একশো দিন প্রকল্পের টাকা ঠিক মতো খরচ হয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে অডিট চালু করছে জেলা প্রশাসন।
জেলার ২৭৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একশো দিনের প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়েছে, এমন ৩৪টি পঞ্চায়েতে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) অনুমোদিত বেসরকারি অডিটর দিয়ে ওই বিশেষ অডিট করানো হবে। যদি দেখা যায়, প্রকল্পের কাজের সব কিছু আইন ও রীতি মোতাবেক করা হয়নি, পঞ্চায়েতগুলিকে আর ওই প্রকল্পে বাবদ টাকা দেওয়া হবে না।”
একশো দিনের প্রকল্পে জেলায় যথেষ্ট ভাল কাজ হয়েছে দাবি করে জেলাশাসক বলেন, “গড় মাথাপিছু কাজ গত বছরের তুলনায় এই বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৩৬% বেড়েছে। ওই সময় পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। ১৩৮ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা খরচ করে ১৮৪ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে।”
কিন্তু সেই সঙ্গেই উঠেছে নানা দুর্নীতির অভিযোগও। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, গত বছরের তুলনায় এই ধরনের অভিযোগ কমেছে। গত বছর যেখানে ১৬৬টি এমন অভিযোগ মিলেছিল, এ বার অক্টোবর পর্যন্ত তা ৬০ ছুঁয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “অভিযোগগুলির ৮০ শতাংশই প্রকল্পের সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে। হয় সুপারভাইজার নিজেই দুর্নীতিতে জড়িত, অথবা প্রকল্পের বালি, ইঁট, স্লাগ ইত্যাদি কেনা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ মাল কেনার কথা ছিল, তত কেনা হয়নি।” তাঁর দাবি, প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কাজের মান এবং নানা নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্য অভ্যন্তরীণ অডিটের ব্যবস্থা করানো হয়েছে।
যে ৩৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে একশো দিন প্রকল্পের নথিপত্র বেসরকারি অডিটরদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে, তার মধ্যে আছে মঙ্গলকোট, ভাতার, আউশগ্রাম ২, জামালপুর, রায়না ১ ও ২ ইত্যাদি। এদের খরচের পরিমাণ ১৬ থেকে ৩৮ কোটি টাকার মতো। সেগুলিতে দুর্নীতি হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে তা কতখানি, সেই সব কিছু খতিয়ে দেখতেই বিশেষ অডিট করানো হচ্ছে।
অডিটে ঠিক কী কী দেখা হবে?
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের প্রকল্প আওতায় যে সব নির্মাণ হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসগুলিকে সেগুলির ছবি তুলে রাখতে বলা হয়েছিল। দেখতে হবে, সেই নির্দেশ মানা হয়েছে কি না। প্রকল্পের সমস্ত নথিপত্র ঠিক মতো রাখা হয়েছে কি না, তা-ও দেখা হবে। যে সমস্ত মালমশলা কেনা হয়েছিল, দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে তার মান ও পরিমাণ যাচাই করানো হয়েছিল কি না বা ইঞ্জিনিয়ারেরা তা প্রকল্পের নথিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন কি না, অডিটরেরা সেটাও দেখবেন। জেলাশাসক বলেন, “বিশেষ অডিটে কোনও পঞ্চায়েতের কাজে গরমিল ধরা পড়লে, প্রাথমিক ভাবে তাদের ওই প্রকল্প বাবদ কোন টাকাই আর নতুন করে বরাদ্দ করা হবে না।”
অডিটের জালে দুর্নীতির ভূত কতটা ধরা পড়ে, সেটাই দেখার। |