এন্টালি ওয়ার্কশপে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ তৈরির কাজ চলবে। দফতরের দায়িত্ব কাগজকলমে হাতে আসার আগেই বুধবার এ কথা জানিয়ে দিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ সামসুজ্জামান আনসারি। তাঁর কথায়, “তারক সিংহের নেতৃত্বে এন্টালি ওয়ার্কশপের কাজে অগ্রগতি এসেছে। সেই ধারাবাহিকতা আমিও বজায় রাখব।”
ত্রিফলা আলো নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কের জেরেই তারক সিংহকে এন্টালি ওয়ার্কশপ থেকে সরানো হয়েছে বলে মনে করছেন পুরসভার অফিসারেরা। পুরসভার আলো বিভাগের নির্ধারিত দামের (ফেয়ার রেট) চেয়ে প্রায় আড়াই হাজার টাকা কমে বাতিস্তম্ভ বানানোর কাজ শুরু করেন তারকবাবু। এ বিষয়ে তখন তারকবাবু জানিয়েছিলেন, মেয়রের নির্দেশেই তিনি ওই কাজ করেছেন। তার পরেই পুরসভার দু’টি দফতরে একই বাতিস্তম্ভের দু’রকম দর
|
সামসুজ্জামান
আনসারি |
|
তারক
সিংহ |
নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এন্টালি ওয়ার্কশপের এক অফিসারের কথায়, “ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ নিয়ে বিতর্কের মাসুল দিতে হয়েছে তারকবাবুকে।”
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার মেয়র পারিষদে যে রদবদল করেছেন, তাতে তারকবাবুর হাতে থাকা একাধিক দফতর দেওয়া হয়েছে সামসুজ্জমান আনসারিকে। আনসারির সাফ কথা, “ওয়ার্কশপকে বাঁচাতে
হবে। এক সময়ে ওই কারখানার কাজ থমকে গিয়েছিল। তারকবাবু জোরকদমে কাজ শুরু করেছিলেন। তা বজায় থাকবে।” অর্থাৎ, তারকবাবুর দেখানো পথেই চলতে চান আনসারি। তা হলে এই রদবদল কেন?
পুর-সচিবালয়ের এক অফিসারের কথায়, “ত্রিফলা আলো লাগানোর বরাতে অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ আগেই উঠেছিল। সেই অভিযোগে বাড়তি মাত্রা আনে এন্টালি ওয়ার্কশপে তৈরি করা ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ। বাইরে থেকে কেনা বাতিস্তম্ভের তুলনায় যা ছিল প্রায় আড়াই হাজার টাকা কম। এর পরেই পুরসভার আলো বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।
পুরসভা সূত্রের খবর, দামের এই হেরফেরেই রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানাতে থাকে কংগ্রেস ও বামেরা। ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি) তা নিয়ে বিশেষ অডিট করার সিদ্ধান্ত নেন। কলকাতা হাইকোর্টে বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থে মামলাও হয়েছে। বিষয়ের গুরুত্ব বুঝেই মহাকরণ থেকে ত্রিফলা আলো সংক্রান্ত ফাইলপত্র চেয়ে পাঠানো হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, গত সোমবার রাতে পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ সেই ফাইল পৌঁছন মহাকরণে। এর পরেই মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র-সহ মেয়র পারিষদদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা ওই বৈঠকে ত্রিফলা আলোর কোনও প্রসঙ্গ ওঠেনি। তবে তারকের হাত থেকে এন্টালি ওয়ার্কশপ সরিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁর ক্ষোভ বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে ওয়াকিবহাল মলের ধারণা।
পুরসভায় দফতর রদবদলের সার্কুলার এখনও বেরোয়নি। তবে তার আগেই নিজের হাতে আসা দফতরগুলির আগাম খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন আনসারি। শহরের জলে আর্সেনিক নিয়ে তারকবাবুর নীতিকেও সমর্থন করেছেন তিনি।
সামসুজ্জামান বলেন, “শহরের পানীয় জলে আর্সেনিক আছে কি না, তা-ও নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হবে।” সার্কুলার বেরোনোর আগে গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অবশ্য নারাজ তারক সিংহ। |