ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তা বিজেপিতে
মোদীকে সামনে আনার দাবি সঙ্ঘের অন্দরেও
লের মধ্যেই বহু আপত্তি। আপত্তি সঙ্ঘের একাংশেরও। তবু নিতিন গডকড়ীকে দ্বিতীয় দফায় বিজেপি সভাপতি করতে এখনও সচেষ্ট আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে তিনি সক্রিয়।
ভাগবত চাইলেও এই প্রশ্নে আরএসএসের মধ্যে কার্যত বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে। আগে আরএসএস যেমন একজোট ছিল, এখন তার চরিত্র বদলে গিয়েছে। সঙ্ঘের মধ্যেও অনেক সঙ্ঘ গড়ে উঠেছে। বিজেপির মতোই অন্তর্কলহ ছায়া ফেলেছে সঙ্ঘেও। ভাগবতের কাছে গডকড়ীকে দ্বিতীয় বার বিজেপি সভাপতি না করার অনুরোধ করেছেন আরএসএসের চার গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এঁরা হলেন দত্তাত্রেয় হোসাবোলে (পটনা), কৃষ্ণগোপাল (গুয়াহাটি), মনমোহন বৈদ্য (দিল্লি) এবং অরুণ কুমার (জম্মু ও কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের প্রচারক)। গডকড়ী-প্রশ্নে নিজের পাশে অবশ্য এক নেতাকে পেয়েছেন মোহন ভাগবত। তিনি ভাইয়াজি জোশী।
সঙ্ঘের এই বিক্ষুব্ধ চতুষ্টয় রীতিমতো ফরমান জারি করে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব দিচ্ছেন বিজেপি নেতাদের কাছে। তার একটির বক্তব্য, এ মাসের শেষে গুজরাত নির্বাচনের ফল প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হোক। এখনও পর্যন্ত প্রাক্-নিবার্চনী যে সব সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে তাঁর রাজনৈতিক জমি সুরক্ষিত রাখতে পেরেছেন এবং সেখানে তিনি ফের জিতবেন। সঙ্ঘের এই নেতাদের প্রস্তাব, গুজরাতের ফল বেরনোর পর মোদীকেই নেতা হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। জরুরি নয়, সে ক্ষেত্রে এখনই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। কারণ, তাতে নীতীশ কুমার রুষ্ট হবেন। এনডিএ-তে ফাটল ধরতে পারে। সঙ্ঘও তা চায় না। তাই মোদীকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা যেতেই পারে।
কংগ্রেসে যেমন মনমোহন সিংহ রয়েছেন বলে রাহুল গাঁধীর বিষয়ে কোনও ঘোষণা হচ্ছে না। অথচ রাহুলকে প্রচার কমিটির প্রধান করে আগামী নির্বাচনের মুখ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তেমনই বিজেপিতেও মোদীকে সেই দায়িত্ব দিয়ে নেতা হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে বলে মনে করেন সঙ্ঘের এই নেতারা। সে ক্ষেত্রে মোদী স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দলের নেতা হিসেবে উঠে আসবেন। সুষমা স্বরাজ শনিবারই গুজরাতে গিয়ে মোদীর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে এসেছেন।
এই নেতাদের দ্বিতীয় প্রস্তাব, যে হেতু গুজরাতের নির্বাচনে জয়ের পর মোদীরই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা, তা না করে, তাঁর ঘনিষ্ঠ কোনও অনুগামীকে সেই পদে বসানো হোক। গুজরাতের পাট চুকিয়ে মোদী দিল্লির অশোকা রোডে বিজেপির সদর দফতরে বসুন। তার পর গুজরাতের সাবরমতী আশ্রম থেকে গাঁধীজির শান্তি ও অহিংসার বার্তা নিয়ে প্রচারে বেরোন তিনি। মোদী গুজরাতের সব কিছু ত্যাগ করলেই দলের রাজনৈতিক লাভের সুযোগ বেড়ে যাবে। তৃতীয় প্রস্তাব হল, মোদীকে দলের মুখ করার পর সুষমা স্বরাজ বা অরুণ জেটলির মতো কোনও নেতাকে সভাপতি পদে বসানো হোক। সুষমা যদি সভাপতি হন, তা হলে রাজনাথ সিংহকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ দেওয়া হোক।
