ওঁদের কেউ ছবি আঁকেন। কেউ করেন মূকাভিনয়। কেউ শিক্ষকতা করেন। কেউ আবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অন্যদের দিকে। ওঁদের মিল একটা জায়গায়। ওঁরা সকলেই এক নৌকার যাত্রী। আসলে কোনও না কোনও ভাবে ওঁরা প্রতিবন্ধকতার শিকার। সেই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই ওঁদের রোজকার লড়াই। নিজের জন্য। অন্যদের জন্যও।
এমনই এক ব্যক্তিত্ব প্রতীশ দত্ত। সোমবার, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে রাজ্যের নারী বিকাশ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র যখন প্রতীশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে পুরস্কার দিলেন, হাততালিতে ফেটে পড়ল সভাঘর। দৃষ্টিহীন প্রতীশ খড়্গপুর আইআইটি-তে পড়ছেন। সুশান্ত দাস সেলিব্রাল পালসি বা আংশিক পক্ষাঘাতের শিকার। ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি লোকগান করেন। |
শৈশবে দু’চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়া মৌশ্রী বশিষ্ঠ প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আইন কলেজে শিক্ষকতা করছেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানালেন, বাবা-মা পাশে না-দাঁড়ালে এমন ভাবে উঠে আসা সম্ভব হত না। হরিপদ রায় নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করার ব্রত নিয়েছেন। এ দিন এমন অনেকেই ছিলেন পুরস্কৃতদের তালিকায়। প্রতিবন্ধী না-হলেও
তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন গার্গী গুপ্ত। সম্মান জানানো হল এমন অনেক ব্যক্তিত্বকেও।
রাজ্যের প্রতিবন্ধী কমিশনার মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই শহরে অন্য এক অনুষ্ঠানে জানান, মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য রাজারহাট ও মালদহে দু’টি সরকারি হোম চালু হচ্ছে। অস্থি প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘মেডিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে মিতাদেবী বলেন, “অটিস্টিক শিশু ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের হোম তৈরির প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল একটি সংস্থা। আমরা তাদের জমি দিচ্ছি রাজারহাটে। কেউ বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এলে অবশ্যই সাহায্য করা হবে।” এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের বহু পুরনো দাবি আবার উঠল। বিশেষ করে অস্থি প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে রাজ্যে কোনও সরকারি হাসপাতাল না-থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চিকিৎসক তথা সংগঠনের প্রধান মৌলিমাধব ঘটক। সরকারি প্রক্রিয়ায় যে ত্রুটি আছে, তা স্বীকার করে নিয়েও মিতাদেবী জানান, প্রতিবন্ধী এবং তাঁদের পরিবারের তরফেও অনেক সময় মানসিকতা ও চেষ্টায় ফাঁক থেকে যায়। যেমন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও যে প্রাথমিক ভাবে শিশুর প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা যায়, অধিকাংশ মানুষ এই ব্যাপারে সচেতন নন। মিতাদেবী বলেন, “ভাতা পাওয়ার জন্য প্রতিবন্ধীদের তাগিদ যতটা, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ততটা নয়। কোন দফতর থেকে কী সুবিধা পাওয়া যায়, সেই ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হয় না। ফলে সরকারি গড়িমসি আরও বেড়ে যায়।” |