শহরের অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কংগ্রেস, তৃণমূলের প্রবীণ নেতৃত্বের একাংশ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুললেও পুরসভার বিরোধী দল বামেরা নিশ্চুপ কেন, তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বামেরা অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস, তৃণমূল উভয়কেই দায়ী করেছেন। তবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠলেই সিপিএমের বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম তা নিয়ে মন্তব্য করতে চান না। তাই কংগ্রেস, তৃণমূলের অনেক নেতাই ‘বিস্মিত’। বিজেপি নেতৃত্বেরও সন্দেহ, বাম আমলেও এ ধরনের প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। মুখ খুললে এখন সমস্যা হতে পারে বলেই নুরুলবাবুরা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে বলতে চাইছেন না।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবৈধ নির্মাণের পিছনে ‘অদৃশ্য শক্তি’ রয়েছে বলে দাবি করেন। প্রবীণ তৃণমূল নেতা প্রতুল চক্রবর্তী, বিজেপি নেতা নন্দন দাস, সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের জেলা নেতৃত্বের অন্যতম অভিজিৎ মজুমদাররা অবৈধ নির্মাণের পিছনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এনেছেন। অথচ বিরোধীরা সরব নন কেন? প্রতুলবাবু বলেন, “বামেদের আমলে প্রচুর অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। তাই তাঁরা মুখ খুলতে পারছেন না। দুর্নীতি যখন সেখানেই হোক না কেন, আমরা সব সময়ই সরব।” বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরসভার বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে। বিজেপি’র দার্জিলিং জেলার সাধারণ সম্পাদক নন্দন দাস বলেন, “শহরে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করার ক্ষেত্রে পুরসভার বিরোধী দল বামেরা কার্যত নিশ্চুপ হয়ে রয়েছেন। হাসমিচক লাগোয়া বিধান রোডে একটি বাণিজ্যিক ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত তো বাম জমানাতেই হয়েছে। আরও তার জন্য বাসিন্দাদের দুর্ভোগ হচ্ছে। ওই নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে সমস্যা আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রেও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল বলে আমাদের সন্দেহ।” পুরসভার বিরোধী দলনেতার আর্থিক লেনদেনের প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমাদের বিরোধী দলনেতা ঠিক কী বলেছেন তা খোঁজ নেব। তবে অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন তো হচ্ছেই। সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এই পুর কর্তৃপক্ষ।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, অথচ বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম সরাসরি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলতে চাননি। তিনি বলেন, “সে ভাবে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। পুরসভায় যারা ক্ষমতাসীন সেই কংগ্রেস, তৃণমূল জোট উভয়পক্ষই এর জন্য দায়ী।” বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহা সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন, সেবক রোডের একটি অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে ফোন করে মন্ত্রী পুর কমিশনারকে বলছেন। অথচ অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে যে সব বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে সেখানে মন্ত্রী ফোন করে ভাঙার নির্দেশ দিচ্ছেন না কেন? নুরুলবাবুর অভিযোগ, মন্ত্রী গৌতমবাবু একাধিকবার প্রকাশ্যে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ তুলছেন। তা বন্ধ করতে না পারলে মেয়র কেন পদে বসে রয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন?
বিরোধী দলনেতা বলেন, “আমরা আগামী ৫ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করব। তার পর লাগাতার আন্দোলনে নামব।” নভেম্বর মাসে বোর্ড মিটিংয়ে রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা সত্ত্বেও অন্তত ৬ টি বিল্ডিং প্ল্যান পাস করানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেস তৃণমূলের মেয়র পারিষদরাই দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, শহরে অন্তত ২৫০ টি অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। তা থেকে বেছে ২৬ টি অবৈধ বাণিজ্যিক নির্মাণের তালিকা তৈরি করে তা বাঙতে ্ভিযান শুরু হলেও তা বন্ধ ১ দিন পরেই বদ্ধ হয়ে যায়। নকশা ছাড়াই ১১ টি নির্মাণকাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুরসভার আইনি পরামর্শদাতারা মত দিলেও সেই কাজ বন্ধ রয়েছে। তা নিয়েও কংগ্রেস তৃণমূলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। |