লাক্সারি ট্যাক্সি ধর্মঘট আজ থেকে |
ভাড়া নিয়ে অনড় রাজ্য, বাস সমিতি ফের আন্দোলনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভাড়া-তরজার জেরে এমনিতেই বহু বেসরকারি বাস রাস্তায় নামছে না। তার উপরে ভাড়া-বিবাদের সুরাহা না-হওয়ায় ফের আন্দোলনে নামার জন্য কোমর বাঁধছেন বাস-মালিকেরা। ফলে আম-যাত্রীর হয়রানি বাড়ার আশঙ্কা। এর মধ্যেই লাক্সারি ট্যাক্সির মালিকদের সংগঠন আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দু’দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
বেসরকারি বাসের ভাড়া নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মালিকেরা যে-দাবি জানিয়েছিলেন, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র তাকে আমল দিতে রাজি নন। বাসভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকার-নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রণ কমিটি গড়ার ব্যাপারে মালিক সংগঠনের প্রস্তাবও খারিজ করে দিয়েছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে ফের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করছেন বাস-মালিকেরা।
বাস-মালিকদের আন্দোলনের হুমকির মধ্যেই আজ থেকে দু’দিনের ধর্মঘটে নামছেন লাক্সারি ট্যাক্সির মালিকেরা। ওই ট্যাক্সির মালিকদের সংগঠনের নেতা সৈকত পাল বুধবার জানান, এখন ১০ ঘণ্টার জন্য লাক্সারি ট্যাক্সির ভাড়া ৪৬৫ টাকা। সংগঠনের দাবি ছিল, ভাড়া বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হোক। কিন্তু সরকার তা মানেনি। বাধ্য হয়েই ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। রাজ্যে ৩০ হাজার লাক্সারি ট্যাক্সির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সরকারি এবং আধা-সরকারি সংস্থায় ভাড়া খাটে। ধর্মঘটের ফলে ওই সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়বে। |
বাস-মালিকদের দাবি ছিল, বিদ্যুৎ বা টেলিফোনের ভাড়া নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিশনের ধাঁচে বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিটি তৈরি করুক রাজ্য সরকার। বাস-মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সরকার বলেছিল, ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কমিটি তৈরি করবে। কিন্তু তা হয়নি।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে চিঠি দিয়ে বাস-মালিক সংগঠনগুলি জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর ভাড়া বাড়ানোর পরে ফের কেন তা কমানো হল, সরকার তার ব্যাখ্যা দেয়নি। তপনবাবু বলেন, “ভাড়া বাড়ানোর পরে আবার কমানো হল কেন, আমাদের তা জানানো হয়নি। নিয়ন্ত্রণ কমিটি থাকলে এ ভাবে ভাড়া কমানো যেত না। সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনৈতিক এবং অবৈজ্ঞানিক।”
একই মত বাস-মালিকদের অন্য সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের। ওই সংগঠনের নেতা দীপক সরকার বলেন, “নিয়ন্ত্রণ কমিটি গড়া হলে তাতে সব তরফের প্রতিনিধিরা থাকতেন। তার ফলে সিদ্ধান্ত অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত এবং নিরপেক্ষ হত। এ ক্ষেত্রে সরকার বাসের ভাড়া নিয়ে রাজনীতি করল।” তপনবাবুর বক্তব্য, সরকার প্রথমে যে-ভাড়া বাড়িয়েছিল, তা যথেষ্ট না-হলেও ইতিবাচক ছিল। কিন্তু তার পরে ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তে বাস-শিল্পের ক্ষতি হবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য তাঁরা মন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন।
সরকার পুনর্বিবেচনা করবে কি?
বাস-মালিকদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন, “সংশোধিত ভাড়া পুনর্বিবেচনা করার প্রশ্নই ওঠে না। সরকার হিসেব কষে দেখিয়ে দেবে, নতুন ভাড়ায় মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে না।” ভাড়া নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ কমিটিও যে গড়া হবে না, এ দিন তা জানিয়ে দেন মদনবাবু। বলেন, “সরকার এই ধরনের কমিটি গড়ার কথা আদৌ ভাবছে না।” মন্ত্রী জানান, বেআইনি অটোরিকশার সঙ্গে সঙ্গে বেআইনি অন্যান্য গাড়ির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান আরও তীব্র করবে রাজ্য সরকার। |
বাস-মালিকদের দাবির ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন তপনবাবু। তিনি জানান, সরকারই নিয়ন্ত্রণ কমিটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। এখন অন্য রকম কথা বললে তা ‘দুর্ভাগ্যজনক’। তপনবাবু বলেন, “মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা রইল না। রাস্তায় এমনিতেই বাস কমে যাচ্ছে। আমরা আন্দোলনে না-নামলেও বাস উঠে যাবে।” তাঁরা সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তার আগে তাঁরা কিছু করবেন না।
বাস সংগঠনের ওই নেতা বলেন, “আমরা ১ ডিসেম্বর ফের বৈঠকে বসব। পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।” |