বউবাজার বা পার্ক স্ট্রিটের নামী দোকানের সোনার গয়না। কিন্তু ‘মেড ইন ঢাকা’! ঢাকাই জামদানির সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে কলকাতায় পুজোর বাজার কাঁপানো ‘বাহা’ শাড়ি।
ভারত-বাংলাদেশ নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূচনায় নয়াদিল্লির মুখ রাখল পশ্চিমবঙ্গই। তিস্তা চুক্তিতে মহাকরণের আপত্তি যে সুর কেটে দিয়েছিল, আজ তাকেই অন্য মাত্রায় বাঁধলেন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা। ঢাকায় ‘ইন্ডিয়া ট্রেড শো’-য়ে দু’দেশের যৌথ উদ্যোগের প্রথম ঘোষণাটি করলেন কলকাতারই অলঙ্কার-ব্যবসায়ী নীলেশ পারেখ। বাংলাদেশের একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঢাকাতেই তৈরি হবে অলঙ্কার।
মাত্র ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ।
কিন্তু তাতেই যেন হাঁফ ছাড়লেন বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা।
বললেন, “একেই বলে সোনায় সোহাগা! শুরুটা ভালই হল।’’
কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হাল ফ্যাশনের সোনা বা হীরের গয়নার দারুণ চাহিদা বাংলাদেশে। বেসরকারি হিসেবে, প্রতি দিন অন্তত তিন থেকে চার কোটি টাকা মূল্যের সোনায় গয়না সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। কিন্তু এর ৯৯ শতাংশই চোরা পথে! কারণ বাংলাদেশ-সরকার গয়না আমদানির উপর বিপুল করের বোঝা চাপিয়ে রেখেছে। জেম-জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ বলেন, “আমরা এখানেই গয়না বানিয়ে বেচতে পারি। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা-ইউরোপে রফতানি করলে শুল্কও কম লাগে। এতে দু’দেশেরই লাভ।” সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কলকাতার সব নামজাদা অলঙ্কার ব্যবসায়ীরাই এখন ঢাকায় হাজির। তাঁদের পাশাপাশি কলকাতার অন্যান্য ক্ষেত্রেরও একগুচ্ছ বেসরকারি সংস্থার কর্তা এখন ঢাকায়। বাংলাদেশের শিল্পপতি-বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে চুলচেরা বিচার চলছে। দু’পক্ষের মধ্যে জড়তা কাটাতে ফিকি-র সভাপতি আর ভি কানোরিয়া বাংলায় কথা বলে চলেছেন। বলছেন, “আমি তো কলকাতারই লোক।”
সরকারি তরফেও তিস্তা চুক্তির ক্ষত মেরামতের যাবতীয় চেষ্টা চলছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন জানালেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি এ বার আরও উদার হচ্ছে। এত দিন এক বারই ভারতে যাওয়ার জন্য পাঁচ দিনের ভিসা দেওয়া হত। কিন্তু এখন থেকে এ দেশের পর্যটক, ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, বয়স্ক নাগরিক, শিল্পীদের ছ’মাসের ভিসা দেওয়া হবে। এক বার ভিসা নিয়েই একাধিক বার ভারতে যাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বহু মানুষ কলকাতা ও ভারতের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন। হাসিনা-সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি ছাড়াই এক তরফা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনমোহন-সরকার।
বাণিজ্যসচিব এস আর রাওয়ের যুক্তি, “প্রধানমন্ত্রী তো বলেইছেন, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে সব সময় কী দিয়ে কী পেলাম, দেখলে চলবে না। আমাদেরই বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুবিধা হল, সীমান্তের দু’পারের মানুষের পছন্দ-অপছন্দে অনেক মিল।”
সে কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু করতে চাইছে নয়াদিল্লি। পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল আরও সুগম করতে সেখানকার পরিকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। আর কলকাতার বস্ত্র ব্যবসায়ী গৌরচন্দ্র বসাক জামদানি শাড়ি কেনাবেচার পাশাপাশি বাহা শাড়ি নিয়ে ঢাকায় হাজির হয়েছেন। দু’পারের পছন্দ এখানেও মিলবে, এই আশায়। |