কথার খেলাপ করেছে সিপিএম নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদ। তাই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে আসন্ন বার্ষিক বাজেট পাশে কোনও রকম সমর্থন দেবে না কংগ্রেস। কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে বাজেট পাশ অসম্ভব। গত দু-বছর কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে বাজেট পাশ করিয়ে জেলা পরিষদের অচলাবস্থা কাটিয়েছে সিপিএম। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে ২০০৮ সালে বামফ্রন্টের সদস্য ছিলেন ৩২ জন, সিপিএমের ২৭, আরএসপি’র ৫ জন। কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১।
এই অবস্থায় জেলা পরিষদের দখল নেয় সিপিএম। সিপিএমের হাতেই জেলা পরিষদ থাকলেও গত চার বছরে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে অনেকটাই। সিপিএমের নুরুল ইসলাম দল ছেড়ে সদস্যপদ হারিয়েছেন। আরএসপি’র জোৎস্না তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বামেদের সদস্য সংখ্যা কমে হয়েছে ৩০। অন্যদিকে ৩১ সদস্যের কংগ্রেসে বড়সড় ধস নেমেছে। বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ায় জেলা পরিষদ পদ ছেড়েছেন তিনজন বাণী ইস্রায়িল, সিদ্দিকা বেগম সহ সাত জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে ৩১ থেকে কমে জেলা পরিষদে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১। সাধারণ সদস্য সংখ্যার হিসেবেও কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা এখন ৫০, বামেদের ৪৯ আর তৃণমূলের ৮। বাজেট পাশ করাতে গেলে ১০৭ সদস্যর মধ্যে ৫৪ জনের সমর্থন দরকার। সেক্ষেত্রে বামেদের ভরসা তৃণমূল বা কংগ্রেসের সমর্থন।
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আশিস তেওয়ারি বলেন, ‘‘জেলার উন্নয়ণের স্বার্থে গত দু’বছরের বাজেট পাশ করতে বামফ্রন্ট নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদকে সমর্থন দিয়েছিল কংগ্রেস। শর্ত ছিল কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে উন্নয়ণের রূপরেখা চুড়ান্ত হবে জেলায়। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। ‘আমার ঠিকানা’ প্রকল্পে কংগ্রেসের তরফে বেনিফিসিয়ারিদের নাম জমা দিলেও তারা কোনও সাহায্য পায়নি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও আর্থিক সাহায্যের জন্য তালিকা জমা দেওয়া হয়। জল সঙ্কট কাটাতে এলাকায় বসানো নলকূপের দাবি উপেক্ষিত হয়।’’
আশিসবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। পঞ্চায়েতবিধি যথাযথ মানা হচ্ছে না। সিপিএমের দলত্যাগী নুরুল ইসলাম কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় বাম আমলে তাঁর সদস্যপদ দু’মাসের মধ্যে খারিজ করেছিল জেলা প্রশাসন দলত্যাগ বিরোধী আইনে। অথচ তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাত কংগ্রেস সদস্যের সদস্য পদ খারিজের আবেদন জানিয়েও প্রশাসন সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন। শুধু তাই নয়, বছরে অন্তত দুটি সাধারণ সভা করতে হবে।’’ জেলা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক নেধারাম মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের সদস্যপদ খারিজের সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্সির ডিভিশনাল কমিশনার। তাই সদস্য পদ খারিজের বিষয়টি কেন ঝুলে আছে তা প্রশাসনের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’’ জেলা পরিষদ সভাধিপতি সিপিএমের পূর্ণিমা দাশ বলেন, ‘‘কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে কাজ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কেন তাঁরা কথার খেলাপের অভিযোগ করেছেন জানি না। আমি বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে অবশ্যই কথা বলব।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাজেট পাশ হবে জানুয়ারির মধ্যেই। কংগ্রেস সমর্থন করবে বলে এবারও আশা রাখছি। তা না হলে বাজেট পাশ করাতে কৌশলী ভাবনা চিন্তা করা হবে। আমরা তো চাইছি জেলার উন্নয়ণের স্বার্থে কংগ্রেস, তৃণমূল সকলকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে।’’
জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূলের নেতা বাণী ইস্রায়িল অবশ্য বলছেন, ‘‘তৃণমূল সিপিএমের সঙ্গে কখনও থাকবে না। সিপিএম রাজনীতি ছাড়া কিছুই বোঝে না।” তিনি মনে করেন, জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক দূর্বলতা কোথাও কোথাও আছে। তবে এবারে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ ত্রিশঙ্কু হবে যাতে তৃণমূল হবে নির্ণয়কারী শক্তি।’’ আশিস তেওয়ারির ব্যাখ্যা, ‘‘সে গুড়ে বালি। ত্রিমুখী লড়াই হলে তৃণমূল সামান্য কিছু ভোট কাটতে পারে।’’ সভাধিপতি সিপিএমের পূর্ণিমা দাসের দাবি, ‘‘তৃণমূল এলাকা বিশেষে কোথাও কোথাও ফ্যাক্টর হলেও জেলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে সামগ্রিকভাবে তার প্রভাব পড়বে না। কংগ্রেসের সঙ্গেই লড়াই হবে বামেদের। জেতার আশা অবশ্যই করছি।’’ |