|
|
|
|
আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস |
সাহায্য ছাড়াই লড়ছেন গৌর ও প্রসেনজিৎ |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
ওরা দু’জন বন্ধু। দুজনের দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতাই ওদের বন্ধন গড়ে দিয়েছে। ওরা হল গৌর মান্না আর প্রসেনজিৎ মাল। গৌরের কাছে সমস্ত দুনিয়াটাই অন্ধকার। আর প্রসেনজিৎও একশো শতাংশই অন্ধ। নিজে চলাফেরা করতে পারলেও কাছের জিনিসও ঝাপসা তার চোখে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-১ ব্লকের সড়বেড়িয়া পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ধানখাল গ্রামে বাড়ি গৌরের। আর প্রসেনজিৎ দাসপুর-২ ব্লকের গোছাতি পঞ্চায়েতের চকসুলতান গ্রামের বাসিন্দা। দুই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌর আর প্রসেনজিৎ প্রথম থেকেই দাসপুরের অস্তলে নিম্বার্ক মঠ প্রতিবন্ধী স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। ২০১০ সালে সুরথপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৫০০ পায় গৌর আর প্রসেনজিৎ পায় ৫৩৬। রিডার ও রাইটার নিয়েই পড়াশোনা করেছিল ওরা। স্বীকৃতিস্বরূপ দুজনেই পেয়েছিল এম কে নারায়ণের হাত থেকে পুরস্কারও।. এরপর গৌর ধানখাল হাইস্কুল থেকে এবং প্রসেনজিৎ সড়বেড়িয়া হাইস্কুল থেকে একইভাবে রিডার ও রাইটার নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকও পাশ করে। এখন তারা নাড়াজোল কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। |
|
ওরা দু’জন। —নিজস্ব চিত্র। |
দুজনের পরিবারেই দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। গৌরদের ভরসা মাত্র ৫ কাঠা জমি। প্রায় ২৫ বছর ধরে বাবা বংশীবদন মান্না কীর্তন দলের সঙ্গে যুক্ত। নিজের জমিতে চাষ এবং কীর্তন দলের গান গেয়ে সংসার চলে। বাবার মতো গান করে গৌরও। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি আসাম, দিল্লি, মুম্বই, কটক-সহ বিভিন্ন রাজ্যে গান গেয়ে সে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করছে। গৌর বলে, “সিজিনের সময় মাসে তিন-চার দিন ডাক হয়। তাতে পড়াশোনার খরচ এবং সংসারের খরচ চলে না।” ছলছল চোখে বংশীবাবুও বলেন, “ছেলেকে কলেজ নিয়ে যাওয়া আর বাড়ি নিয়ে আসাই এখন কাজ। গান গাওয়ার সাধ আর নেই।” প্রসেনজিতের বাবা নিরঞ্জন মাল জানান, তাঁদের ১৫ কাঠা জমি রয়েছে। ছ’জনের সংসার চালাতে তাই ভরসা। মাঝে মাঝে ভাগ চাষ এবং অন্যের জমিতে খাটতেও হয়। নিরঞ্জনবাবু বলেন, “ছেলের এই অবস্থা। স্থায়ী রোজগারও নেই। যদি ছেলের কিছু একটা সরকারিভাবে ব্যবস্থা হয় ভাল হয়। অনেক জায়গায় আবেদন করলেও কোনও সাহায্য পাইনি।”
উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল ছিল দুজনেরই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গৌর-প্রসেনজিৎ সরকারি কোনও সাহায্য পায়নি। ইতিহাসে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হলেও রিডার এবং রাইটার না পাওয়ায় কেটে গিয়েছে অনার্স। বাধ্য হয়ে পড়তে হচ্ছে পাশ কোর্সেই। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজে ঢুকে প্রসেনজিৎই গৌরকে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে বসিয়ে দেয়। ক্লাস শেষের পর সে আবার গৌরকে বাবার কাছে পৌঁছে দেয়। আর নিজে অপেক্ষা করে বাসের জন্য। প্রসেনজিৎ বলে, “আমি বাড়ি না পৌঁছনো পর্যন্ত আমার বাড়ির লোকেরাও অপেক্ষা করেন। একটা হস্টেল হলে খুব ভাল হত।” এই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ দেবব্রত পাহাড়ি বলেন, “কলেজের হস্টেল সংরক্ষিত সম্প্রদায়ের জন্য। আইনি কারণে ওদের জন্য ওই হস্টেল মঞ্জুর করা যায়নি।”
অন্য জেলাগুলোর মতোই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও বেরিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকের আবেদন পত্র। গৌর এবং প্রসেজিৎ দু’জনেই ফর্ম ফিল আপ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান দু’জনেই। কারণ রাইটারের জন্য কোনও ফর্ম বের হয়নি। যদি সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী না হয় তাহলে এই পরীক্ষাতেও বসতে পারবে না তারা। সরকারের কাছে তাদের আবেদন, যাতে পরীক্ষায় বসার জন্য রাইটারের ব্যবস্থা করা যায়। |
|
|
|
|
|