পুবমুখো রাখা রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। দক্ষিণমুখী শক্তি প্রতিমা। শাক্ত ও বৈষ্ণবদের এই মিলনের রাসোৎসবে পূর্ণিমার রাতে নবদ্বীপে কিন্তু প্রাধান্য বেশি শাক্তদেরই। শহরের কোনও কোনও মঠ বা মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি ঘিরে অষ্ট সখীর খোঁজ মেলে, শোনা যায় মৃদঙ্গের বোল, কীর্তনের সুর--‘বলয়া নূপুরমণি বাজয়ে কিঙ্কিনী, রাস রসে রতিরণে কি মধুর শুনি’। কিন্তু তার বাইরে সারা শহরই ভরে থাকে বিশালকায় দেব-দেবীর মূর্তি, শাক্ত আচারে। শতাধিক পুজো হয়। প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রথা চলে আসছে এই শহরে। অনুমান নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজকীয় পৃষ্ঠপোশকতায় ১৭৫২-৫৬ সালের মধ্যে এই রাসের বর্তমান বীজ রোপণ করা হয়েছিল। সেই সময়েরই কয়েকটি পুজো এখনও সমান উৎসাহের সঙ্গেই পালন করা হয়। |
বিন্ধ্যবাসিনী। এই পুজোর সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। নবদ্বীপের উত্তর প্রান্তে বাস করতেন গাঁড়াল সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা চাষবাসের সঙ্গে সঙ্গে গবাদি পশুর শিং দিয়ে চিরুনি, চুড়ি তৈরি করে জীবিকা অর্জন করতেন। তাঁরাই এই দেবীর পুজোর প্রচলন করেন। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত শুভেন্দুশেখর সিদ্ধান্ত বলেন, “প্রথমে ঘটেপটে যে দেবীর পুজো হত, তাই পরে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে অর্চনা করা শুরু হয়েছে। এ বছর বিন্ধ্যবাসিনীর ২৮৩ তম বর্ষ।” এই দেবী কৃষ্ণবর্ণা, সিংহবাহিনী ও অষ্টভুজা।
গৌরাঙ্গীমাতা। অজিতনাথ ন্যায়রত্ন এই পুজোর প্রবর্তক। বিন্ধ্যবাসিনীর সঙ্গে এই প্রতিমার মিল রয়েছে। তবে দেবীর গাত্রবর্ণ কাঁচা হলুদের মতো। এই দেবীর ধ্যানমন্ত্র রচনা করেছিলেন গোলকনাথ ন্যায়রত্ন। দেবীর পদতলে দু’টি সিংহ থাকে। তন্ত্রমতে এই দেবীর পুজো হয়। এই প্রতিমার শোভাযাত্রা না হলে, অন্য কোনও শোভাযাত্রা শুরু হয় না। |