরা সাহারা বলেন, “সাতসকালে ট্রেন ধরার তাড়া থাকে। সেই সময়ে প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিক্রেতারা বসলে খুব অসুবিধা হয়।” অনেক নিত্যযাত্রী বাড়ি ফেরার পথে সব্জি কেনেন। এমনই এক জন অনুপম কাঞ্জিলাল বলেন, “সব্জি কিনি বটে, তবে অসুবিধাটাই বেশি হয়।” নিত্যযাত্রী সংগঠনের নেতা পুরবধি মুখোপাধ্যায় বলেন, “সব্জি কেনাবেচার ফলে প্ল্যাটফর্মটা নোংরা হয়ে পড়ে থাকে।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন অবশ্য সব্জি বিক্রেতাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি, কাটোয়া স্টেশন চত্বরে প্রায় দু’শো হকার রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই কংগ্রেস ও সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সেই সব হকারদের উচ্ছেদে নজর নেই আরপিএফের। কিন্তু ‘ওয়ান এ’ প্ল্যাটফর্মে বসা তৃণমূল সমর্থক হকারদের উপরে আরপিএফ অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। গত দু’সপ্তাহ ধরে প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। |
মুর্শিদাবাদের বাজারসৌ থেকে প্রতি দিন কাটোয়ায় সব্জি বিক্রি করতে আসেন অনন্ত সাহা। তাঁর অভিযোগ, “চার দিন আগে সন্ধ্যায় আরপিএফ এসে সব সব্জি ফেলে দিয়ে চলে যায়।” মুর্শিদাবাদের খাগড়াঘাটের শিশির মিস্ত্রি বলেন, “ওয়ান এ প্ল্যাটফর্মে কোনও ভাবে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছে আরপিএফ।” নবদ্বীপের সুকুমার দাস, পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুরের রৌশনারা বিবিদের বক্তব্য, “কাটোয়ার উপর দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে সব্জি, জামাকাপড় কেনেন। এতে তো যাত্রীদেরই সুবিধা হয়!” কাটোয়ার চাঁপাপুকুর পাড়ের রবীন্দ্রনাথ সিংহ, বাগদিপাড়ার কাশীনাথ পালেদের আবার দাবি, “পুরো স্টেশন জুড়ে হকারদের দাপাদাপি। তাঁদের কিছু বলা হয় না। আমরা সব্জি বিক্রেতারা বসি ওয়ান এ প্ল্যাটফর্মের শেষ দিকে। আমাদের বেলাতেই আরপিএফের অত্যাচার।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের মতে, “বিষয়টি নিয়ে আরপিএফের মানবিক হওয়া উচিত।”
আইএনটিইউসি এবং সিটুর তরফে জানানো হয়, বছর দশেক আগে রেল কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়নগুলির মধ্যে একটি বৈঠকে ঠিক হয়, নতুন করে আর কোনও হকার বসতে দেওয়া হবে না। চার বছর আগে নতুন প্ল্যাটফর্ম চালুর সময়ে ঠিক হয়, সেখানে কোনও হকার বসবে না। সেই মতো তাদের সমর্থক কোনও হকার সেখানে বসেননি। কাটোয়ার আইএনটিইউসি নেতা তথা উপ-পুরপ্রধান অমর রামের দাবি, “বাইরে থেকে এনে হকার সাজাচ্ছে তৃণমূল।” সিটু নেতা দেবাশিস বসুর বক্তব্য, “ওই প্ল্যাটফর্মে হকার বসলে আরপিএফ তো তুলে দেবেই।” আরপিএফের কাটোয়া পোস্টের আইসি অরবিন্দ শর্মা বলেন, “আমরা কারও উপরে অত্যাচার করিনি। তবে ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে গিয়ে ব্যবসা করতে বলা হয়েছে।” |