নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
অবৈধ নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বাধা দিচ্ছেন বলে পুরসভার অন্দরেই অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুর অফিসার-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তালিকা তৈরি হয়ে তা ভাঙার সিদ্ধান্ত হলেও কয়েকজন নেতা শেষ মুহূর্তে ফোন করে অভিযানে নামতে নিষেধ করছেন। এমনকী, কদিন আগে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত এক নেতার বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে রওনা হলে অন্তত ৩ জন নেতা ফোনে কর্তব্যরত কর্মীদের একাংশে নিষেধ করেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, একাধিক নেতা প্রকাশ্যে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বেআইনি নির্মাতাদের কয়েকজনের নাম করে ‘দলের স্বার্থে’ তাঁদের বেআইনি নির্মাণ ভাঙা থেকে পুর অফিসারদের একাংশকে বিরত থাকতে বলেছেন বলেও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এভাবে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের বাধায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ থমকে থাকলে বোর্ডের মেয়াদই ফুরিয়ে যাবে বলে পুরকর্মীদের একাংশ কটাক্ষ করেছেন। অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের বাধায় অভিযান থমকে যাওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও অফিসার-কর্মী মুখ খুলতে রাজি নন। ঘটনাচক্রে, বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অভিযান থমকে যাওয়া নিয়ে পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান নিয়ম করে যা বলছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পুরকর্মীরা। কমিশনারের বক্তব্য, “মেয়র এবং মেয়র পারিষদরা আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা কার্যকর করাই আমাদের কাজ। অন্যথায় নিয়ম ভাঙা হবে।” পাশাপাশি, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মীর ভূমিকা নিয়ে পুরকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। বহুবার বলা সত্ত্বেও বিল্ডিং বিভাগ থেকে ওই কর্মীকে কেউ বদলি করতে পারেনি কেন তা নিয়েই ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। ওই কর্মী পুরসভায় বসেই ‘সব দলের নেতাদের নাম করে নানা মন্তব্য’ করেন বলে কয়েকজন পুরকর্মী অভিযোগ করেছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহার কাছেও ওই কর্মীর বিষয়ে অভিযোগ পৌঁছেছে।বস্তুত, পুরসভার ভূমিকা নিয়ে এখন গোটা শহরেই চলছে আলোচনা। কংগ্রেস-তৃণমূল তো বটেই, সিপিএমের নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, যে কজন প্রোমোটারের বিরুদ্ধে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের একাংশের সঙ্গে সিপিএমের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গত বিধানসভা ভোটেও শহরে প্রচার করেছে কংগ্রেস-তৃণমূল। পুরসভার একজন প্রবীণ কর্মী জানান, বাম আমলে সিপিএমের ঘনিষ্ঠরা এখন কংগ্রেস-তৃণমূলের কয়েকজনের ‘কাছের লোক’ হয়েছেন বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। যদিও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত মনে করেন পুরসভা যথাযথ পদক্ষেপ করছে। তিনি বলেছেন, “নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর বাইরে কিছু বলতে চাই না।” এ দিন পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম সাংবাদিক বৈঠক করে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে বিশেষ অধিবেশন ডাকার অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু, সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে যে প্রোমোটারদের বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ থমকে, বাম আমলে তাঁদের একাংশ নানা এলাকায় বিধিভঙ্গ করে গ্যারেজ দখল করে দোকান, ফুটপাত দখল করে হোটেলের সিঁড়ি কী ভাবে তৈরি করেছেন। যদিও নুরুলবাবুর দাবি, “বেআইনি নির্মাণের পুরো তালিকা চাওয়া হবে। সেগুলি ভাঙার দাবি থেকে সিপিএম সরবে না।” |