পুরুলিয়ার সিধো-কানহু-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ নিয়ে ঢিলেমির অভিযোগ শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শমিতা মান্নার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। প্রশাসন সূত্রের খবর, শমিতাদেবী মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কাজ আশানুরূপ গতিতে হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী তার কারণ জানতে চান। ভবন তৈরির দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের সমালোচনাও তিনি করেন। জানতে চান পূর্ত দফতরের প্রতিনিধি কে রয়েছেন। তাঁকে জানানো হয়, ওই দফতরে সম্প্রতি নতুন আধিকারিক যোগ দিয়েছেন। আগে যিনি ওই পদে ছিলেন, তিনি কোথায় বদলি হয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তা জানতে চান। এরপর তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। হাঁফ ছাড়েন আধিকারিকেরাও। প্রায় এক বছর আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করে যান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পরে শমিতাদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করিনি। জুলাই মাসের শেষে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু যে ভাবে কাজে অগ্রগতি হওয়ার কথা তা হয়নি। সেই কথাই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।”
|
চারপাশে রাজ্য থেকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক। রয়েছেন বিডিও-রাও। দলের বিধায়করাও রয়েছেন। সেই ‘ভরা হাটে’ মুখ্যমন্ত্রী জেলার মন্ত্রীকে তাঁরই দফতরের কাজ নিয়ে কড়া কথা শোনালেন। সোমবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে মুখ্যমন্ত্রী জেলার আধিকারিকদের কাছে খোঁজ করতে গিয়ে শোনেন, এখনও ৫৩৩১টি কেন্দ্র থাকলেও অনেকগুলির নিজস্ব ঘর নেই। মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য যা যা করণীয়, তা করতে হবে। জানতে চান, আটকাচ্ছে কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই বসে ছিলেন শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় জানতে চান, জেলার মন্ত্রী হয়েও ওই সমস্যার কথা তাঁকে আগে কেন জানানো হয়নি? সমস্ত বিষয় খোঁজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে শ্যামবাবুর জানানো আপনার দরকার ছিল বলে মনে করিয়ে দেন। শ্যামবাবু অবশ্য পরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ওই ব্যাপারে আরও নজর দিতে বলেছেন। অবশ্যই দেখতে হবে।”
|
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী দম্পতির ছেলেকে ভাল স্কুলে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার পুরুলিয়া সফরে গিয়ে সাত সকালে তিনি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের অতিথি নিবাসে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেত্রী জাগরি বাস্কে ও তাঁর স্বামী রাজারাম সোরেনকে ডেকে পাঠান। সঙ্গে ছিল তাঁদের বছর পাঁচেকের শিশুপুত্র বাহাদুরও। বর্তমানে তাঁরা পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ট্রানজিট ক্যাম্পে রয়েছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ছোট্ট বাহাদুরের লেখাপড়া নিয়ে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মাথায় হাত বোলান। তার পর আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাহাদুর একটু বড় হলে তাকে পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করার চেষ্টা করতে হবে। ট্রানজিট ক্যাম্পে তাঁরাকেমন রয়েছেন, জাগরীর কাছে তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না, তা নিয়েও খোঁজ নেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কোনও সমস্যা হলে, অন্য কাউকে না জানিয়ে তাঁদের সরাসরি প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মুখ্যমন্ত্রী জানান। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ওঁদের সৌজন্য সাক্ষাৎকার ছিল।” পরে জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “জাগরীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানেই সাড়া দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন। তাই তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তিনি জানতে চেয়েছিলেন।”
|
এ যাত্রা পুরুলিয়ার জন্য |
• আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ তিনটি (পাড়া, মানবাজার ২, পুরুলিয়া ১) ব্লকে কলেজ নির্মাণ।
• লাক্ষা গবেষনাগার নির্মাণ।
• রঘুনাথপুরে পলেটেকনিক কলেজ।
• জেলার ২০টি ব্লকে যাত্রী নিবাস নির্মাণ।
• বান্দোয়ান, কাশীপুর, বরাবাজার, জয়পুর--এই চারটি ব্লকে আইটিআই কলেজ।
• কাশীপুর ব্লকে তিনটি গার্লস হাইস্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা।
• চাষে যাঁরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাঁদের নিখরচায় বিদ্যুৎ সংযোগ।
• ২০টি ব্লকেই কিষাণ বাজার নির্মাণ।
|
|
• দার্জিলিঙের আদলে হোম ট্যুরিজম।
• পুরুলিয়ার হোমিওপ্যাথিক কলেজকে অধিগ্রহন করে পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা।
• জেলার পর্যটন শিল্পের সার্বিক বিকাশ।
• রঘুনাথপুরকে ঘিরে শিল্প গঠনের পরিকল্পানা।
• আদ্রা তদন্ত কেন্দ্রকে থানা করা হবে।
• রঘুনাথপুরে মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল।
• আদ্রায় রেলের জমিতে বাসবাস করা ১১ হাজার বাসিন্দাকে নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে বাসস্থান নির্মাণের উদ্যোগ।
• ঝাড়গ্রাম থেকে বিষ্ণপুর ও জয়চণ্ডী পাহাড় হয়ে অযোধ্যা পাহাড় পর্যন্ত ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার পরিকল্পনা।
• ৫০০ কিমি নতুন রাস্তা নির্মাণ।
• বাগমুণ্ডিতে ইকো ট্যুরিজম হাব। |
|
ব্রাত্য যাঁরা |
প্রথমে যেতে বলা হলেও শুক্রবার জেলাশাসকের দফতর থেকে ফোন করে বৈঠকে আসতে মানা করা হয়।
|
উপেন কিস্কু, সিপিএম বিধায়ক |
|
|
মুখ্যমন্ত্রী যদি মনে করেন এলাকার বিধায়কদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব, উনি তাই করুন। আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়ানোই রয়েছে! |
নেপাল মাহাতো, কংগ্রেস বিধায়ক |
|
|