সদরঘাটে বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়কের টোলপ্লাজা বন্ধ করে দিতে পূর্ত দফতরকে অনুরোধ করল জেলা প্রশাসন। রবিবার বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা এ কথা জানিয়ে বলেন, “ওই টোল প্লাজায় কর্মরত পূর্ত দফতরের কর্মীদের অন্যত্র কাজ দিতেও বলা হয়েছে ওই দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে।”
জেলাশাসকের দাবি, “প্রাথমিক ভাবে এর পরে ওই প্লাজা আর নতুন করে খুলবে না বলেই মনে হয়। পাশাপাশি ওই প্লাজার কর্মীদের বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ মেলে, তাও খতিয়ে দেখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পূর্ত দফতরকে।” তাঁর কথায়, “ওই প্লাজায় টোল তোলাকে কেন্দ্র করে যানজটের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ফলে ওখানে কোনও মতেই টোলপ্লাজা রাখা উচিত নয়। অন্য দিকে, ওই প্লাজাটি যে যথেষ্ট লাভজনক নয় তা পূর্ত দফতরই আমাদের জানিয়েছে। সুতরাং বড় রকমের গোলমালের পরে ওটিকে বন্ধ করে দেওয়াই ঠিক হবে বলে আমরা মনে করি।” রবিবার টোলপ্লাজার কাছে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেটি বন্ধই রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। টোল আদায়কে কেন্দ্র করে বচসার জেরে বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে ওই টোলপ্লাজার কর্মীরা এক গাড়ি চালককে মারধর করেন বলে অভিযোগ। হাতে চোট পান তিনি। ক্ষিপ্ত হয়ে শেখ সিরাজুল নামে ওই গাড়ি চালক গাড়িটি আড়াআড়ি ভাবে রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে দেন। যানজট বেধে যায়। সিরাজুলের ফোন পেয়ে এসে পড়েন তাঁর বন্ধু ও পাড়াপড়শিরা। টোলপ্লাজার অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। |
পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু ঘটনার পরেই টোলপ্লাজার কর্মীরা সরে পড়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, প্লাজার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে নানা রকম রসিদ। সে কারণে আপাতত টোল আদায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও টোল আদায় বন্ধ হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিলেন বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) প্রদীপ আচার্য।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে শনিবার রাতেই একটি গোপন রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ওই টোলপ্লাজা সরকার পরিচালিত হলেও সেখানে টোল আদায়ের নামে আর্থিক দুর্নীতি ও জোর করে টাকা আদায় চলছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পূর্ত দফতরের টোল অফিসার অঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “টোল আদায় নিয়ে ওখানে গোলমাল চলছেই। এটি আসলে একটি চক্রান্ত। পূর্ত দফতরের নির্দেশ ছিল, স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে টোল আদায় করতে হবে। স্থানীয় মানুষই যখন প্লাজাটি চালু থাক তা চাইছেন না, তখন সব দিক থেকে সেটি বন্ধ হওয়াই উচিত।”
ওই রিপোর্টে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, বর্ধমানের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ শনিবার বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) প্রদীপবাবুকে ফোন করে ঘটনাস্থলে পূর্ত দফতরের কোনও কর্তাকে পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরে মহকুমাশাসক নিজে গেলেও পূর্ত দফতরের কোনও কর্তাকে দেখা যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে মহকুমাশাসক প্রদীপবাবুর দাবি, “ঘটনাস্থলে দফতরের বর্ধমানের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গিয়েছিলেন। তবে আমি যাওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পরে তিনি সেখানে পৌঁছন।”
রবিবার ছুটি থাকায় পূর্ত দফতরের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। |