|
|
|
|
পারিশ্রমিক নিয়ে ক্ষোভ নেই |
মনের টানেই প্রতিমা বিসর্জন দেন ওঁরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানাঘাট |
সকাল থেকে চরম ব্যস্ততা। তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে পৌঁছতে হবে পুজো মণ্ডপে। সেখানে পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা প্রতিমা বিসর্জনের দায়িত্ব ওদের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত।
ফি বছর এ ভাবেই প্রতিমা বিসর্জনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন নদিয়ার বীরনগর পুরসভার মধুগাছি, উত্তরপাড়া বাজার ও দক্ষিণপাড়ার দুর্লভ সম্প্রদায়ের মানুষ। এ ছাড়াও এখানকার হাটপুকুর এলাকায় সর্দার সম্প্রদায়ের মানুষও প্রতিমা বহনের কাজ করেন। বীরনগর ছাড়াও বেথুয়াডহরী, ধুবুলিয়া, গাছা-সহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু মানুষ প্রতিমা বিসর্জনের কাজে যুক্ত।
সারা বছর তাঁরা রাজমিস্ত্রি, জোগাড়ে, দিনমজুর, গাছ কাটা, হকারি-সহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কিন্তু পুজোর সময় সব ফেলে প্রাণের টানে প্রতিমা বহন করেন। প্রতিমার আকার ও ওজনের উপর নির্ভর করে দলে বেহারাদের সংখ্যা। সাধারণত ১৫-৩০ জনের বেহারার দল একটি প্রতিমা বিসর্জনের দায়িত্বে থাকেন। প্রয়োজনে কোথাও ওই সংখ্যা বাড়ে। এ জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে তাঁরা পান ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। কোথাও মেলে এর চেয়েও বেশি। তবে টাকাটা ওঁদের কাছে মূল্যহীন। মনের আনন্দই বেশি মূল্যবান। বীরনগর উত্তরপাড়া বাজারের বাসিন্দা ভীম সর্দার বলেন, “বংশপরম্পরায় মনের আনন্দে এই কাজ করছি। সারা বছর অপেক্ষা করি এই দিনগুলোর জন্য। কত টাকা পাচ্ছি সেটা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়।”
শনিবার বীরনগর উত্তরাপাড়া অগ্রদূত সংঘের প্রতিমা জগদ্ধাত্রী নিরঞ্জন করেন মধুগাছি এলাকার দুর্লভ সম্প্রদায়ের মানুষ। দুখিরাম দুর্লভ, নাড়ু দুর্লভ, পরেশ দুর্লভ বলেন, “এই কাজ করে খুব আনন্দ পাই।” এক ক্লাব সম্পাদকের কথায়, “ওদের হাতে বির্সজনের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকি।”
বীরনগর পুরসভার প্রধান কংগ্রেসের পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জমিদারদের আমল থেকে দুর্লভ সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওঁরা অর্থনৈতিক ভাবে খুবই দুর্বল।” কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান তপনকুমার বিশ্বাস বলেন, “এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটা ঐতিহ্য। এর মধ্যে ভাল লাগার বিষয় থাকে। কালী বাগদীদের মেয়ে। দুলে সম্প্রদায়ের মানুষ ওদের বহন করতে অপেক্ষাকৃত বেশি ভালবাসেন।” |
|
|
|
|
|