তিস্তা সেচ প্রকল্পে চলতি বছরেও সেচের আওতা ভুক্ত এলাকা বাড়ছে না। জলপাইগুড়ি জেলার চাষিরা শীতকালীন বোরো চাষের জন্যে শুধুমাত্র তিস্তা সেচ প্রকল্পের ভরসায় থাকেন। এ বছরও তাদের জন্যে বড় কোনও সুখবর দিতে পারছে না সেচ দফতর। গত বছর জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর এলাকাকে সেচের আওতা ভুক্ত করা হয়েছিল। এ বছরেও সেই একই লক্ষ্য মাত্রা রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই মাঝখানের এক বছরে কী কাজ হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কাজের গতি বাড়াবার স্বার্থে ‘ই-টেন্ডার’ প্রথা চালু হলেও তাতেও কেন একই অবস্থা হবে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, আগামী ৫ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছে সেচ দফতর। সেখানে কবে থেকে ক্যানালে জল ছাড়া হবে তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। |
সেচ দফতরের দাবি, জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি আধিকারিক সহ এলাকার বিধায়ক ও অন্য জনপ্রতিনিধিদেরও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই চাষের জমিতে জল দেওয়া হবে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। তবে যে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে জল দেওয়া হবে সেখানেও ঠিক ভাবে জল মিলবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহে রয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএম নেতা ফলিন রায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত চেংমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাতিনি অভিযোগ করে বললেন , “ক্যানালের যে অংশের কাজ সম্পূর্ণ বলে চালানো হচ্ছে সেখানে আদৌ কাজ শেষ হয়নি। ফিল্ড চ্যানেল গুলি ভেঙে পড়েছে। গত এক বছর কোন সংস্কারও হয় নি। এই পরিস্থিতিতে ক্যানাল দিয়ে জল ছাড়া হলে তা চাষির খেত অবধি পৌঁছবে না।” আসন্ন বৈঠকে উপস্থিত থেকে এই বিষয়গুলি সেচকর্তাদের জানাবেন বলেও ফলিনবাবু জানান। মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা আরএসপি নেতা মহাদেব রায় অভিযোগ করে বলেন, “গত বছর মৌলানি এলাকায় একবিন্দু সেচের জলও মেলেনি। এ বছরও কোন উদ্যোগ না থাকায় জল পাওয়া যাবে না।”
এই অবস্থায় বোরো ধান চাষ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দিলওয়ার হোসেন জানালেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পের ওপর ভরসা হারিয়ে তাঁরা পুকুর থেকে পাম্প সেট দিয়ে জল তুলে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শাখা ক্যানাল দিয়ে জল ছাড়লেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। সেই জল খেত অবধি পৌঁছয় না বলেই নিজেদের বিকল্প ভাবনা ভাবতে হয়েছে বলে জানান তিনি। জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যার জন্যেই কাজে গতি আসছে না বলে জানান তিস্তা সেচ প্রকল্পের সুপারিনটেনডেন্ট বাস্তুকার গৌতম দাস। তিনি বলেন, “শাখা ক্যানাল তৈরিতে যে জমি প্রয়োজন তা মিলছে না। সেই কারণে সমস্যা হচ্ছে।”
|
তিস্তা সেচ প্রকল্প একনজরে |
• মোট প্রস্তাবিত সেচের আওতাভুক্ত এলাকা: ৩ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টর |
• কাজ হয়েছে ৪২ হাজার হেক্টর এলাকায় |
|
• ডান হাতি বা তিস্তা মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানালে সেচের প্রস্তাবিত আওতাভুক্ত এলাকা
২ লক্ষ ৯৪ হাজার হেক্টর এলাকা। সম্পূর্ণ হয়েছে মাত্র ৩২ হাজার হেক্টর এলাকা। |
• বাঁ হাতি ক্যানাল এর প্রস্তাবিত এলাকা ৪৮ হাজার হেক্টর। সম্পূর্ণ হয়েছে
১০ হাজার হেক্টর। বাঁ হাতি মূল ক্যানালের দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। শাখা ক্যানালের
দৈর্ঘ্য ৮০ কিমি। প্রস্তাবিত শাখা ক্যানাল ৭টি, সম্পূর্ণ হয়েছে ৪টি। |
|
|