এক মাসে মৃত ৯
ভবঘুরে হোমে মৃত্যু-মিছিল
মুর্শিদাবাদের কান্দির মহালন্দি মানসিক চক্রচর আবাসে ৩০ দিনে ৯ জন আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে।
৩ নভেম্বর জুগিন্দার ও সিপাইয়া নামে দুজন পুরুষ আবাসিকের মৃত্যু হয়। মৃত্যু মিছিলের সেই শুরু। নভেম্বরে মারা গিয়েছে ৮ জন। আর গত ১ ডিসেম্বর হোমের মধ্যেই এলোকেশি (৪৮) নামে এক মহিলা আবাসিক মারা যান। হোমের মধ্যেই মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই মহিলা। পরের দিন রবিবার সকালে হোম কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে কান্দি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে।
এর আগে গত ১০ অগস্ট থেকে ২৮ অগস্টের মধ্যে ৮ জন আবাসিক মারা যান। তার পরেই জেলা প্রশাসনের টনক নড়ে। কান্দি মহকুমা প্রশাসন তড়িঘড়ি তদন্ত করে গত সেপ্টেম্বরে জেলাপ্রশাসনের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। সেই মত হোমের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কথা জানিয়ে জেলাপ্রশাসন কয়েকটি প্রস্তাবও পাঠায় সমাজকল্যাণ দফতরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনও উত্তর মেলেনি। এ দিকে ওই মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চিঠি পাঠিয়েছে।
মহালন্দি মানসিক চক্রচর আবাসের দিনযাপন। —নিজস্ব চিত্র।
এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীব কুমার বলেন, “ওই হোমে কোনও চিকিৎসক নেই। নেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞও। ফলে অসুস্থ আবাসিকদের নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মানসিক হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর কথাও ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও পরিষেবা ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনও উত্তর মেলেনি।” মৃত্যুর কারণ হিসেবে অপুষ্টি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত কারণ বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। কান্দির মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “অবিলম্বে পরিকাঠামো ও পরিষেবার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে শূন্যপদ পূরণ করা প্রয়োজন। গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকারের গোচরে আনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের উচিত অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গল ভেগর্যান্সি অ্যাক্ট ১৯৪৩ অনুযায়ী পুরুষ ও মহিলা ভবঘুরে যারা, পুলিশ তাদের উদ্ধার করে আদালতে হাজির করে। হাওড়া, কলকাতা ও ব্যারাকপুররাজ্যে ওই ধরণের তিনটে আদালত রয়েছে। ওই আদালতের বিচারকের নির্দেশে ভবঘুরেদের রাজ্যের ৯টি হোমে পাঠানো হয়। তার মধ্যে ৭টি পুরুষ এবং ২টি হোম মহিলাদের জন্য রয়েছে। যদিও কান্দির মহালন্দি মানসিক চক্রচর আবাসে পুরুষ ও মহিলা দুটি বিভাগই রয়েছে। ওই হোমের দেখভালের জন্য ম্যানেজার আর দুটি বিভাগের জন্য দু-জন সহকারি ম্যানেজার থাকার কথা। কিন্তু দুটি সহকারি ম্যানেজার পদে কেউ নেই। লালগোলার চাইল্ড ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসার সুদীপ্ত সাহা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই ম্যানেজারের পদ সামলান। এ পাশাপাশি তিনি মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের চাইল্ড ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসারের দায়িত্বেও রয়েছেন।
এদিকে লালগোলা থেকে ওই হোমের দূরত্ব অবশ্য ৬০ কিমি। ফলে তাঁর পক্ষে প্রতি দিন মহালন্দি গিয়ে হোম দেখভাল করা অসম্ভব। এজন্য কান্দির সিডিপিও-কে ওই ম্যানেজারের অতিরিক্ত দায়িত্ব ভার দেওয়ার কথাও মহকুমা প্রশাসনের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
রাজ্যের সমস্ত হোমের দায়িত্বে রয়েছেন ‘কন্ট্রোলার অফ ভেগর্যান্সি’ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “গত এক মাসে ৯ জন আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন। গোটা বিষয়টি রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরকে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স ও শূন্যপদ পূরণের জন্য পিএসসিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।” বিশ্বনাথবাবু বলেন, “রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় এমন ভবঘুরেদের উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়। ফলে শারীরিক ভাবে তারা ভীষণ দুর্বল থাকে। বিভিন্ন অসুখেও তারা ভোগে।”
মানসিক চক্রচর আবাসের এক কর্মীর কথায়, এর আগে মহালন্দির হোমে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৮৪ জন ছিল। গত জুলাই-অগস্টে বেশ কয়েক জন আবাসিককে পাঠানোর ফলে ওই সংখ্যা বেড়ে ২৫০ জনের কাছাকাছি হয়ে যায়। তার মধ্যে বেশ কয়েক জন মারা যান। এই মুহূর্তে মহালন্দির হোমে পুরুষ ১০৪ এবং মহিলা আবাসিক রয়েছেন ১০৫ জন। শনিবার রাতেও গোকর্ণ ব্লক-প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এক মহিলা আবাসিককে। রবিবার আরও ৪ জন মহিলা আবাসিককে চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসন অবশ্য ‘রুটিন চেক-আপ’ বলে দাবি করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.