তারাবাজি |
কম কথা কম পার্টি বেশি রান |
বিরাট কোহলিকে দেখলে ঠিক এটাই মনে হয় দীপ দাশগুপ্ত-এর। |
বিরাট কোহলির মতো এত পরিবর্তন আমি কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের মধ্যে দেখিনি। এক এক সময় মনে হয় এ যেন বিরাট টু। বিরাট ওয়ান কেমন ছিল আমরা সবাই জানি। আর পাঁচটা টিন-এজার যেমন হয়, উদ্দাম, বোহেমিয়ান টাইপের। নিজের উপর কোনও সংযম নেই। জীবনকে যে পুরোমাত্রায় ভোগ করে নিতে চায়।
এই বিরাট সম্পূর্ণ আলাদা। ভাল করে ভেবে দেখুন ২০১১-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের পর বিরটা কী বলল। ও বলল সচিন অনেক দিন টিমকে টেনেছে এ বার আমাদের সময় হয়েছে টিমকে কাঁধে করে টেনে নিয়ে যাওয়ার। আচার-আচরণে সব সময়ে একটা দায়িত্ব নিতে চাওয়ার আগ্রহ। এই বয়সী একটা ছেলে শখ করে টিমের দায়িত্ব নিচ্ছে ভাবা যায় না! কিন্তু বিরাটের এখন মাঠের মধ্যে-বাইরে সর্বত্র একটা দায়িত্ব নিতে চাওয়ার ভাব। স্কোর পাঁচ উইকেটে ৪০। কিন্তু তাতে কী? বিরাট তো আছে। ও ঠিক ভেবে নিচ্ছে আমি দায়িত্ব নিয়ে নিলাম স্কোরবোর্ডে এখন টিমের রান দেখতে পাচ্ছি পাঁচ উইকেটে ৩০০। ঠিক শাহরুখ খানের ছবির মতো। ম্যয় হুঁ না। অর্থাৎ পরিস্থিতি যতই বিগড়ে যাক, আমি ঘাবড়াচ্ছি না। আমার কাছে বিরাট কোহলির সবচেয়ে বড় সেক্স অ্যাপিল এটাই। দায়িত্ব নিতে চাওয়া।
একবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে শেষ ওভারে ২০ রান দিয়ে বিরাট ম্যাচ হারাল। সবাই ওকে গালাগালি করছে। মিডিয়া দর্শক সবাই। আমরা ক্রিকেটাররা কিন্তু বলাবলি করলাম, ওই ওভারটা বুক পেতে ও দায়িত্ব নিয়েছে। নাও নিতে পারত। এটাই আসল মস্তানি।
পূজারার সঙ্গে ওর অনেক তফাৎ। পূজারাও লম্বা রেসের ঘোড়া। কিন্তু পূজারা খুব শান্ত, চুপচাপ। ভারতকে ও-ও টানে কিন্তু বিরাটের মধ্যে যে এক্স ফ্যাক্টরটা আছে সেটা পূজারার মধ্যে নেই। এন্ডোর্সমেন্টের দিকে তাকালেও দেখা যাবে বড় বড় সব ব্র্যান্ড বিরাটের সঙ্গে। টয়োটা ওকে মডেল হিসাবে ব্যবহার করছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পিন আপ হিরো থেকে ক্রিকেট মাঠের গাম্ভীর্যে ওর কেমন উত্তরণ হয়েছে। |
|
আমি ক্রিকেটারদের মধ্যে চার জনকে দেখেছি যারা কম কথা বলে। কিন্তু এমন কথা বলে যে তার একটা দুর্ধর্ষ প্রতিক্রিয়া আছে। কথাগুলো মনে থেকে যায়। এরা সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগ, মাইকেল ক্লার্ক আর এম এস ধোনি। প্রত্যেকে কথা কম বলে, কিন্তু যেটা বলে সেটা মনে রাখলেই যথেষ্ট। ওই কম কথাতেই সহবাগ বা মাইকেল ক্লার্ক এমন একটা টিপ্স দিয়ে দেবে যে প্রচুর উপকার পাওয়া গ্যারান্টি। এই লিগে বিরাট ক্রমশ ঢুকে পড়ছে। ওর কথার মধ্যে সেই ওজনটা এখন এসে গিয়েছে। মাঠের বাইরে আগেকার কোহলি
আর নেই।
মাঠের মধ্যে কিন্তু ওর দাপটটা ফাটাফাটি। বিরাটের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখলে মনে হয় এ ছেলে ভবিষ্যত ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্যই এসেছে। পরিণতিবোধটাও আছে। ধোনির বিপন্ন অবস্থা দেখে যখন সহবাগ এবং গম্ভীর বারবার করে বলছে আমরা ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য তৈরি। তখন বিরাট একটা কথাও বলেনি।
নতুন বিরাট কোহলির শরীরে ট্যাটু আছে। কানে দুল আছে। তরুণ সমাজ ওকে একদম নিজের মনে করে। কিন্তু ওরা বোঝে কি না জানি না নতুন বিরাট কোহলির শরীরে আরেকটা অন্য অলঙ্কারও আছে।
যার নাম শৃঙ্খলা। |
আগের পাঁচ |
মনসুর আলি খান পটৌডি |
এম এল জয়সিংহ |
রবি শাস্ত্রী |
অজয় জাদেজা |
ইরফান পাঠান |
|
এই বিরাট নিজের ডায়েট সম্পর্কে খুব সচেতন। উল্টোপাল্টা কিছু খাবে না। পানীয়ের ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। পার্টিতে কম যাচ্ছে। আইপিএল পার্টিতেও ওকে আমি আর বেশি সময় থাকতে দেখি না।
নিজের জীবনটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে বলেই ব্যাটিংয়ের মধ্যেও একটা শৃঙ্খলা এসেছে। ক্রিকেট একটা লাইফস্টাইল স্পোর্ট। ক্রিকেটারদের লোকে মাঠে দেখে হয়ত ছ’ঘণ্টা। কিন্তু মাঠের বাইরেও তাদের অদৃশ্যে ক্রিকেট খেলে যেতে হয়।
কেউ কেউ সেটা বোঝে । কেউ কেউ সেটা বোঝে না।
যারা বোঝে তারাই থেকে যায়। তারা বোঝে আম্পায়ার ‘প্লে’ বলা আর দিনের শেষে বেল তুলে নেওয়ার মধ্যে জীবনটা শেষ নয়।
ইতিহাস হতে হলে থাকতে হলে নিজেকে লম্বা দৌড়ের ঘোড়ার মতো ভাবতে হবে। বিরাট এখন সেটাই ভাবছে। ওর ব্যাটিংয়ের শৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে মাঠের বাইরের শৃঙ্খলা থেকে।
মাঠের মধ্যে ওর জঙ্গি মনোভাব দেখলে আমার একজনের কথা খুব মনে পড়ে। বিরাটের মধ্যে কোথাও আমি দাদিকে দেখতে পাই। কাকে আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
কে বলতে পারে বিরাটও একদিন জার্সি খুলে ওড়াবে না।
|
বিরাট কোহলির অ্যাটিটিউড দেখে
ফিদাহ্ হয়ে যাই আমি। মাঠে নামলেই
আরও কারও দিকে চোখ যায় না।
বিদিপ্তা মজুমদার
গোখেল মেমোরিয়াল স্কুল |
অ্যাটিটিউড, ফিজিক আর
লুকস। এ তো একেবারে হ্যাট্রিক।
তার ওপর ট্যাটুজ!
স্বাগতা রায়
শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ |
|
|