হুল্লোড়
দল বেঁধে ক’জনে মিলে
রাত পেরোলেই হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শৌভিকের। ও দিকে আনকোরা ‘কল অব ডিউটি’ও পড়ে আছে কম্পিউটার টেবিলে। পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকই আছে। তাই প্রথম রাউন্ডটা একটু পরখ করে নেওয়াই যায়!
গেম যখন শেষ হল ঘড়িতে ভোর ছ’টা। পরীক্ষাটা যাচ্ছেতাই হয়েছিল বলাই বাহুল্য। তবে গেম পাগলামির একটা সুবিধাও ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কেরিয়ার বাছতে কোনও অসুবিধা হয়নি। শৌভিক মুখোপাধ্যায় এখন এক সফল গেম ডেভেলপার।
ভিডিও গেম এমনই নেশা ধরানো। “একবার গেমের প্রোগ্রামিং করলে আর কোনও প্রোগ্রামিং করতে ইচ্ছেই হবে না,” বলছিলেন আর এক গেম প্রোগ্রামার অরিন্দম নাথ। তাঁর ক্ষেত্রেও নেশাটাই পেশা।

পালটে গেছে সময়টা...
“সুপার ম্যারিও, প্যাকম্যন তো ক্লাসিক। ওগুলো সব সময় খেলা যায়। তবে আমার ফেভারিট কিন্তু মুভি গেম,” বলছিলেন গেম-পাগল অর্চিষ্মান। ‘স্পাইডারম্যান’ থেকে মুভি গেমের প্রেমে পড়ে আছেন। রিলিজ করার সঙ্গে সঙ্গে কিনে নিয়েছেন ‘স্কাইফল’। তবে সিনেমার গল্প থেকে ডেভেলপ করা গেমটাই একমাত্র ট্রেন্ড নয়। গেম-বাজারে দাপিয়ে রাজত্ব করছে মাল্টি প্লেয়ার গেম, অনলাইন ব্যাটলফিল্ড বা রোল প্লেয়িংয়ের মতো গেম।
“আসল পরিবর্তনটা এসেছে হার্ডওয়্যারে। হার্ডওয়্যার শক্তিশালী হলে রেন্ডারিংয়ে সুবিধা হয়। তাই গ্র্যাফিক্সও করা যায় পুরো বাস্তবের মতো। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি,” বোঝাচ্ছিলেন অরিন্দম, “এখন তো ওয়েব ব্রাউজার দিয়েও খেলতে পারেন যে কোনও গেম। তাই কম্পিউটারকে তেমন হাই-এন্ডও হতে হবে না। তবে ভবিষ্যৎ কিন্তু মোবাইল।”
যখন চাই, খেলতে পাই
বেশ কয়েক বছর হল শুরু হয়েছে ট্রেন্ডটা। মোবাইল ফোন তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে নিনটেন্ডো থ্রিডিএস, প্লে-স্টেশন পোর্টেবল বা প্লে-স্টেশন ভিটার মতো হাতে ধরা ডিভাইস। সুবিধা একটাই, যেখানে চাইবেন খেলতে পারবেন।
“আগের বছর বাবাকে ঝুলোঝুলি করে একটা নিনটেন্ডো কিনেছিলাম। তার পর থেকে গেম এতেই খেলি,” বেশ গর্ব অনিন্দ্যর গলায়, “তবে হ্যাঁ, খাওয়ার টেবিলে মায়ের কাছে এ নিয়ে বেশ বকা খাই।” অনিন্দ্যর মতো গেম-পাগলদের জন্যই এখন অনেক গেম তৈরি হচ্ছে শুধু মোবাইলের জন্য।

সবে মিলে খেলি আজ
খেলাধুলো আবার একা একা জমে নাকি! একসঙ্গে জমিয়ে না খেললে আর মজা কোথায়? এই ব্যাপারটাকেই কিন্তু ক্যাশ করেছে গেম ডেভেলপাররা। ফেসবুকের মতো এসএনএসের দৌলতে তাই সোশ্যাল গেমসের চাহিদা আকাশ-ছোঁয়া। দেখুন না প্রতি মাসে ‘শেফ ভিল’ খেলা লোকের সংখ্যাই প্রায় পাঁচ কোটি।
দেবারতির ক্লান্তি তাড়ানো দাওয়াই যেমন ‘ভ্যাম্পায়ার গেমস’, “অফিসের ক্লান্তি এক মুহূর্তে উধাও।” মুচকি হেসে যোগ করলেন, “রব প্যাটকেও ভাবা যায় খেলতে খেলতে।”
“ফ্যান্টাসি ফুটবল লিগটাও হেব্বি লাগে। বেশ টিম ম্যানেজার-টিম ম্যানেজার মনে হয় নিজেকে, জিততে থাকলে তো মনে হয় আমিই রাজা,” বলছিলেন অনিমেষ। সোশ্যাল গেমসের এই এক দিক। বন্ধুদের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া যায়। স্কোরটা সবাই দেখতে পারে যে! তবে নিজের স্কোর কম থাকলে... বেশ চাপ বস্।

