বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে তরুণীর অপমৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি দুর্ঘটনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মৃত অদিতি ঘটকের বন্ধুদের জেরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের দাবি, খালের জলে গাড়ি উল্টে ওই তরুণীর ডুবে যাওয়া দুর্ঘটনাই। মেয়ের মৃত্যুর পরে অদিতির মা সংহিতা ঘটক খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
ঋত্বিক ঘটকের দৌহিত্রী অদিতির মৃত্যু-রহস্যের তদন্তে নেমে সোমবার প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সোনারপুরের গোয়ালবাটির বাসিন্দা নির্মল বাগ জানান, শুক্রবার রাত ন’টায় বাড়িতে খেতে বসেছিলেন তিনি। আচমকা ঝপাং করে একটা শব্দ পান। তড়িঘড়ি বেরিয়ে দেখেন, একটি গাড়ি পাশের খালে পড়ে গিয়েছে। বাঁশের সাঁকোর উপরে দাঁড়িয়ে এক তরুণী ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ চিৎকার করছেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে কাউকে টেনে বার করার চেষ্টা করছেন অন্য এক যুবক। সঙ্গে সঙ্গে পড়শিদের নিয়ে তিনি উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন বলে পুলিশকে জানান নির্মলবাবু। |
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে নির্মলবাবু বলেন, “পিছনের আসন থেকে একটি মেয়েকে আমরা টেনে বার করি। তখন যুবকটি বলেন, গাড়িতে আরও এক জন রয়েছে।” নির্মলবাবুদের বয়ান অনুযায়ী, গাড়িটি পুরোপুরি উল্টে গিয়েছিল। গাড়ির ভিতরে থাকা দ্বিতীয় তরুণী (অদিতি) গাড়ির ভিতর দিকে চলে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভারী চেহারার অদিতিকে উদ্ধার করতে সমস্যা হয়েছিল। প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁকে জল থেকে তুলে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন সকালে সোনারপুরের খেয়াদার গোয়ালবাটি এলাকা ঘুরে দেখেন তদন্তকারীরা। শনিবার সকালে গাড়িটিকে জল থেকে তোলা হয়েছিল। অদিতির বন্ধু জ্ঞানজিৎ পটার, তানিয়া বসু ও ঋতিজা নন্দীকেও জেরা করা হয়। তিন জনের সঙ্গে কথা বলার পরে তদন্তকারীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ চেতলার বাড়ি থেকে জ্ঞানজিৎ ও আলিশা নামে এক বান্ধবীর সঙ্গে অদিতি লেক এলাকার এক রেস্তোরাঁয় যান। সেখানেই তানিয়া ও ঋতিজার সঙ্গে দেখা হয় তাঁদের। খাওয়ার পরে আলিশা বাড়ি চলে যান বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে তিন বান্ধবীকে বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার কথা ছিল জ্ঞানজিতের। তানিয়ার বাড়ি বারুইপুর রেলগেট এলাকায়। সেখানে তাঁকে নামানোর পরে টালিগঞ্জে ঋতিজাকে নামানোর কথা ছিল। সব শেষে চেতলায় অদিতিকে নামিয়ে জ্ঞানজিৎ কসবায় নিজের বাড়িতে ফিরে যেতেন। অদিতির বন্ধুরা জানিয়েছেন, সোনারপুরের কাছাকাছি আসতেই অদিতি ‘লং ড্রাইভে’ যাওয়ার আব্দার জানান। সেই মতো জ্ঞানজিৎ খেয়াদার দিকে গাড়ি নিয়ে যান। গোয়ালবাটির কাছে রাস্তায় বাঁকে জ্ঞানজিৎ নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি খালে পড়ে যায়। ঋতিজা ও জ্ঞানজিৎ সামনের আসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও তানিয়া ও অদিতি ভিতরে আটকে পড়েন। নির্মলবাবু ও তাঁর পড়শিরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, রাত সওয়া ন’টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটলেও অদিতিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে রাত পৌনে এগারোটা হয়ে গিয়েছিল।
শনিবার রাতেই জ্ঞানজিতের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ করেন অদিতির মা সংহিতাদেবী। সোমবার সে অভিযোগে তিনি আরও কিছু তথ্য যোগ করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “মৃতার ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব ও ছাত্র নেতা ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায় ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমাদেবী ও অদিতির মা সংহিতাদেবীর সঙ্গেও দেখা করেন। রবীনবাবু বলেন, “সুরমাদেবী জানিয়েছেন, তিনি অদিতির উপরে খুবই নির্ভরশীল ছিলেন। এই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করুক পুলিশ।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এই বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন বলে রবীনবাবু জানিয়েছেন। |