কারণ নিয়ে নানা মত
স্কুল চালুর পরে বছর পার, জোটেনি পড়ুয়া
শিক্ষাবর্ষের প্রায় গোড়ায় স্কুল খুলেও ছাত্র জোগাড় করা যায়নি। ফলে, পঠন-পাঠনের বালাই নেই। কার্যত কোনও কাজ ছাড়াই বেতন তুলছেন শিক্ষিকারা। গত ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধনের পর থেকে এমনই পরিস্থিতি সালানপুরের উত্তরামপুর-জিৎপুর পঞ্চায়েতের ঘিয়াডোবা উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই পরিস্থিতির কারণ কী, সে নিয়ে নানা মত সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের।
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয় ঘিয়াডোবা এলাকার এই স্কুলটির। রয়েছে তিনটি শ্রেণিকক্ষ, একটি অফিস ঘর, পড়ুয়াদের জন্য চেয়ার-বেঞ্চ, রান্নাঘর, শৌচাগার ও চাপাকল। আছেন দুজন শিক্ষিকা। নেই শুধু কোনও পড়ুয়া। এর আশপাশে রয়েছে আটটি প্রাথমিক স্কুল। সেগুলি থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দু’শো জন চতুর্থ শ্রেণি পাশ করে পড়তে যায় নেতাজি সুভাষ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, চয়নপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও আছড়া উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে।
ঘিয়াডোবা উচ্চ প্রাথমিক স্কুলটির কাছেই রয়েছে চারটি প্রাথমিক স্কুল প্রান্তপল্লি, ঘিয়াডোবা, জোরবাড়ি ও কল্যাণগ্রাম। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কৈলাশপতি মণ্ডল বলেন, “জেলা শিক্ষা দফতর এই চারটি স্কুলের পড়ুয়াদের সুবিধার জন্য ২০১০-এ এই উচ্চ প্রাথমিক স্কুল গড়ার অর্থ মঞ্জুর করে। চলতি বছরে স্কুলটি তৈরি হয়।” স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হল না কেন, সে প্রশ্নে কৈলাশবাবুর দাবি, “নতুন এই স্কুলটির কথা অনেকেই জানেন না। আমরাও ঠিক মতো প্রচার করতে পারিনি। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া আসবে বলে আশা করছি।”
সরকারি তরফে স্কুলে একটি পরিচালন সমিতি গড়া হয়েছে। সেটির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন শিক্ষাচক্রের স্কুল পরিদর্শক উত্তম মণ্ডল। পড়ুয়া না আসার কারণ প্রসঙ্গে উত্তমবাবুর আবার বক্তব্য, “স্কুল তৈরির পরে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার কিছু সমস্যা হয়েছিল। জেলা স্কুল পরিদর্শকের উপস্থিতিতে বৈঠক করে তা মেটানো হয়েছে।”
সুনসান ঘিয়াডোবা উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: শৈলেন সরকার।
বোঝাপড়ার কী ধরনের সমস্যা হয়েছিল, তা অবশ্য স্পষ্ট করে জানাতে চাননি উত্তমবাবু। স্কুলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ধুধু মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলের অফিস ঘরে বসে রয়েছেন দুই শিক্ষিকা। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বৈশালি ঘোষ জানান, তিনি ও তাঁর সহকর্মী শুক্লা গড়াই স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে একানে নিযুক্ত হয়েছেন। বৈশালিদেবী বলেন, “ছাত্রছাত্রী নেই। তাই পড়াতে হয় না। আসি যাই মাইনে পাই।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জগদীশ মালাকারের অভিযোগ, “এক প্রান্তে স্কুলটি তৈরি করায় পড়ুয়ারা আসতে চাইছে না। ওই জায়গায় স্কুল গড়ার আগে পঞ্চায়েত সমিতির আরও ভাবা উচিত ছিল।” এমন অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার। তিনি বলেন, “স্কুলটির জায়গা নির্বাচন ঠিক হয়নি। সময়ে স্কুলটি না গড়া হলে টাকা ফেরত চলে যেত। তড়িঘড়ি করতে গিয়ে অপেক্ষাকৃত নির্জন এলাকায় স্কুলটি গড়া হয়ে গিয়েছে।” এ ব্যাপারে অভিভাবকদের বোঝানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বীরেন মণ্ডল আবার পড়ুয়া না আসার জন্য ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার ‘সদিচ্ছার অভাব’কে দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে আশপাশের স্কুলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে পড়ুয়া আনতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি তা করেননি।” তাঁরা নিজেরা কেন তা করেননি, সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর অবশ্য বীরেনবাবুর থেকে মেলেনি। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বৈশালি ঘোষ সদিচ্ছার অভাবের অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “আমি অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করে ভর্তি হওয়ার আবেদন করেছি।” সালানপুরের বিডিও প্রশান্ত মাইতির আশ্বাস, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। কারণ নিয়ে নানা মত থাকলেও সকলেরই দাবি, এ বার যা হয়েছে, আগামী বছর তার পুনরাবৃত্তি হবে না। পড়ুয়া এনে শুরু হবে পঠন-পাঠন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.