রাত জেগে পঞ্চাশ বছরের আগের ইডেন টেস্টের স্কোরকার্ড বার করেছেন তিনি। বন্ধু নরি কন্ট্রাক্টরকে দেবেন বলে।
শহরে পৌঁছে জেটল্যাগটাও কাটেনি, ছুটেছেন সাউথ সার্কুলার রোডের গোরস্থানে। বাংলার প্রথম রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক টি এস লংফিল্ডের বাবা যেখানে চিরশান্তির ঘুমে। যিনি পরিচয়ে আবার তাঁর স্ত্রীর প্রপিতামহ।
কলকাতার সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু সোনার স্মৃতি জড়িয়ে। কন্ট্রাক্টরের মতো বন্ধু পেয়েছেন এ শহরে টেস্ট খেলে। স্ত্রী সুজানের সঙ্গে তাঁর প্রেমের শিকড়ও তো লুকিয়ে ক্যামাক স্ট্রিটে।
শুধু একটাই যা গভীর দুঃখ। টেড ডেক্সটার এ শহর থেকে কোনও দিন জিতে ফিরতে পারেননি। না অধিনায়ক হিসেবে। না, নির্বাচক কমিটির প্রধান হয়ে গুচের টিমের সঙ্গে আসার সময়।
এ বার তাই তিনি মহানগরের কাছ থেকে একটা উপহার চান। শুনতে চান, জীবদ্দশায় ইডেনে অন্তত একবার ইউনিয়ন জ্যাকের গর্জন। “পঞ্চাশ বছর আগে আমি যে ইংল্যান্ড টিমটার ক্যাপ্টেন হয়ে এসেছিলাম, সে বার অর্ধেক ক্রিকেটারই এল না। ট্রুম্যান, স্ট্যাথাম কেউ না। নরি-র ভারত অনেক শক্তিশালী ছিল,” সোমবার প্রাক্তন টেনিস তারকা নরেশ কুমারের বাড়িতে বসে আনন্দবাজারকে বলছিলেন ডেক্সটার। টানা কথা বলতে গেলে আটাত্তর বছরের ঋজু শরীরটায় হাঁফ ধরে। একটু থেমে আবার বলেন, “আর গুচের টিমকে তো আজহারউদ্দিন একাই হারিয়ে দিয়েছিল। ইডেনে কখনও ইংল্যান্ডকে টেস্ট জিততে দেখিনি। কিন্তু কুকের টিমের মধ্যে অবিশ্বাস্য একটা জেদ দেখতে পাচ্ছি। মন বলছে, ইউনিয়ন জ্যাকের হুঙ্কার এ বার অন্তত এখানে শুনতে পাব।”
সাক্ষাৎকার দেওয়ার মধ্যেই ডেকে আনলেন স্ত্রী সুজানকে। পাশে বসিয়ে জড়িয়েও ধরলেন। এবং নিজেদের অতীত রোম্যান্সের কাহিনি নিয়ে খোলামেলা হতে দু’বারও ভাবলেন না। “লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইটই বলতে পারেন। তবে আমাদের প্রথম দেখা লন্ডনে। তখন তো আর মোবাইলের যুগ ছিল না। এক জনের কাছ থেকে অতিকষ্টে টেলিফোন নম্বর জোগাড় করতে হয়েছিল,” বলে একচোট হাসি। শেষে অকপট, “সবচেয়ে আপত্তি ছিল আমার শাশুড়ির। লংফিল্ডের উদাহরণ টেনে বলতেন, আরও এক জন ক্রিকেটার এল আমার সংসারে! যাই হোক, তার পর চুয়ান্ন বছর ধরে তো একসঙ্গে কাটাচ্ছি। সিএবি-র প্রস্তাবটা পেয়ে অবিশ্বাস্য লেগেছিল। আমার স্ত্রী-র জন্মভূমিতে আবার আসতে পারলাম।’’ মঙ্গলবার তো বহু দিনের পুরনো বন্ধুর সঙ্গেও দেখা হবে সিএবি-র অনুষ্ঠানে। প্রসঙ্গ উঠতেই মুখে স্বর্গীয় হাসি, “নরিকে যে কত দিন বাদে দেখব। ওর জন্য ছোট্ট উপহারও আছে।”
হালফিলের ক্রিকেট দেখেন নিয়মিত। টি-টোয়েন্টি বেশ পছন্দের। হাওয়ায় ‘দিলস্কুপ’ মেরে অস্ফুটে বলে ওঠেন, “আহ্, এই শটটা যদি আমি কখনও মারতে পারতাম!” সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জমানার সময় ক্রিকেট দেখা সাময়িক বন্ধ রাখার দুঃখটা তাড়া করে। “ও রকম ডাকাবুকো এক ক্যাপ্টেনকেই মাঠে দেখা হল না।” আফসোস আরও এক জনকে নিয়ে হয়। সচিন তেন্ডুলকরকে দেখে। নইলে আর বলবেন কেন, “অবসর কবে নেবে জানি না। কিন্তু এত বড় এক ক্রিকেটারের এ রকম অবস্থা দেখলে খারাপ লাগে। মন চাইছে, ইডেনে সচিনের একটা সেঞ্চুরি হোক। কিন্তু ফিটনেস তো মনের কথা শুনবে না। সচিনের ফিটনেস আর ভাল হবে না। দিন-দিন বরং খারাপই হবে!”ভাল খেলে এসেছি। |