রেজিনগরের মাটিতে দাঁড়িয়ে সদ্য দল ছেড়ে যাওয়া প্রাণিসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুন কবিরকে ‘বেইমান’ অ্যাখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
বেলডাঙা-২ ব্লকের বিকলনগরে রবিবার দুপুরে সভা করে কংগ্রেস। ওই সভায় তিনি বলেন, “এখানকার সর্বস্তরের মানুষ কংগ্রেসের সঙ্গে বেইমানি বরদাস্ত করতে পারছেন না। ওই বেইমানি পছন্দ করছেন না, তাঁরা মানতে পারছেন না। ফলে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেই স্বতস্ফূর্তভাবে এখানে ভিড় করেছেন।”
হুমায়ুনকে উদ্দেশ্য করে অধীরবাবু বলেন, “কংগ্রেসের খেয়ে-পরে মানুষ হল। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা দিল। রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিল। আর সেই লোকটা কি না সামান্য প্রতিমন্ত্রীর লোভে মাথা বিক্রি করে দিল। আমরা লজ্জিত। জেলাবাসী হিসেবে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। আমরা নবাবের দেশের মানুষ। নবাবিয়ানা কমতে পারে। কিন্তু আভিজাত্য ও দেমাক কমেনি। কারও কাছে নিজেকে বিক্রি করতে পারব না।”
সম্প্রতি কংগ্রেস দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, “অধীর চৌধুরীর অনেক আগে থেকেই আমি কংগ্রেস দলটা করি। ফলে অধীর চৌধুরীর কাছে আমি অন্তত কোনও উপদেশ শুনতে চাই না। তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার হিসেব বলে শেষ হবে না!” |
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে রেজিনগরের শক্তিপুরে সভা করেন অধীর চৌধুরী। সেদিনও ওই সভায় তিলধারণের জায়গা ছিল না। এদিন ভাগীরথীর পূর্বপাড়ের সভায় বিকলনগর নিম্নবুনিয়াদি হাইস্কুল ময়দানে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। এলাকার কংগ্রেস কর্মীদের কথায়, বেলডাঙা-২ ব্লকের বিকলনগরে এদিন সভা করে রেজিনগর বিধানসভা উপনির্বাচনের হাওয়া তুলে দিলেন অধীর চৌধুরী। সেই সঙ্গে আট দিনের মধ্যে দু’বার ভাগীরথীর দু-পাড়ে সভা করে মানুষের মন জয় করলেন বলেও স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে। রেল প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এদিনের সভায় ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের লোককে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। কারণ সোমপাড়ায় স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচন রয়েছে। ওই নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে যাবে রেজিনগরে কার ক্ষমতা বেশি! শুধু পূর্বপাড়ের মানুষের উপস্থিতিতেই সভায় তিলধারণের জায়গা নেই। এ থেকে প্রমাণিত হয় রেজিনগর কংগ্রেসের ছিল, আছে এবং থাকবে। ক্ষমতা থাকলে দিদি এখানে তাড়াতাড়ি ভোট করান। কংগ্রেস এখানে আবার তার স্বমহিমায় নিজের প্রতিষ্ঠার জানান দেবে।” মন্ত্রী হুমায়ুন কবির বলেন, “আট দিনে দু’বার রেজিনগর এলাকায় এসে চার জায়গায় সভা করা দেখে মনে হচ্ছে অধীর চৌধুরী ভারতের প্রতিমন্ত্রী নন, তিনি রেজিনগরের প্রতিমন্ত্রী। তাঁকে রেজিনগরের কোনও গ্রামের প্রতিমন্ত্রী করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করছি। এজন্যই আগামী ১২ ডিসেম্বর কংগ্রেস পরিচালিত বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা ঘেরাও করবে।”
পাল্টা বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের বিলকিস বেগমের হুমকি, “পঞ্চায়েত সমিতি কার্যালয়ে দেখলেই তাকে ঝাঁটা হাতে বিদায় করব।” তিনি বলেন, “ওই মিরজাফরের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা আমাকে সহ্য করতে হয়েছে।” বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের বিলকিস বেগম। রেজিনগরে এদিনের সভায় রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ও মুর্শিদাবাদের সাংসদ মান্নান হোসেন এক সঙ্গে দুজনে আসেন। মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের তিন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, শফিউজ্জামান ও ফিরোজা বেগম-সহ জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব। মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অবশ্য নওদার বিধায়ক আবু তাহের। |