তাঁকে থামাতে গেলে বোধহয় ব্যাটটা কেড়ে নেওয়া দরকার ছিল।
শীতের দুপুরের ইডেন। ভারতীয় দলের নেট সেশন চলছে। এবং ব্যাট হাতে গোটা ইডেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। মাঠ, মাঠের বাইরে।
তাঁকে নকিং দিতে-দিতে কোচ ডানকান ফ্লেচারের হাতে ব্যথা হওয়ার জোগাড় মোটামুটি। সিএবি-র ম্যাসিওরেরও রেহাই নেই।
ড্রেসিংরুমে আবার ঢুকেই এলসিডি-তে চালিয়ে দিচ্ছেন পুরনো অস্ট্রেলিয়া সফরের ম্যাচ। মন দিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন ব্যাটিং। নিজের নয়, রাহুল দ্রাবিড়ের!
তিনি মানে, সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। এবং তাঁর রানে ফেরার আকুতিটাও এ ভাবে সোমবারের ইডেনে ধরা দিল। একবার নয়, বারবার।
নিজের ক্রিকেটকফিনের বিবর্ণ ছবি সরিয়ে নতুন ছবি বসিয়েছেন। সাঁইবাবার। গণপতির। কিন্তু ফর্মে এখনও বদল নেই। এ দিন ইডেনে ভারতীয় ড্রেসিংরুমেও সিরডি সাঁইবাবার ছবি বসল। এ বার তাঁর ব্যাট কি জীবনের খোঁজ পাবে? |
ক্রিকেট-পাঠে কিন্তু কোনও খামতি নেই। চল্লিশের চৌকাঠ ছুঁয়েও বছর উনিশের ক্রিকেটশিক্ষার্থীর মতো দেখায় তাঁকে। কোচের সঙ্গে ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিট নকিং করার পরও ডেকে নেন স্থানীয় বোলারকে। শিখিয়ে দেন, টপস্পিন করার সময় বুড়ো আঙুলের চাপ কতটা হবে। হাতকলমে দেখিয়ে দেওয়ার আবদার এলে বলে দিচ্ছেন, “সরি। আজ কাঁধে ব্যথা। কাল দেখাই?” টিমমেটদের ক্লাসেও কোনও বিশ্রামের গল্প নেই। প্র্যাক্টিসের ফাঁকে ফাঁকে বিরাট-হরভজনদের সঙ্গে আড্ডা দিলেন বটে, কিন্তু আলোচ্য বিষয় শুধুই ক্রিকেট।
আর ‘লিটল মাস্টার’-এর এই অনন্ত সিরিয়াসনেস কোথাও যেন ঢুকে পড়ছে টিম ইন্ডিয়ার বাকি সংসারেও।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা এ দিন ইডেনে ঢুকেই ড্রেসিংরুমে তিন-তিনটে মেসেজ ঝুলিয়ে ফেললেন।
এক) আমাদের মনন এতটাই স্বচ্ছ আর পরিষ্কার হওয়া উচিত যাতে ঈশ্বর এসে নিজেই চাইবেন দেখা দিতে।
দুই) মহান হতে গেলে তোমাকে দায়িত্বও নিতে হবে।
তিন) টিমওয়ার্ক কাজ কমিয়ে দেয় যেমন, তেমন সাফল্যও আবার বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ। |
বীরেন্দ্র সহবাগকে নিয়ে খুচরো ঝামেলা ছিল। বিষয় ইডেনের খাবার-দাবার। সিএবি কর্তারা এ দিন তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, খাবারের মানের চেয়েও বড় হচ্ছে স্বাদ। যে খাবারই দেওয়া হোক না কেন, সেটা সুস্বাদু হওয়া দরকার। সহবাগের সঙ্গে কথা বলার পর খাবারের লিস্টে টুকটাক বদল আনছে সিএবি। যুবরাজ সিংহ আবার সেই শহরে ফিরে এলেন, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর যেখানে শেষ টেস্ট খেলে গিয়েছিলেন। তাঁর সংস্থা ‘ইউ উই ক্যান’ চুক্তিবদ্ধ হল অ্যাপেলো গ্লেনেগেলস হাসপাতালের সঙ্গে। আগামী ছ’মাসে এই হাসপাতাল এক লক্ষ রোগীর ক্যানসার নির্ণয় করবে।
ভারতীয় দলের ‘রোগ’ নিরাময়ের ‘ওষুধ’ তো আবার একটাই। যিনি একাই পারেন দুঃস্বপ্নের ওয়াংখেড়ে থেকে ধোনির টিম ইন্ডিয়াকে টেনে তুলে স্বর্গোদ্যানে সোনালি স্বপ্ন দেখাতে। ভারতীয় ক্রিকেটের সেই চিরন্তন তিন অক্ষরের নাম এস আর টি। |