তদন্তের অধিকার নেই নিধিরাম থানার
টাও একটা থানা। সরকারি অফিসার ও কর্মীদের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করার থানা। কিন্তু সেই অভিযোগ পেলে নিজে থেকে তদন্ত শুরু করার কোনও অধিকারই নেই তার।
তা হলে সেই থানা কী করবে?
তার কাজ শুধু অভিযোগ পেয়ে মহাকরণে পাঠিয়ে দেওয়া। মহাকরণের অনুমতি মিললে তবেই তদন্ত শুরু করতে পারবেন ওই থানার তদন্তকারী অফিসার। সাধারণত থানায় অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু করে দেন ভারপ্রাপ্ত অফিসারেরা। মহাকরণ কেন, থানার অফিসার ইনচার্জের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন হয় না।
তা হলে এ কেমন থানা, যাদের নিজে থেকে তদন্ত শুরু করার কোনও অধিকারই নেই?
এই থানা দুর্নীতি দমন শাখার অধীনে, যে শাখা সম্প্রতি তৈরি করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কেউ দুর্নীতি দমন শাখায় অভিযোগ জানাতে এলে তা নেওয়ার দায়িত্ব ওই থানার।
কিন্তু তদন্ত? দুর্নীতি দমন শাখার এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করার অধিকার আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা ওই অভিযোগ পাঠাব মহাকরণে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললে তবেই তদন্ত শুরু হবে।” অর্থাৎ, অভিযোগের গুরুত্বই একমাত্র মাপকাঠি নয়, সরকারের ইচ্ছে-অনিচ্ছেই কার্যত অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে করছেন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ।
ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারি দফতরে দুর্নীতি ঠেকাতে এই শাখা তৈরির ঘোষণা করা হলেও আসলে তা প্রশাসনের তথা শাসক দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করা করা হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, দুর্নীতি দমন শাখা মূলত চলবে রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের অধীনে। কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক দফতর যেগুলির দায়িত্ব দেবে, শুধুমাত্র সেই সব মামলার প্রাথমিক তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন শাখা। সেই তদন্তের রিপোর্ট ফের জানাতে হবে কর্মিবর্গ দফতরকে। কর্মিবর্গ দফতর এর পর অভিযুক্ত কর্মী বা অফিসারের দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত তদন্ত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সেই মতো দুর্নীতি দমন শাখা পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।
আম-জনতার অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি অফিসার বা কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা যাবে, এই ভাবনা থেকে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন শাখায় একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই অফিসার সমীররঞ্জন মজুমদার প্রশিক্ষণ দেন শাখার বর্তমান প্রধান ডিআইজি কে জয়রামন, এসপি ধ্রুবজ্যোতি দে ও অন্য অফিসারদের। দুর্নীতিগ্রস্ত কোনও অফিসারকে ফাঁদে ফেলে সিবিআইয়ের মতো কী ভাবে হাতেনাতে ধরা যায়, সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অফিসারেরা।
কিন্তু শাখার ক্ষমতা ও কাজের পরিধি নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তির পর ওই প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর সুযোগ কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন এখন শাখার কর্তাদের মনেই।
পুলিশকর্তাদের একাংশ মনে করছে, দুর্নীতি দমনের নামে অনেক সময়েই সরকারি অফিসারদের অযথা হয়রানির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে এবং সে জন্যই দুর্নীতি দমন শাখার রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছে সরকার। অবশ্য রাজ্যের একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তার দাবি, যে উদ্দেশ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন শাখা তৈরি, সেটাই এই নির্দেশের ফলে সফল হবে না। রাজ্যের এক পুলিশকর্তার কথায়, “রাজস্থান, ওড়িশা, বিহারের মতো কয়েকটি রাজ্যের ভিজিল্যান্স বিভাগকে বেশি ক্ষমতা দিয়ে দুর্নীতি দমনে সফল ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।”
বিহারে ভিজিল্যান্স ব্যুরোরও থানা রয়েছে। সেই থানা ইচ্ছে করলে যে কোনও সরকারি অফিসারের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারে। এবং সরকারের অনুমতি ছাড়াই। এমনকী, দুর্নীতির অভিযোগের বিচারের জন্য বিহারে পৃথক চারটি বিশেষ আদালতও রয়েছে। একই ভাবে দুর্নীতি দমন শাখা শক্তিশালী তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও। কর্নাটকে আবার দুর্নীতি দমনকে আনা হয়েছে লোকায়ুক্তের অধীনে। ওই আইনের আওতা থেকে বাদ পড়েননি খোদ মুখ্যমন্ত্রীও।
এ রাজ্যে ভিজিল্যান্স কমিশনও এই একই কাজ করে। তাদেরও নিজস্ব দুর্নীতি দমন ব্যুরো আছে। তা হলে কেন দরকার পড়ল নতুন দুর্নীতি দমন শাখা তৈরির?
পুলিশকর্তাদের মতে, “ভিজিল্যান্স কমিশন স্বায়ত্তশাসিত হওয়ার ফলে তার উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক ভাবে কম। সরকার যেমন কমিশনের সুপারিশ না-ও মানতে পারে, তেমন তারাও সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়।” কিন্তু কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের অধীনে যে দুর্নীতি দমন শাখা কাজ করবে, তাদের সেই স্বাধীন ভাবে কাজের সুযোগ থাকছে না বলেই অভিমত তাঁদের। মাস দুয়েক হল দুর্নীতি দমন শাখা কাজ শুরু করেছে নব-মহাকরণের ন’তলায়। ওই শাখায় কর্মরত এক অফিসারের কথায়, “কাজ শুরু করার মাসখানেকের মধ্যেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে। ওই অভিযোগগুলি নিয়ে আমরা চাইলেও তদন্ত করতে পারছি না।” মাসিক রিপোর্টে ওই সব অভিযোগের কথা জানিয়ে আপাতত সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে দুর্নীতি দমন শাখা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.