সিঙ্গুরে দুই নেতার তরজা চলছেই, আসরে বিরোধীরা |
সিঙ্গুরের দুই তৃণমূল নেতার মধ্যে ফাটল আরও চওড়া হল বুধবার। বেচারাম মান্না ক’দিন আগেও যাঁকে ‘শিক্ষাগুরু’ বলে পরিচয় দিচ্ছিলেন, সেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এ দিন অভিযোগ করেন, জমি আন্দোলন পর্বে প্রতিপক্ষ ‘ন্যানো বাঁচাও কমিটির’ এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন বেচারাম।
আর বেচারামের পাল্টা জবাব, মাস্টারমশাইয়ের এক ছেলের বিরুদ্ধেই রয়েছে তোলাবাজির অভিযোগ। রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমার ছেলেকে তোলাবাজ বলে বেচারাম তো প্রকারান্তরে স্বীকারই করলেন, তোলাবাজি চলছে।”
সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের মেজাজ যে খুব ভাল নেই, এ দিন বিক্ষোভের মুখে পড়ে তা ভাল ভাবেই মালুম পেয়েছেন বেচারাম। আর পিঠ বাঁচাতে দুষেছেন মাস্টারমশাইকেই। তাঁর কথায়, “উনি যদি কৃষক-দরদীই হতেন, তবে কুপন বিলির সময় এক বার অন্তত ব্লক অফিসে আসতেন। উনি এখন চাষিদের পাশ কাটাতে চাইছেন বলে কথার জাল বুনছেন।”
দলের কিছু লোক তোলাবাজি করছে রবীন্দ্রনাথবাবুর এই অভিযোগের জবাবে বেচারাম বলেন, “আমরা যখন সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন করছি, তখন তো টাটারা আমাদের মূল শত্রু। রবীন্দ্রনাথবাবুও সে সময়ে আন্দোলনে আছেন। এ দিকে, ওঁর ছোট ছেলে (তুষারকান্তি) টাটাদের গাড়ি কেনাবেচার কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে তোলাবাজিরও অভিযোগ ওঠে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “মাস্টারমশাই তো নিজে একটা বিতর্কিত গাড়িতে চড়েও ঘুরতেন। এখন উনি বড় বড় কথা বলছেন। উনি এত সততার কথা বলেন কী করে? উনিও তো এর বাইরে নন। তখন তো কিছু বলেননি। এখন নিজের পছন্দসই মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বলেই কী এ সব বলছেন?”
জবাব দিতে ছাড়েননি মাস্টারমশাইও। ছেলেকে নিয়ে বেচারামবাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর দাবি, তাঁর ছেলে গাড়ি কেনাবেচার কাজ করে। কিন্তু সেটা একটা ফরাসি সংস্থার হয়ে। ওই সংস্থার সঙ্গে টাটাদের সম্পর্ক নেই। বেচারাম সম্পর্কে তাঁর কটাক্ষ, “আমরা যখন জমি আন্দোলন করছি, ‘ন্যানো বাঁচাও কমিটি’ সে সময়ে প্রতিপক্ষ ছিল। ওই কমিটিরই এক জনের বাড়িতে বেচারাম সে সময়ে যেত। জানতে চাওয়া হলে বলত, যাঁর বাড়িতে ও যায়, তিনি ব্যবসায়ী।”
দুর্নীতির অভিযোগে সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি সুলেখা মালিককে সরিয়েছিল দল। তাঁকে এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবুর বাড়িতে দেখা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাস্টারমশাই বলেন, “ও এসেছিল ঠিকই। কিন্তু এর মধ্যে কোনও স্ববিরোধ নেই। ও অনৈতিক কাজ করেছিল, তাই সরে যেতে বলা হয়েছিল।”
৩০ তারিখ মমতার প্রশাসনিক বৈঠকে কী হাজির থাকছেন? রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “লিখিত ভাবে আমন্ত্রণ পেলে চিন্তা করব। চিঠির বয়ান দেখে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমি কিন্তু চিঠির জন্য বসে নেই। কৃষকদের সঙ্গে আছি, থাকব।” |