কিলোমিটারে ৪১ টাকা গচ্চা সিএসটিসি-র
ভাড়া কিছু বাড়লেও রোজগারের তুলনায় খরচ বহু বেশি। ফলে লোকসানের ভারে মাথা পিষ্ট হওয়ার জোগাড়। অগত্যা হিসেবের খাতা নিয়ে সরকারেরই দ্বারস্থ হয়েছেন সরকারি পরিবহণ সংস্থা সিএসটিসি-র কর্তারা।
কী বলছে তাঁদের খাতা?
সিএসটিসি (কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম)-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, “বাস চালালে প্রতি কিলোমিটারে আমাদের খরচ হচ্ছে ৬৫ টাকা। ভাড়া বাবদ আয় ২৪ টাকা। এক কিলোমিটার বাস চালিয়ে লোকসান ৪১ টাকা!”
অর্থাৎ এক কিলোমিটার পরিবহণ-পরিষেবা জোগাতে গিয়ে যা আয় হচ্ছে, গলে যাচ্ছে তার আড়াই গুণেরও বেশি! যত বেশি বাস চলছে, লোকসানের বোঝা তত ভারী হয়ে চেপে বসছে নিগমের ঘাড়ে। মহাকরণের কাছে নিষ্কৃতির উপায় জানতে চাওয়া হলেও এখনও পরিত্রাণের কোনও পথ বাতলাতে পারেননি পরিবহণ দফতরের কর্তারা। তাঁদের একাংশ বলছেন, সবচেয়ে বাঞ্ছিত ও যুক্তিযুক্ত সমাধান ছিল, খয়রাতির নীতি পরিহার করে যাত্রীদের থেকে পরিষেবার ন্যায্য দাম আদায় করা। আপাতত যার আশা নেই।
তাই সঙ্কটে ঠেকা দিতে বাসের সংখ্যা কমানো ছাড়া উপায় দেখছেন না নিগম-কর্তারা। সিএসটিসি-র মোট বাসের সংখ্যা ৮০০।
অসুখ
নিগম কর্মী ব্যয়* আয়*
সিএসটিসি ৫৬০০ ১৭০ ৬৫
সিটিসি ৬০০০ ২৫০ ৫০
এনবিএসটিসি ৩৬০০ ২২৫ ৬০
এসবিএসটিসি ২৪২৫ ১৩৫ ৬০
* বছরওয়াড়ি গড় অঙ্ক, কোটি টাকায়
দাওয়াই
প্রস্তাব পরিস্থিতি
উদ্বৃত্ত কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর কার্যকর হয়নি
ডিপোর বাড়তি জমি বিক্রি কার্যকর হয়নি
কিছু রুটে বেসরকারি সংস্থা ১ রুটে, নামমাত্র
সংস্থা-সূত্রের খবর: বছরখানেক আগেও প্রতি দিন গড়ে ৫০৫টি (এর ৯০টি দূরপাল্লার) বাস চালাত সিএসটিসি। এখন ৩৬৫টি-র বেশি নামানো যাচ্ছে না, যার মধ্যে ৫০টি দূরপাল্লার। “আমাদের যত সচল বাস রয়েছে, তাতে রোজ পাঁচশো বাস চালানোই যায়। কিন্তু যত বাস চলবে, ততই তো লোকসান!” মন্তব্য এক নিগম-কর্তার।
কাজেই দিন দিন পথে সিএসটিসি’র বাস দুর্লভ বস্তু হয়ে উঠছে। আমজনতার হয়রানির পারদও চড়ছে। ও দিকে বাস কম নামছে বলে প্রতিদিন সিএসটিসি’র গড়ে ৮০০ কর্মীর কোনও কাজ থাকছে না। কার্যত ওঁদের বসিয়ে মাইনে গুনতে হচ্ছে। ধুঁকতে থাকা সংস্থাটির কাছে তা যেন মড়ার উপর খয়রাতির ঘা! সিএসটিসি-সূত্রের বক্তব্য: ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির দরুণ ফি মাসে জ্বালানি-খরচ বাবদ নিগমের ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সঙ্গে বেতন বাবদ মাসিক ১২ কোটির দায়। এটা হাল্কা করা যায় না?
রাজ্যের অন্যান্য পরিবহণ নিগমের মতো সিএসটিসি-তেও বাড়তি কর্মীর বোঝা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু লোকসান এতই বাড়ছে যে, তাতে সমস্যার কতটা সুরাহা হবে, তা নিয়ে পরিবহণ-কর্তারাও সন্দিহান। অবস্থা যে সত্যিই সঙিন, সিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তাপস রায় তা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায় “পরিবহণমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিগোষ্ঠী, মায় মুখ্যমন্ত্রীও চেষ্টা করছেন মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে। এত দিনের জট চট করে কাটানো সম্ভব নয়। দেখা যাক!”
আশু সুরাহা দূর অস্ত্। তাই সিএসটিসি’র মতো লোকসানে ন্যূব্জ তিনটি সরকারি পরিবহণ সংস্থা কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি), উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি)-ও বাস কমানোর নীতি নিয়েছে। পরিবহণ-সূত্রের হিসেবে, প্রতি কিমি বাস চালালে এনবিএসটিসি-র ক্ষতি ১১ টাকা, এসবিএসটিসি-রও প্রায় তা-ই। আর সিটিসি-র বার্ষিক ব্যয়-আয়ের ব্যবধান অন্তত দু’শো কোটি! পরিবহণমন্ত্রী কী বলছেন?
সরকারি পরিবহণের আর্থিক দুরবস্থার কথা মানলেও সরকারি বাস বসিয়ে দেওয়ার তথ্য মানতে চাননি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। “রাস্তায় সরকারি বাস খুব একটা কমেছে বলে তো শুনিনি! অচল বাস মেরামতি ও নতুন বাস কেনার ক্ষেত্রে অর্থাভাব বড় প্রধান অন্তরায় ঠিকই। এবং সমাধানের সহজ রাস্তাও জানা নেই। তবু সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে যথাসাধ্য করছি।”
এমতাবস্থায় ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)-এর দেখানো রাস্তা ধরার কথাও ভেবেছিলেন সিএসটিসি-সিটিসি-এসবিএসটিসি’র কিছু কর্তা। সেটা কী? প্রায় সাড়ে ছ’শো স্থায়ী কর্মীর ভূতল পরিবহণের নিজস্ব বাস প্রায় ১৭০, যার মধ্যে ‘ভলভো’ ও ‘মার্কো পোলো’ ব্র্যান্ডের বেশ কিছু বাস রয়েছে, কিছু বাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতও। সেগুলোর টিকিটের দাম অনেকটা বেশি। বাকি বাস বিভিন্ন সংস্থাকে লিজ দিয়ে চালাচ্ছে তারা। এতে লোকসান খানিকটা কমানো গিয়েছে। কিন্তু অন্যত্র এই ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাবে পরিবহণ দফতরের সায় মেলেনি। কেন?
এক কর্তার মন্তব্য, “ভূতল পরিবহণে কর্মীর চাপ কম। তাই ওরা পেরেছে। অন্যদের সেই পথে চলতে হলে বহু কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দিতে হবে। যা এখনই সম্ভব নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.