চতুর্থ প্রস্তাবটি হল, অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রাক্তন লোকসভা কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে প্রার্থী হোন মোদী। লখনউ থেকে লড়েই বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সঙ্ঘের ওই নেতাদের বক্তব্য, এনডিএ-র বিস্তার হবে ভোটের পরে। তার আগে বিজেপিকে নিজেদের আসন বাড়াতে হবে। বিজেপি একাই ভাল সংখ্যক আসনে জিতলে বহু দলই এনডিএ-র ছাতার তলায় আসবে। এখনও পর্যন্ত হিন্দি বলয় ছাড়া দক্ষিণ বা পূর্ব ভারতে বিজেপির তেমন শক্তি নেই। মোদীকে নেতা করে হিন্দুত্বের পথেই হাঁটতে হবে দলকে। তার মানে তাঁকে যে সাম্প্রদায়িক হতে হবে, তা নয়। ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়েও মোদী অনায়াসেই এগোতে পারেন। যেমন গুজরাত নির্বাচনের আগে তিনি সদ্ভাবনা যাত্রা করেছেন। সঙ্ঘের এই নেতাদের মত, মোদীর মধ্যে এক জন বাজপেয়ী যেমন আছেন, তেমনই এক জন লালকৃষ্ণ আডবাণীও রয়েছেন। বাজপেয়ীর প্রশাসনিক ক্ষমতা আর আডবাণীর সাংগঠনিক ক্ষমতার মিশেল হলেন মোদী। ফলে তিনিই যোগ্যতম।
সঙ্ঘের বিক্ষুব্ধ অংশ এই সব প্রস্তাব দিলেও তা যে আরএসএস এবং বিজেপিতে সহজে মানা হবে, তা নয়। ভাগবতের সঙ্গে সঙ্ঘ নেতাদের যেমন সংঘাত রয়েছে, তেমনই মোদীর ব্যাপারেও সরসঙ্ঘচালকের একটু আড়ষ্টতা রয়েছে। সঙ্ঘের এক নেতার মন্তব্য, “গাড়ির কারখানা থেকে হরেক রকম গাড়ি বেরোয়। কোনও গাড়িকে বেশি সার্ভিসিং করতে হয়। কোনওটিকে কম। মোদীর ক্ষেত্রে সার্ভিসিং বেশি করতে হয়। কারণ তিনি নিয়ন্ত্রণে থাকেন না।”
আবার যশোবন্ত সিংহ, যশবন্ত সিন্হা, শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো নেতাদের গডকড়ী-বিরোধিতার বিষয়টিও রয়েছে। এঁরা গডকড়ীকে ফের সভাপতি হিসেবে দেখতে চান না। অনেকে প্রকাশ্যে বিদ্রোহও করেছেন। অনন্ত কুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদদের মতো কিছু নেতা আবার চান, চলতি পরিস্থিতিতে আডবাণীকেই সভাপতি করা হোক। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা এখনই স্থির না করে ভোটের পরেই স্থির করা হোক। যে গুরুমূর্তি গডকড়ীর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিলেন, তিনিও এই ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি এ বারে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নয়াদিল্লি আসন থেকে তিনি লড়তেও পারেন। বিজেপি সভাপতি হওয়ার আগ্রহ রয়েছে তাঁরও। আবার সুষমাকে বিজেপি সভাপতি হতে হলে লোকসভায় বিরোধী দলনেত্রীর পদ ছাড়তে হবে। সেটিও তাঁর পক্ষে খুব সহজ নয়।
মোদী নিজে কী ভাবছেন? ঘনিষ্ঠ মহলে মোদী বলছেন, গুজরাত নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনও বিষয়েই মাথা ঘামাতে চান না। গডকড়ী মনে করছেন, মোদীকে এখনই সামনে আনলে শুধু নীতীশ নন, ভবিষ্যতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের এনডিএতে আসার সম্ভাবনা বন্ধ হবে। বরং মোদী না এলে নীতীশের মতো পুরনো শরিক তো থাকবেনই, মমতার আসার সম্ভাবনাও বাড়বে। ফলে বিজেপির কাছে নতুন দলের সঙ্গে জোট গড়ার যে আশা রয়েছে, তা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই শেষ করার বিরোধী গডকড়ী।
বিজেপির একাংশের মত, মোদীকে সামনে আনলে রাজনীতির মেরুকরণ হবে। তাতে কংগ্রেসেরই বাড়তি সুবিধা হবে। সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসের বাক্সে যাবে। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে নরেন্দ্র মোদী বা বরুণ গাঁধীরা প্রচার করেছেন। কিন্তু তাতে কংগ্রেসের লাভ হয়েছিল। আবার সঙ্ঘের মোদী-পন্থী নেতাদের মত, মোদী কেন সাম্প্রদায়িক প্রচার করবেন? তিনি প্রশাসনের কথা বলবেন। বিজেপি এমনিতেই সংখ্যালঘু ভোট বিশেষ পায় না। ফলে তার পরোয়া করে লাভ নেই। কংগ্রেস রাহুল গাঁধীকে সামনে রেখে যেমন অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, বিজেপিরও মোদীকে সামনে রেখে চলা উচিত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কী হবে, তা অনিশ্চিত। তবে গুজরাতের ফল বেরনোর আগে বিজেপি ও আরএসএস শিবিরে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.