কাজ দিয়েছিলেন আগেই। এক বছর পর তা খতিয়ে দেখতে এসে কখনও ধমক দিলেন, কখনও বা পরিবেশ হাল্কা করার জন্য টেনশন করতে মানা করলেন। প্রশংসাও পেলেন কেউ কেউ। চুম্বকে এই হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোমবার পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকের ছবি।
মূলত ১০০ দিনের কাজ ও নিজ গৃহে নিজ ভূমি প্রকল্পের উপর মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। সকালে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকের গোড়াতেই ১০০ দিনের কাজের হাল-হকিকত জানতে চান। এখন জেলায় ১০০ দিনের কাজের গড় ৩৩ দিন রয়েছে জেনে তিনি সাফ জানিয়ে দেন কাজের গতি বাড়াতে হবে। বাঁকুড়াতে গড়ে ৩৪ দিন কাজ দেওয়া গেলেও ওই জেলার সিমলাপাল, রাইপুর, সোনামুখী ও পাত্রসায়র ব্লকে ১০০ দিনের প্রকল্পে ২০ দিনেরও কম কাজ দেওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া রিপোর্টে এই তথ্য দেখে মুখ্যমন্ত্রী রেগে যান। আধিকারিকদের তিনি নির্দেশ দেন, চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে ৫০ দিনের বেশি কাজ দিতেই হবে। তিনি জানতে চান, মানুষ কি এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না? যে ভাবেই হোক লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি বিডিওদের কম বয়েস বলে কাজে উৎসাহ দেন। তাঁদের উপরভরসা রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। ওই চারটি ব্লক কেন পিছিয়ে তা দেখতে নির্দেশ দেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়ায় আসার পথে দুই জেলার সীমানায় একটি গ্রামে গাড়ি থেকে নেমে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন। তিনি জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন কি না মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন কাজ পাচ্ছেন না। |
‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়ার বিডিওদের কাছে জানতে চান, কতগুলি পরিবারকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এই জেলায় ল্যান্ডব্যাঙ্ক অনুযায়ী প্রচুর খাস জমি রয়েছে। কেন মানুষগুলোকে মাথা গোঁজার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না, তাঁদের জন্য ৩ কাঠা করে জায়গা কেন দেওয়া যাচ্ছে না, আধিকারিকদের কাছে তা-ও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় উঠে আসে কয়েকটি ব্লক ছাড়া কোনও জায়গাতেই মানুষের হাতে ওই প্রকল্পে জমির পাট্টা দেওয়া যায়নি। শুধু জায়গা চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। তিনি খাতড়ার বিডিও-র কাছে জানতে চান, কত জনকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। ২৩ জনের জন্য জায়গা চিহ্নিত হলেও কেউ যেতে চাইছেন না শুনে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, কেন যেতে চাইছেন না ওঁরা তা দেখতে হবে। জায়গাটি মানুষের বসবাসের উপযুক্ত কি না, তা-ও দেখতে হবে। তা নাহলে যা যা করার দরকার, তা করতে হবে। ছাতনার বিডিও-কে তিনি জানান, ওই ব্লকে রাস্তা তৈরির জন্য কয়েকটি গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে বলে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি করে দেওয়ার ব্যবস্থার নির্দেশ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে নির্দেশ দেন পুরুলিয়ায়। সেখানে প্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় রাখায় জোর দিতে বলেন। এই বৈঠকেই কিছু আধিকারিককে গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে তাঁর পরামর্শ, অযথা টেনশন করবেন না। চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রাম বাংলার উন্নয়নের কাজে গতি আনার বিষয়টিকেই এখানে তিনি প্রাধান্য দেন। গ্রামীন বৈদ্যুতিকরণের কাজ কেমন চলছে জানতে চান। হুটমুড়ার সভায় তিনি আশ্বাস দেন, পুরুলিয়ার যে সব এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা রয়েছে, সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে। আগের বার এসে পুরুলিয়ায় ঘোষণা করে যাওয়ামডেল স্কুলগুলির নির্মাণের অগ্রগতি নিয়েও নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
বাঁকুড়াতেও এখনও ১ লক্ষ ১৬ হাজার পরিবার কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পাননি বলে আধিকারিকরা তাঁকে জানান। কাজ এগোচ্ছে না কেন মুখ্যমন্ত্রী তা জানতে চান। আধিকারিকরা জানান, চলতি বছরে আরও ৫০ হাজার কার্ড বিলি করা হবে। জেলাশাসক বলেন, এরমধ্যে অনেকে ঋণ নিয়েও জমা দেয়নি। ফলে সমস্যা হচ্ছে। পরে দলের বিধায়কদেরও মুখ্যমন্ত্রী আলাদা বৈঠকে উন্নয়নের টাকা দ্রুত খরচ করতে নির্দেশ দেন।” বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়-সব আধিকারিকেরা।
মুখ্যসচিব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাইপুর, রানিবাঁধ, সিমলাপাল ও সারেঙ্গায় ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যানে বরাদ্দ অর্থে যে কাজ চলছে, তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জঙ্গলমহলের যে সব এলাকায় রেশন দোকান জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংখ্যায় কম রয়েছে, সেখানে নতুন রেশন দোকান চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলায় রাস্তা, পর্যটন, সেচ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আরও উন্নতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন।” |
তথ্য: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত দাস, প্রশান্ত পাল ও শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল। |