জমি-নীতি বদল করার দাবি তুলল সিপিএম
যে জমি-সমস্যায় বারবার আটকে যাচ্ছে নতুন শিল্প, তাকেই এ বার অস্ত্র করছে সিপিএম। এ দিন দলের রাজ্য নেতৃত্ব কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ না করার নীতিকে। এবং স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই নীতি না বদলালে রাজ্যে শিল্পায়নের দুর্দিন কাটবে না। একই সঙ্গে সিপিএম বুঝিয়ে দিল, পঞ্চায়েতেও তারা রাজ্যে শিল্পায়নকেই প্রচারের অন্যতম বিষয় করবে।
বুধবার বরাহনগরে সিপিএমের এক সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব দু’জনেই রাজ্য সরকারের জমি-নীতির কড়া সমালোচনা করেন। বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, এই সরকারের নীতির ফলেই রাজ্যে কোনও শিল্প হচ্ছে না। উল্টে বাম আমলে যে সব কারখানা বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল, তারাও রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে। রাজ্যে শিল্প হচ্ছে না বলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে আসন শূন্য থাকছে বলেও বুদ্ধবাবু অভিযোগ করেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যে শিল্পায়নকে সিপিএম তুলে ধরবে, এ দিন বুদ্ধ-গৌতমের কথায় তা স্পষ্ট। পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে রাজ্যের সব জেলা থেকে আসা যুব নেতাদের নিয়ে বেলঘরিয়ায় শিক্ষা শিবিরের আয়োজন করেছিল সিপিএম। সেই উপলক্ষেই সিঁথিতে এই জনসভা।
বুদ্ধ-গৌতমের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বুদ্ধদেববাবুদের তো জমি-নীতি ছিল। তা হলে শিল্প হল না কেন? ৪৭১০ শিল্প অনুমোদিত হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ৮৩৩টি শিল্প হল কেন?” পার্থবাবুর কটাক্ষ, “বুদ্ধবাবুদের যখন চুপ করে থাকার কথা, তার অনেক আগেই তাঁরা আস্তিন গুটিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন।”
জনতার মাঝে। ছবি: রাজীব বসু।
পশ্চিমবঙ্গে জমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মালিকানায় বিভক্ত। তাই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করাই ছিল বামেদের নীতি। তাদের যুক্তি ছিল, এর ফলে জমির মালিক সঠিক দাম পাবে এবং জমি কেনাবেচায় দালালদের দাপট কমবে। কিন্তু সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে সাফল্যের ফলে ক্ষমতায় এসেই মমতা সিদ্ধান্ত নেন, শিল্পের জন্য সরকার কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না। জমি কিনতে হবে শিল্প সংস্থাকেই।
মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দেড় বছর পরেও সিঙ্গুরে কোনও শিল্প না হওয়া, কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া থেকে এনটিপিসি ক্রমেই পিছু হঠার ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জমি-নীতি নিয়ে মমতাকে আক্রমণের পথে যাচ্ছে সিপিএম। বুদ্ধবাবু বলেন, “সরকারকে ঠিক করতে হবে রাজ্যে কল-কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র তাঁরা করবেন কি না। কাটোয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমরা সব ঠিক করে এলাম। কিন্তু এখন সরকারের নীতির ফলে সব বন্ধ হয়ে রয়েছে।”
রাজ্যে শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা রাস্তা তৈরির জন্য তারা জমি নেবে কিনা, তা রাজ্য সরকারকে ঠিক করতে হবে বলে বুদ্ধবাবু জানান। রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য তাঁরা যা করেছিলেন, তা থেকে এক পা-ও তৃণমূল সরকার এগোতে পারেনি এই অভিযোগ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত কারখানা হবে বলে সব ঠিক করে এলাম। এখন ভয় হচ্ছে, এই প্রকল্পও সরে যাবে কিনা!” গৌতমবাবুর নাম উল্লেখ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “ওঁর তৈরি নিউটাউনে উইপ্রো, ইনফোসিস আসার কথা ঠিক ছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কী হবে কে জানে! ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে। কারণ, ছেলেমেয়ারা ভাবছে, এ রাজ্যে পড়ে চাকরি হবে না।” রাজ্যে চাকরি নেই বলেই ছেলেমেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতে চলে যাচ্ছে বলেও বুদ্ধবাবু অভিযোগ করেন করেন। গৌতমবাবু মমতার নাম না করে বলেন, “আপনি জমি-নীতি বদলান। না হলে শিল্প আসবে না। আমরা সব রকম সাহায্য করব।”
তৃণমূল যে বুদ্ধ-গৌতমের সমালোচনাকে পাত্তা দিচ্ছে না, পার্থবাবুর কথায় তা স্পষ্ট। জিন্দল প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “বুদ্ধবাবু জঙ্গলমহলে জিন্দলদের নিয়ে যাওয়ার পর বিস্ফোরণ হয়। তার পর তিনি আর সে মুখো হননি। জিন্দলদের ব্যবসা যাতে সময়মতো হয়, সে ব্যাপারে চেষ্টাও করেননি। কিন্তু মমতার উদ্যোগে সজ্জন জিন্দল এখানে এসেছিলেন।” বুদ্ধবাবুদের মুখে শিল্পের কথা মানায় না, জানিয়ে পার্থবাবু বলেন, “ওঁরা না করেছেন শিল্প, না করেছেন কৃষি! ৩৪ বছর মানুষকে কাঁদিয়েছেন।” ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শূন্য আসন সম্পর্কে পার্থবাবুর মন্তব্য, “এর আর উত্তর কী দেব? দেড় বছরে কোনও কারখানা তৈরি হয় না। আগের সরকার এমন কোনও কাজ করে যায়নি, যাতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছেলেরা কাজের সুযোগ পায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.