নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বাম আমলে তরাইয়ের বাগানগুলিতে রেশন ডিলারের বরাত দেওয়ায় সরকারি নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তরাইয়ের বাগানগুলিতে রেশন প্রাপকের তালিকায় লক্ষাধিক ভুয়ো নাম থাকার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে খাদ্য দফতর। ভুয়ো নাম থাকার পাশাপাশি চা বাগানগুলিতে রেশন ডিলারের বরাত দেওয়া নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে চা বাগানের রেশন ব্যবস্থা সরাসরি খাদ্য দফতরের হাতে আসার পরে তরাইয়ের ৪২টি চা বাগানে রেশন দেওয়ার জন্য ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। খাদ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী রেশন ডিলার নিয়োগ করতে হলে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। অভিযোগ সে সময় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ায়, সেটি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা না করে পুরোনো ডিলারদের থেকে ২১ জনকে বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে অস্থায়ী ভাবে বরাত দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ৩০ জুন একইভাবে ২০ ডিলারকে বরাত দেওয়া হয়। দু’দফায় অস্থায়ী ভাবে ৪১টি রেশন ডিলারের হাতে বরাত দিয়ে বছরের পর বছর তাদের নবিকরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি নিয়ম এড়িয়ে কেন ঘুর পথে রেশন ডিলারদের বরাত দেওয়া হয়েছে? খাদ্য দফতর সূত্রের খবর ২০০৫ সাল থেকে মোট চার দফায় তরাইয়ের চা বাগানগুলিতে ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবারই বিজ্ঞপ্তিতে আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ায় পুরোনো অস্থায়ী ডিলারদেরই নবিকরণ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, খাদ্য দফতরের নিজস্ব আইনি পরামর্শদাতা থাকার পরেও কী ভাবে পর পর একই বিষয়ে চারটি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আইনি জটিলতা হল? কেনই বা পুরোনো আইনি জটিলতা নিষ্পত্তি না করে অথবা সেই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন না করে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল? খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পুরো বিষয়টিই পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। ইচ্ছে করে বার বার ভুল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবার নেতা মন্ত্রীদের নির্দেশেই আইনি জটিলতা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ সব আর চলবে না। তাই আমরা পুরো তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছি। যারা এই দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না।”
তরাই এবং ডুয়ার্সের ভুয়ো রেশন কার্ড নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই আগের বাম আমলের খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই যাবতীয় অভিযোগ তুলেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী। বুধবারেও তিনি বলেন, “বাম আমলের নেতা মন্ত্রীরা সব জানতেন। একাংশ সরকারি আধিকারিকদের ব্যবহার করে তারাই এসব দুর্নীতির ছক কষতেন।” প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পরেশ অধিকারী বলেন, “ভুয়ো রেশন কার্ড ধরতে আমরাই প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলাম। সে তথ্য সবাই জানেন। বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী তো তদন্তের কথা বলছেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই সব প্রমাণ হবে”
ডিলারদের বরাত দেওয়া নিয়েই শুধু নয়, নিয়ম অনুযায়ী, চা বাগানের ডিলারদের চা শ্রমিকদের জন্য পৃথক হিসেবের খাতা তৈরি করতে হয়। চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ চাল ও গম রাখার জন্য পৃথক গুদামের ব্যবস্থা রাখতে হয়। প্রতি মাসে কতজন শ্রমিক রেশন নিয়েছে তার তালিকাও নিয়মিত দফতরে পাঠাতে হয়। তরাইয়ের চা বাগানগুলির ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলি মানা বয় কিনা সেটাও নিয়মিত নজরদারি হয় না বলে অভিযোগ। |