খান স্কোয়্যার
খানদের সঙ্গে কাটল গত শনিবারটা!
খান ভার্সেস খান মোটেও নয়। আমার ভাগ্যে ছিল খান এবং খান। শনিবার সলমন খানের সঙ্গে অনুষ্ঠান অ্যাঙ্করিং। আর তার কয়েক ঘণ্টা পরে সেই দিনই আমার প্রিয় বন্ধুর ‘সঙ্গীত’-এ দেখা হয়ে গেল শাহরুখ খানের সঙ্গে।
উচ্ছ্বসিত? বিহ্বল? না কি শুধু মাত্রই সৌভাগ্যবান? আমার এই দিশেহারা আবেগের কারণ সম্পর্কে কোনও রকম চিরুনিতল্লাশি না করেই বলছি মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের থ্রি বিগ এস-এর সঙ্গে দেখা হল আমারসচিন, সলমন, শাহরুখ খান!
সেই ছেলেবেলায় সলমনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ দেখতে গিয়ে। যে মুহূর্তে সলমন পরদায় এলেন, আমার ভেতরে একটা ‘ফানি ফিলিং’ হয়েছিল। সেই অনুভূতি-যাতে যে কোনও মেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। যে আবেগে হাঁটু কাঁপে থর থর করে।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সলমনের প্রতি আমার ব্যাপক ‘ক্রাশ’ ছিল। আর সেটা ছিল অনেক দিন ধরে। ছবিটার সেই হিট গানটা ‘কবুতর যা যা যা...’ তখন সব সময় গুনগুন করতাম। কুড়ি বার আমি ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ দেখেছি। সলমনকে ঘিরে এক ধরনের ঘোরের মধ্যে দিন কাটিয়েছি বছরের পর বছর।
পরিস্থিতিটা বদলাল ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দেওয়ার পরে। আট বছর আগের কথা। আমি এক দিন সলমনের বাড়িতে একটা নেমন্তন্ন পেয়েছিলাম। সেই নিমন্ত্রণ পেয়ে আমার তো প্রায় মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। পরদায় যে সলমনকে দেখেছি তার থেকে বাস্তবের, রক্ত-মাংসের সলমন একেবারে আলাদা। যদিও ওঁর মধ্যে একটা ছেলেমানুষি চার্মও ছিল। আমি ওঁকে যত দেখতাম ততই অভিভূত হয়ে যেতাম। ওঁর সঙ্গে ফের দেখা হল সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে। সোহেল খান বলিউডের নায়কদের মালিক এই লিগে। আর সলমনও এই ক্রিকেট লিগের বেশ বড় একটা মুখ।
বছর কয়েক আগে শারজায় একটা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে দেখেছিলাম সলমনের কী সাংঘাতিক ক্রেজ! ওঁর জনপ্রিয়তা, ওঁকে নিয়ে উন্মাদনা ভারতের সীমানা ছাপিয়ে অন্য দেশেও প্রবল। তারকা হিসেবে এত বড়, কিন্তু যখনই ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে, মনে হচ্ছে ওঁর মধ্যে একটা বেপরোয়া ব্যাপার আছে। চোখের মধ্যে হালকা একটা দুষ্টুমি খেলে যায় সব সময়, যে দুষ্টুমিটা ওঁর ব্যক্তিত্বের মিষ্টত্ব।
দুষ্টুমির কথা বললে মনে পড়ে যায় আই পি এল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সে সময় কী প্রচণ্ড দুষ্টুমি যে করেছিলেন আমার সঙ্গে কী বলব। আমার ওঁকে ব্যাকস্টেজে ইন্টারভিউ করার কথা ছিল। একটা নির্দেশ এল আমার কানেথ্রি, টু, ওয়ান। তখন আমার লাইভ শো শুরু হওয়ার কথা। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সলমন হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করলেন। যাকে বলে হাস্যকর অবস্থা। ভাবুন একবার! আমি এ দিকে ‘লাইভ’ আর যে সেলিব্রিটিকে আমি ইন্টারভিউ করব তিনি আমার সঙ্গে কানামাছি খেলে বেড়াচ্ছেন। তিনি তাঁর বডিগার্ডের পেছনে হঠাৎ ছুটতে শুরু করলেন। সলমন জানতেন আমি ওঁর পেছনে ক্যামেরা নিয়ে ছুটছি, তা সত্ত্বেও তাঁর ভ্রুক্ষেপ নেই। আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলে চলেছেন। শেষমেশ যখন আমাকে ঢের নাস্তানাবুদ করা হয়েছে তখন ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়ালেন এমন ভাবে যেন কিছুই হয়নি। এই রকমই কুল সলমন খান। জীবনে যে ্যকোনও ওঠাপড়া ওঁর গায়ে লাগে না।
