কিষাণগঞ্জে তিন ফতোয়া
মেয়েদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
তোয়া-এক: গ্রামের কম বয়সী, অবিবাহিত মেয়েরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। অন্যথা ১০ হাজার টাকা জরিমানা। ফতোয়া-দুই: বাড়ির বিবাহিত মহিলারা গ্রামের রাস্তা-ঘাটে নয়, মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন শুধু অন্দরমহলেই। নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে জরিমানার পরিমাণ ২ হাজার টাকা। ফতোয়া-তিন: গ্রামের পুকুরে, কুয়োয় বা কলে, প্রকাশ্যে গ্রামের মেয়েরা স্নান করতে পারবেন না।
কোনও ভিন্ দেশের, তালিবান এলাকার ফতোয়া নয়। এই ফরমান জারি করেছেন নীতীশ কুমার শাসিত বিহারের এক গ্রামের মাতব্বররা।
পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া, বিহারের কিষাণগঞ্জ জেলার কোচাধামন ব্লকের গ্রামটির নাম টুপামারি। গত কাল বিকেলে গ্রামবাসীদের নিয়ে একটি বৈঠকে বসেন গ্রামের মাতব্বররা। সেখানে গ্রামের সকলের উপস্থিতিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি মাতব্বরদের। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ফতোয়া ঠিকঠাক রূপায়ণ হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য রবিবারের ওই বৈঠকে ১০ জনের একটি তদারকি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হয়েছেন মনজুর আলম এবং সম্পাদক হয়েছেন জাভেদ ইকবাল। ঘটনা জানাজানি হতে সময় লাগেনি। নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। জেলাশাসক সন্দীপ কুমার বলেন, “ঘটনার কথা শোনার পরেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। রিপোর্ট পেলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মধ্যে টুপামারি গ্রামটি অবস্থিত, সেই সুন্দরবাদী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও মহিলা, সামিনা খাতুন। মোবাইল ফোনেই তিনি বলেন, “কেন ওরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি জানি না। এই বৈঠকের বিষয়ে কেউই আমাকে আগে কিছু জানায়নি। আমারই পঞ্চায়েত এলাকার একটি গ্রামে এমন ফতোয়ার কথা জানতে পেরে আমি নিজেই লজ্জিত।” তদন্তের দায়িত্ব বর্তেছে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও সঞ্জয় কুমারের উপর। স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সকাল থেকে টুপামারির বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কথা বলছেন তিনি। তাঁর কথায়, “যাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে কথা না বলে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে গ্রামের মানুষরা অনেকেই যে ঠিক মতো মুখ খুলছেন না, তা বুঝতে পারছি।”
বিডিও যাঁদের খুঁজে পাচ্ছেন না, গ্রামের সেই অন্যতম মাতব্বর ও নজরদারি কমিটির সম্পাদক জাভেদ ইকবাল কী বলছেন? মোবাইলে তিনি বললেন, “এটা করা হয়েছে শুধুমাত্র আমাদের গ্রামের জন্য। গ্রামের পরিবেশ ঠিক রাখতে এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে চালানোর জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা দেখেছি মেয়েরা, যারা মোবাইল ব্যবহার করছে তাদের মধ্যে প্রেমের প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ির অনুমতি ছাড়া তারা বিয়ে করছে। পালিয়ে যাচ্ছে।” মোবাইল ব্যবহার নিয়ে গ্রামের বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে যে এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে তা জানিয়ে তিনি বলেন, “গ্রামের বহু পুরুষ বাইরে কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা তাঁদের বাড়ির ভিতরে কথা বলতে বলেছি।” নিষেধাজ্ঞা মহিলাদের স্নান নিয়েও। ইকবাল বলেন, “গ্রামের পাশে জাতীয় সড়ক। সেখানে কুয়োয় মহিলারা স্নান করেন। রাস্তা দিয়ে লোকজন যায়, গাড়ি-ট্রাক যায়। এতে গ্রামের সম্মান নষ্ট হয়।আমরা ঠিক করেছি, এটা করা যাবে না।” ফতোয়া না মানলে? জাভেদের বক্তব্য, “ভয় দেখাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রামের বয়স্কদের সিদ্ধান্ত সবাই মানবে। জরিমানার কথা ঠিক নয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.