পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেমেছে সিপিএম! রাজ্যের মানুষের মন পরিবর্তনের লড়াই!
টাটার কারখানার জন্য জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলেই ভাল হত, এখন উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন সিঙ্গুরের তথাকথিত ‘অনিচ্ছুক’ পরিবারগুলির একাংশ। বিশেষত সিঙ্গুরের হালফিল সরেজমিন সমীক্ষায় ধরা পড়ছে, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছেন টাটার প্রকল্প গড়ে উঠলে সকলেরই উপকার হত। জমি দিতে নাছোড় হয়ে আন্দোলন আখেরে নবীন প্রজন্মের ক্ষতিই করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই উপলব্ধির উপরে ভিত্তি করেই দলের ছাত্র-যুব এবং কৃষক সংগঠনকে শিল্পের দাবিতে নতুন উদ্যমে ময়দানে নামাচ্ছে সিপিএম। বিশেষ করে, যুবদের বলা হচ্ছে, কর্মসংস্থানের প্রশ্নে সিঙ্গুরের উদাহরণকে সামনে রেখে আরও বেশি করে সক্রিয় হতে।
বস্তুত, সিঙ্গুরের জিতেন ঘোষ, চন্দনা ঘোষদের আফশোস যত বাড়ছে, ভিতরে ভিতরে আক্ষেপ বাড়ছে নিরুপম সেনের মতো নেতাদের। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম করতে গিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপমবাবুদের জন্যই বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিল, এমন প্রচার সিপিএমের ভিতরে-বাইরে এই সে দিন পর্যন্ত ভাল রকম শক্তিশালী ছিল।
সিঙ্গুরের মানুষের এখনকার মনোভাবের খবর পেয়ে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপমবাবু বলছেন, “উন্নয়নের কাজ করে ভোটে হারতে হয়েছে, এই রকম উদাহরণ ইতিহাসে অনেক আছে। কিন্তু সিঙ্গুরে প্রকল্পটাই আটকে দেওয়া হল! আজ সিঙ্গুরের মানুষ বুঝছেন। এক দিন নন্দীগ্রামের মানুষও বুঝবেন, শিল্প হলে তাঁদের ভালই হত!” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপমবাবুর আরও সংযোজন, “ক্ষতি যা হয়েছে, অপূরণীয়। তবু সিঙ্গুর থেকে একটাই আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন। ওই রকম ভুলের পুনরাবৃত্তি আর যাতে না-হয়, রাজ্যের স্বার্থেই তার জন্য সব রাজনৈতিক দলের সক্রিয় হওয়া উচিত।”
বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, হলদিয়ার মতো সিঙ্গুরকেও হাতিয়ার করে দলের ছাত্র-যুব সংগঠনকে মানুষের কাছে যেতে বলা হবে।
এখন সিঙ্গুরবাসীর মন পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলায় নিরুপমবাবুরা মনে করছেন, শিল্পের প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝাতেই হবে। প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীর কথায়, “শুধু সরকারের মনোভাব নয়। মানুষের মনোভাবের উপরেও বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। গুজরাতের মানুষ যদি সানন্দে শিল্পকে স্বাগত জানান আর এই রাজ্যের মানুষ বাধা দেন, তা হলে সরকার যা-ই বলুক, কে বিনিয়োগ করতে চাইবে?”
সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের সময় স্থানীয় মানুষের সময় আগাম আলোচনা না-হওয়ায় জ্যোতি বসু মন্তব্য করেছিলেন, কৃষক সভা কি ঘুমোচ্ছিল?
এখন সিপিএমের কৃষক সভা আগেভাগেই সক্রিয় হচ্ছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষের বক্তব্য, “আমাদের একেবারে ব্লক থেকে জেলা পর্যন্ত সর্ব স্তরের সম্মেলনে আলোচনা হচ্ছে, শিল্প ছাড়া গতি নেই। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিকে রক্ষা করা, কৃষির বিকাশ নিশ্চয়ই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু তা-ই বলে শিল্প বন্ধ করে দেওয়া যায় না! এটা আমাদের সংগঠনে অবশ্যই অন্যতম আলোচ্য।” প্রসঙ্গত, কৃষক সভার হুগলি জেলা সম্মেলন এ বার হবে পোলবায়। সেখানেও পর্যালোচনা হবে সিঙ্গুরের অভিজ্ঞতা।
ডিওয়াইএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পের দাবি তাঁদের কর্মসূচির মুখ্য বিষয়। এর পরে তা আরও বড় আকার নেবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখ চেয়েই শিল্পের উদ্যোগের পথ মসৃণ হবে, প্রতীক্ষায় আছে বিশাল বাগ, রোহিত বাগের মতো আজকের প্রজন্মের সিঙ্গুরের ছাত্ররাও।
কিন্তু শিল্পের হয়ে এই সওয়ালে কি সিঙ্গুরের পঞ্চায়েত ভোটে বরাত খুলবে সিপিএমের?
ভাবিত নন নিরুপমবাবু। তাঁর মতে, “ভোট হয় ভোটের অঙ্কে। কিন্তু মানুষের মনোভাব বদলাতে না-পারলে ভবিষ্যতে যে দলই রাজ্যে ক্ষমতায় আসুক, কিছু করতে পারবে না।” |