ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগানো গেলে দেশে শিল্প-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে কলকাতা তথা এই রাজ্য। যদিও শিল্পাঞ্চল নয়, আপাতত বাজার হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে কলকাতা। সামগ্রী তৈরি হচ্ছে অন্যত্র। কলকাতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বিক্রির জন্য। কলকাতা হয়ে পণ্য যাচ্ছে দেশের অন্যান্য শহরে। এ রাজ্যের শুধু নয়, ভিন্ রাজ্যের ও ভিন্দেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও ভরসা কলকাতা। আর তাঁদের ভরসায় একের পর এক বিমানসংস্থা ছোট ছোট আন্তর্জাতিক রুটে উড়ান বাড়াচ্ছে এখানে। সুফল পাচ্ছে কলকাতা।
তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটাতে, আয়েশি-বিলাসী নয়, সস্তার উড়ান নিয়েই এগিয়ে আসছে বিমানসংস্থাগুলি। চওড়া আসন, দেদার খাবার-পানীয়ের চেয়েও এই ব্যবসায়ীদের কাছে সস্তার বিমান টিকিটের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই, ক্যাথে প্যাসিফিক নয়, হংকং থেকে উড়ান চালু করেছে ড্রাগন এয়ার। এগিয়ে আসছে সস্তার ইন্ডিগো-ও। ২১ ডিসেম্বর কলকাতা-ব্যাঙ্কক রুটে উড়ান চালু করছে তারা। ইন্ডিগো দিল্লি-মুম্বই থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান চালায়। কলকাতার ক্ষেত্রে তারাও বেছে নিল ব্যাঙ্কককে। কলকাতা-ঢাকা ও কলকাতা-ঢাকা-ব্যাঙ্কক রুটে দু’টি উড়ান চালুর কথা ভাবছে এয়ার ইন্ডিয়াও।
বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিস-এর সেক্রেটারি দুর্গাপ্রসাদ নাগ হিসেব দিলেন, বছর চারেক আগেই কলকাতা দিয়ে আমদানি হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী। তাঁর কথায়, “এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য নেই। ফলে, সহজেই অনুমান করা যায় কলকাতার বাজার এখন কতটা বড় হয়েছে। এখানকার মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। এখান থেকে হংকং, ব্যাঙ্কক, ঢাকা, সিঙ্গাপুর বা চিনের কিছু শহরে যাতায়াতের খরচ দিল্লি-মুম্বইয়ের চেয়ে অনেকটাই কম।”
কলকাতা থেকে নিয়মিত এই সব রুটে যাতায়াত করেন কলকাতার ব্যবসায়ী রাজু শেখ। তাঁর কথায়, “সস্তার উড়ান হলেই সুবিধা। বিমান ভাড়ার টাকাটা তো পকেট থেকে দিতে হয়। বাইরে থেকে কাপড়, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, খেলনা এমনকী প্রসাধনী সামগ্রীও নিয়মিত কলকাতায় আসছে। যে চিনের সামগ্রী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তা যদি আমাদের দোরগোড়ায় হয়, তা হলে তো আমাদের সেই সুবিধাটুকু নেওয়া উচিত।”
দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে গত কাল, সোমবার থেকে ঢাকা-দিল্লি উড়ান ফের শুরু করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “নিজস্ব কিছু কারণে বাংলাদেশ বিমান এই রুটে উড়ান তুলে নিয়েছে। ফলে ঢাকা-দিল্লি রুট থেকে এত দিন একাই লাভ তুলেছে জেট।” সংস্থা সূত্রের খবর, অল্প দিনের মধ্যেই কলকাতা-ঢাকা রুটেও উড়ান চালু করতে চলেছে তারা। কলকাতা-ঢাকা-ব্যাঙ্কক-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় আর একটি উড়ান নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে, সেই উড়ানের চেয়েও কলকাতা-ঢাকা-ক্যানটন-কলকাতা রুট বেশি লাভজনক হবে বলে মনে করছেন ট্র্যাভেল এজেন্টরা। সেই মতো, পরামর্শও দেওয়া হয়েছে
এয়ার ইন্ডিয়াকে।
কলকাতা থেকে চিনের কুনমিং ও হংকংয়ে নিয়মিত যাত্রী হচ্ছে। চিনের অন্যত্র যাঁরা যেতে চান, তাঁরা কুনমিং থেকে উড়ান বদলে নিচ্ছেন। কলকাতার লক্ষ্মীনারায়ণ ট্র্যাভেল এজেন্সির জেনারেল ম্যানেজার দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “আমরা প্রতি দিন গড়ে ২০টি করে চিনের ক্যানটনের টিকিট বিক্রি করছি। সেখানে পোশাক এখন সস্তা। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন ক্যানটনের দিকে ছুটছেন।”
ইদানীং দিল্লি-মুম্বই থেকেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কলকাতা হয়ে ব্যাঙ্কক-ঢাকা-হংকং-সিঙ্গাপুর যাতায়াত করছেন। ফলে, এই সমস্ত রুটে যে টিকিটের দাম ১৩-১৪ হাজারের কাছে ঘোরাফেরা করত, তা ২০-২২ হাজারের কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ট্র্যাভেল এজেন্ট সংগঠনের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবি-র কথায়, “চিনে যাওয়ার এতটাই চাহিদা বেড়েছে যে গত মাস থেকে কলকাতা-কুনমিং রুটে দিনে দু’টো করে উড়ান চালাতে শুরু করেছে চায়না ইস্টার্ন। পূবের এই সব দেশে যাওয়ার জন্য যে ভিসা
লাগে তা-ও কলকাতা থেকে সহজে পাওয়া যাচ্ছে।” |