সঙ্কটকালে খয়রাতি মুখ্যমন্ত্রীর
ফেল করলেও দু’বার ফি না দিয়েই স্কুল সার্ভিস
দিন কয়েক আগেই কলকাতার মিলনমেলায় এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের আর্থিক হাল নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে আমরা এখন শূন্য।” আর সোমবার পুরুলিয়ার হুটমুড়ার জনসভায় তিনিই ঘোষণা করলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের আরও দু’বার পরীক্ষায় বসার ফি দিতে হবে না!
স্কুল সার্ভিস কমিশনে শুধু কর্মীদের বেতন আসে সরকারি তহবিল থেকে। এ ছাড়া পরীক্ষার আয়োজন থেকে শুরু করে কমিশনের সারা বছরের যাবতীয় খরচ চলে পরীক্ষার্থীদের ফি’র টাকাতেই। এ বার স্কুল সার্ভিস কমিশন মারফত প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগ হচ্ছে। পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ৬ লক্ষ ৩১ হাজার। প্রথম পর্বের পরীক্ষায়, অর্থাৎ টেট-এ অকৃতকার্যের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামতো আগামী বছর পরীক্ষায় বসলে তাঁদের ফি দিতে হবে না। কিন্তু টেট-এ সফল হয়েও সকলে সাফল্যের দরজায় পৌঁছবেন না। বিষয়ের পরীক্ষার ফল ভাল হতে হবে, তার পরে আবার ইন্টারভিউয়ে সফল হতে হবে। অর্থাৎ, ৫০ হাজার শূন্য পদে যাঁরা নিযুক্ত হবেন, তাঁদের বাদ দিয়ে বাকি সকলে অকৃতকার্য হিসেবেই বিবেচিত হবেন। তার মানে, আদতে অকৃতকার্যের সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৫ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি। এঁরাও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সুফল পেতে পারেন।
২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার জন্য সাধারণ প্রার্থীদের থেকে ৩৩০ টাকা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য সংরক্ষিত পদে প্রার্থীপিছু ১৩০ টাকা ফি নেওয়া হতো। রাজ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে কমিশন ফি কমিয়ে সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ২৫০ টাকা এবং সংরক্ষিত পদের জন্য ৮০ টাকা ধার্য করে। ২০১০-এ প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ফি বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা মিলেছিল। ২০১২-য় আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ বেড়ে গেলেও আয় কমেছে। এ বার কমিশনের প্রাপ্তি ১৪ কোটি টাকা।
পুরুলিয়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার।
প্রশ্ন উঠেছে, এখন অকৃতকার্যেরা বিনা ফি’তে পরীক্ষায় বসলে কমিশনের চলবে কী করে?
হিসেব বলছে, এ বারে যাঁরা চাকরি পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের সকলেই আগামী বছরের পরীক্ষায় নিখরচায় বসলে কমিশন সাড়ে ১১ কোটি টাকারও বেশি আয় হারাবে। প্রার্থীদের ৩০% আবেদন করেন সংরক্ষিত পদে। তাঁদের আবেদনের খরচ কম। সেই অঙ্ক মাথায় রাখলেও আগামী বারে কমিশনের প্রাপ্তি এতটাই কমে যাওয়ার আশঙ্কা। আর তাঁরা পর পর দু’বার নিখরচায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলে ক্ষতির পরিমাণটা অঙ্কের নিয়মেই প্রায় দ্বিগুণ দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কমিশন সূত্রের খবর: ৫ লক্ষ প্রার্থীর পরীক্ষা নিতে গড়ে সাত কোটি টাকা খরচ হয়। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচ। ওই টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়?
কমিশন সূত্রের তথ্য: স্পিড পোস্টে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কাডর্র্ পাঠানো থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষাকেন্দ্রের খরচ, পরীক্ষায় নজরদারির (ইনভিজিলেশন) ফি, পরীক্ষক ও পরীক্ষা-প্রক্রিয়ায় যুক্ত সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য মেটানো, বিজ্ঞাপন, প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র ছাপা, ইন্টারভিউ আয়োজন, এবং পাশাপাশি কমিশনের ইলেকট্রিক বিল, কম্পিউটার-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ সব খরচই চলে পরীক্ষার্থীদের ফি-এর টাকায়।
প্রশ্ন, অকৃতকার্য বলতে মমতা কাদের বুঝিয়েছেন? যাঁরা শিক্ষক পদে পরীক্ষা দিয়ে সফল হতে পারলেন না, শুধু কি তাঁরাই? শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি কমিশন তো শিক্ষাকর্মীও নিয়োগ করে। সেখানেও প্রার্থীর সংখ্যা শূন্য পদের তুলনায় অনেক বেশি। সেই প্রার্থীরাও কি তবে পরের পরীক্ষায় নিখরচায় বসতে পারবেন?
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় এটা স্পষ্ট নয়। যেমন স্পষ্ট নয়, শুধু এসএসসি-র পরীক্ষায় অকৃতকার্যদেরই এই সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করা হল কেন। প্রশ্ন থাকছে, প্রাথমিক শিক্ষকের পদে পরীক্ষা দিয়েও সফল হতে পারেননি, এমন লক্ষ লক্ষ প্রার্থী এই সুবিধা পাবেন না কেন? কেনই বা বাদ পড়বেন বিভিন্ন সরকারি দফতরে করণিকের পরীক্ষায় অকৃতকার্যরা?
পুরুলিয়ার হুটমুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় উপচে পড়া ভিড়।
কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন, ফি মকুব করেও পরীক্ষা নিতে তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। সূত্রের খবর: আপাতত কমিশনের ভাঁড়ারে ৭০ কোটি টাকার মতো মজুত রয়েছে। তা থেকেই পরীক্ষার খরচ চালানো যাবে বলে রাজ্য সরকার আশা করছে। কিন্তু এই আর্থিক সঙ্কটকালে কেন কমিশন তা করবে, তার সদুত্তর মেলেনি।
এসএসসি-র ফি মকুবের পাশাপাশি মমতা এ দিন প্রাথমিক শিক্ষক পদে পার্শ্বশিক্ষক এবং পিটিটিআই-প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য ১০% করে আসন সংরক্ষণেরও ঘোষণা করেছেন। এ দিকে প্রাথমিক শিক্ষকতার পরীক্ষার ফর্ম বিলি শেষ হয়ে গিয়েছে ৩০ নভেম্বর। স্কুল-শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরাই বলছেন, এখন মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন ঘোষণা জটিলতা বাড়াতে পারে। পুরুলিয়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের অসফল পরীক্ষার্থীদের ফি মকুবের বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাবেন। ব্রাত্যবাবু অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হওয়ার পরে যা বলার বলব।”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.