শাহরুখ খান আলাদা। আমি ওঁর সঙ্গে বহু বার কথা বলেছি। জীবনে যত পুরুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর মধ্যে অন্যতম ‘চার্মিং’ মানুষ হলেন শাহরুখ। আর শাহরুখের বেলায় দেখেছি উনি মেয়েদের খুব শ্রদ্ধা করেন। পুণেতে কলকাতা নাইট রাইডার্স সেমি ফাইনালে জেতার পর সবাই ‘করব লড়ব জিতব রে’ গানটার সঙ্গে নাচতে চাইছিল। কিন্তু আমার পক্ষে নাচা সম্ভব ছিল না কারণ আমি একটা ছোট স্কার্ট পরেছিলাম। আমার অস্বস্তি দেখে শাহরুখ আমাকে এক কোণে টেনে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন এই ছোট স্কার্টটা পরেছ?” আমি বললাম সে দিনের অনুষ্ঠানের ওয়াড্রোবে ওই স্কার্টটাই রাখা ছিল আমার জন্য। তবু যাই হোক শাহরুখের উদ্দীপনা দেখে আমি ওঁকে প্রমিস করেছিলাম দল ফাইনালে জিতলে আমি স্কার্ট পরেই নাচব। এবং আমি তাই করেছিলাম। স্টুডিওতে ফাইনালের দিন আমার প্রমিস রেখেছিলাম।
শাহরুখের স্বভাবে যেটা সবচেয়ে লক্ষণীয়, তা হল ওঁর প্যাশন। মনের দিক থেকে বলিউডে সবচেয়ে সপ্রতিভ তিনি। যাকে বলে সবচেয়ে স্মার্ট মাইন্ড। শাহরুখ যা করেন, তার মধ্যে পুরোটা আবেগ ঢেলে দেন। গত সপ্তাহে যখন ম সঙ্গে দেখা হল একই রকম চার্মিং মনে হল ওঁকে। মুম্বইয়ে তাজ প্যালেসে আমার বন্ধু আকাশের বিয়ের সঙ্গীত আসর বসেছিল। আন্তর্জাতিক শিল্পী একন তখন পারফর্ম করছেন। শাহরুখ আর একন দুজনেই খুব জনপ্রিয়। একন ওঁর জনপ্রিয় গান ‘লোনলি’ তো গাইলেনই, সেই গানের পর হিন্দি গানও গাইলেন। গাইতে লাগলেন তাঁর গলায় বিখ্যাত গান ‘ছম্মক ছল্লো’। দর্শক কাম শ্রোতাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, একন গান গাইতে গাইতেই শাহরুখকে তাঁর গানের সঙ্গে নাচার জন্য মঞ্চে ডাকলেন। অসাধারণ একটা মুহূর্ত। এক কথায় গ্রেট।
গান শেষ হতে না হতে প্রায় শ’ পাঁচেক লোক ওঁকে ঘিরে ধরল। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড শামাকে সঙ্গে নিয়ে পার্টিতে গিয়েছিলাম। শামা আবার শাহরুখের বিরাট ফ্যান। সামনেই শামার বিয়ে। আমি চাইছিলাম বিয়ের আগে যদি শাহরুখ ওকে আশীর্বাদ করেন তো বেশ হয়। ধীর গতিতে শাহরুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু পরমুহূর্তেই বুঝতে পারলাম শাহরুখের কাছাকাছি পৌঁছনো খুব কঠিন।
অন্তত শ’পাঁচেক লোক ধরে টানাটানি করছে। শেষমেশ যখন শাহরুখের কাছে পৌঁছলাম, দেখলাম যা চলেছে সেটাকে পাগলামি ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ওঁর পিঠে হাত রাখতে দেখি তিনি গলগল করে ঘামছেন। তারই মধ্যে শাহরুখ ওঁর স্বভাবোচিত ভঙ্গিতে বললেন, “হাই ডার্লিং, হাউ আর ইউ? আমাকে কিন্তু হাগ কোরো না। প্রচণ্ড ঘেমে গিয়েছি।” আমি হেসে শামার কথা ওঁকে বললাম। এও বললাম যে আমি চাই শাহরুখ যেন শামাকে আশীর্বাদ করেন। সেই হট্টগোলের মধ্যেও শাহরুখ শামাকে বললেন, “হাই শামা। মাশাআল্লাহ্। কিতনি অচ্ছি লগ রহে আপ।”
শাহরুখের ব্যবহারে শামা অভিভূত হয়ে গেল। বাড়ি ফেরার পথে শামা বলছিল শাহরুখের মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যেটা এক্সট্রাঅর্ডিনারি, ব্যতিক্রমী। ওই ভিড়ের মধ্যে শামার নামটা একবার মাত্র শুনে কী রকম মনে রেখে তাকে ডাকলেন, এটাই তো আশ্চর্যের। শাহরুখের সেই ব্যবহারে শামা চিরদিনের জন্য আপ্লুত হয়ে রইল। তাই তো বলি, দাই নেম ইজ খানশাহরুখ খান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.