একের পর এক ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে এ বার দলের নেতা-বিধায়কদের মুখে লাগাম পরানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, শিখা মিত্র, শিউলি সাহাকে নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে দলের অন্দরের দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। অস্বস্তি এড়াতে সোমবার বিকালে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দলের তরফে একটি এসএমএস-বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, এ বার থেকে তাঁরা কেউ যেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কাছে মুখ না খোলেন। সংবাদমাধ্যমে একান্তই কিছু বলার থাকলে দলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলায় দুই বিধায়ক শিখা মিত্র ও শিউলি সাহাকে শো-কজ করা হতে পারে বলেও দলের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে। |
তৃণমূলের বিধায়কদের অনেকেই এ দিনের এসএমএস পেয়ে বিস্মিত। কেউ কেউ এমন এসএমএসের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। দলের এক প্রবীণ বিধায়ক যেমন বলেছেন, “শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটাও কি এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে?” আবার দলীয় এক পদাধিকারীর কথায়, “এ বার দেখব এসএমএসেই আমাকে পদচ্যুত করা হবে! আমি যাতে আত্মপক্ষ সমর্থন না করতে পারি!” এক তরুণ তৃণমূল বিধায়কের কথায়, “আমার এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলেও কি পার্টিকে জিজ্ঞাসা করে মুখ খুলতে হবে? তাৎক্ষণিক কিছু বলা যাবে না?” আর যাঁর আগাম নির্দেশ ছাড়া সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না বলে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, সেই পার্থবাবু এ দিন মহাকরণে বলেন, “দলকে রক্ষা করা উচিত আমাদের সকলের। দল না-থাকলে কী করে আমরা থাকব? ছোট-বড়-মাঝারি
সব নেতারই দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলা উচিত।”
তৃণমূল নেতৃত্ব যতই রাশ টানার চেষ্টা করুন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভনদেববাবুর নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় দলীয় কর্মী মহলের একাংশ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ভিতরে ও বাইরে মিছিল করে শোভনদেববাবুর নেতৃত্বাধীন ‘অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’। কলকাতা ছাড়াও বর্ধমান-সহ রাজ্যের আরও চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বলে সংগঠনের সভাপতি সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। মিছিলে শোভনদেববাবু অবশ্য ছিলেন না। দলের নির্দেশ মেনে তিনি এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যও করেননি। সংগঠন সূত্রের দাবি, শোভনদেববাবুর নির্দেশ ছিল, কোনও ব্যানার বা পতাকা নিয়ে মিছিল করা চলবে না। সেই নির্দেশ পালন করা হয়েছে।
মিছিলকারীরা পরে শোভনদেববাবু নিগ্রহে মূল অভিযুক্তের বরখাস্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিতে উপাচার্যের কাছে একটি দাবিপত্র জমা দেন। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মন্মথরঞ্জন বিশ্বাসকে নাগালে পেয়েও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এ দিনও শোভনদেববাবুর অনুগামীদের মিছিলের অদূরেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় মন্মথবাবুকে। সমীরবাবু বলেন, “মূল অভিযুক্ত মন্মথ বিশ্বাস প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর!” মন্মথবাবুর অবশ্য দাবি, শোভনদেববাবুকে মারধরের সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেনই না। তাঁর বক্তব্য, “শোভনদেববাবু পিতৃস্থানীয়। ওঁকে হেনস্থার অভিযোগ মিথ্যা।”
ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তা ও উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক সচিবকে নিয়ে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ওই দুই কর্তার অনুমতি চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁদের সম্মতি না-মেলায় এ দিন তদন্ত কমিটি গড়া যায়নি। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়ায় অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। শীঘ্রই কমিটি গড়া হবে।” পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।
|