যেমন চালাই, তেমনি চলে
একটা সময় ছিল যখন কন্ট্রোল ডিভাইস দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হত গেমের কার্যকলাপ। নিনটেন্ডো উই সেই ব্যবস্থারই খোলনলচে বদলে দিল। এ বার থেকে শরীরের নড়াচড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ভিডিও গেম। মানে রেসিং গেমের গাড়িকে ডান দিকে বাঁকাতে চাইলে এ বার থেকে ডিভাইসটাকে ডান দিকে ঘোরালেই হবে। একদম আসল গাড়ির মতো।
এক্স-বক্স থ্রি সিক্সটি সেই ব্যবস্থাতেই দিল আর এক ধাক্কা। একটা আরজিবি ক্যামেরা, ডেপ্থ সেন্সর আর সারাউন্ড সাউন্ড মাইক্রোফোন থাকলেই হবে। এ ভাবে আপনি যদি বাঁ-দিকে তাকান, তবে মনিটরেও দেখতে পাবেন বাঁ-দিকের দৃশ্য।

আমি তো গেমেই আছি
মোশন কন্ট্রোল যতই হোক না কেন, সবই কিন্তু টু-ডি। শুধু দ্বি-মাত্রিক জগতেই আটকে থাকতে হবে গেম-পাগল জনতাকে।
সেই অভাবটা পূরণ করে দিল প্লে-স্টেশন থ্রি।
থ্রি-ডি গ্লাস পরে নিলেই আপনি গেমের ভিতর। আর বাজারে যখন দেদার বিকোচ্ছে থ্রি-ডি টিভি, তখন গেম বাজারই বা থেমে থাকে কেন? অনুভবেরও সেই মত, “বাড়িতে যখন থ্রি-ডি টিভি এসে গেছে, তখন আগের জেনারেশনের গেম কনসোল নিয়ে কী হবে?”
এতক্ষণে হয়তো ভাবছেন, এই সব মোবাইল গেম-টেম খেলা সময়ের অপচয়। তবে হাভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে চোখ বোলাতে পারেন। সেখানকার একটি লেখায় দেখা যাচ্ছে, মিনিট পাঁচ অ্যাংগ্রি বার্ডস নিয়ে মেতে থাকা সময়ের অপচয় তো নয়ই, বরং এটা আপনার শারীরিক আর মানসিক সক্রিয়তা বাড়াবে। শৌভিক আর অরিন্দমের উদাহরণ তো শুরুতেই দিয়েছি।
তাই গেম অন...

সেরা পাঁচ
অ্যাংগ্রি বার্ডস
মোবাইল থেকে কম্পিউটার সবেতেই পাবেন অ্যাংগ্রি বার্ডস। গেমে টিকে থাকতে হলে শত্রুর দুগর্র্র্ ধ্বংস করে বাঁচাতে হবে পাখির বাসা।
নিড ফর স্পিড
কম্পিউটারের এই জনপ্রিয় গেমও এখন মোবাইলে খেলতে পারবেন। এই রেসিং গেমে অন্য গাড়িকে হারিয়ে প্রথম হওয়াই একমাত্র গেম প্ল্যান।
ইউনি-ওয়ার
একা একা খেলতে পারেন বা একসঙ্গে আট জন। স্ট্র্যাটেজি হল বিপক্ষের ডেরা খুঁজে তার দখল নেওয়া।
ওয়াই-ফাই আর্মি
গেমটা একটু জটিল, তবে খুব মজাদার। চাই মোবাইল ক্যামেরা, জিপিএস আর গুগল ম্যাপ। অন্য প্লেয়ারদের খুঁজে বের করাই হল জেতার একমাত্র রাস্তা।
রবারি বব
বব এক চোর। তাকে কুকুর আর রক্ষীদের থেকে বাঁচিয়ে বের করে আনতে হবে আপনাকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.