দলীয় কর্মীদের হাতে তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের প্রহৃত হওয়ার ঘটনার রেশ না মিটতেই ফের গোষ্ঠী-কোন্দলে উত্তপ্ত শাসকদলের রাজনীতি। এ বার ঘটনাস্থল তথ্যপ্রযুক্তি তালুক, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর।
মঙ্গলবার শিল্পতালুকের একটি সংস্থার ঠিকাদারি শ্রমিকদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে ‘তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন’-এর এক নেতা দিলীপ ঘোষ ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত শ্রমিকেরাও নিজেদের তৃণমূল-কর্মী বলে দাবি করেছেন। বুধবার থানায় অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করে দোষীদের শাস্তির দাবি তোলেন আক্রান্তেরা। সকাল থেকে কয়েকটি সংস্থায় এই ঠিকাদারি শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস মেলায় তাঁরা কাজে যোগ দেন।
দলীয় সূত্রের খবর, ওই সংস্থায় ঠিকাদারি শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে গণ্ডগোল শুরু। তার উপরে শ্রমিক ইউনিয়নে ‘দিলীপ-ঘনিষ্ঠ’ পাঁচ জনের ঠাঁই না হওয়ায় গোলমাল চরমে ওঠে। অভিযোগ, মঙ্গলবার দিলীপবাবুর দলবল গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে।
বিধাননগর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চামেলি নস্করের অভিযোগ, “একাধিক বার শিল্পতালুকে এই ঘটনা ঘটছে। দলের দিলীপ ঘোষ ও জয়দেব নস্করদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এখানকার শ্রমিকেরা।”
অভিযোগ অস্বীকার করে দিলীপ ঘোষ (নিজেকে বিধাননগর শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দাবি করেছেন) বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ। কাউন্সিলরের ওয়ার্ডও নয়। তাঁকে কেউ মানতে চাইছে না। বদলা নিতেই উনি এ সব চক্রান্ত করছেন।”
শিল্পতালুকের এক আক্রান্ত কর্মী অলোক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তাঁদের সংস্থায় তৃণমূল ইউনিয়নে দিলীপ-গোষ্ঠীর পাঁচ জন আদতে সিপিএম-কর্মী হওয়ায় তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই মঙ্গলবার এই মারধর। পাল্টা অভিযোগে দিলীপবাবুর দাবি, ওই পাঁচ জন কাউন্সিলরেরই লোক। তাঁরা আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে কথা বলতে যাই। কিন্ত মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।
অপর অভিযুক্ত, বিধাননগর তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি জয়দেব নস্কর বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ। আমি কিংবা আমার কোনও লোক ঘটনাস্থলে ছিল না। ওখানে আমি ইউনিয়নও করি না। দিলীপদারাই ইউনিয়ন করেন। চামেলিদেবী এ সবের পিছনে আছেন। ওঁর বিরুদ্ধেই তোলাবাজি, গোষ্ঠীবাজির অভিযোগ রয়েছে।”
যদিও দিলীপ-চামেলি গোষ্ঠীর ঝগড়া কার্যত বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু ও রাজারহাটের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের প্রচ্ছন্ন মদতেই চলছে বলে অভিযোগ। এক দিকে চামেলি নস্করের কথায়, “সুজিতদাকে বারংবার বলেও লাভ হয়নি। কোনও ব্যবস্থা নেননি। ওই দু’জন সুজিতদার কাছের লোক।” পাল্টা দাবিতে দিলীপবাবুর দাবি, বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের মদতেই কাউন্সিলর এ সব ঘটিয়ে চলেছে।
দুই বিধায়ক অবশ্য গোষ্ঠী-কোন্দলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, “বচসা হয়েছে। সেটা চামেলি ও দিলীপের ব্যক্তিগত লড়াই। উন্নয়নের কাজ করব, না এ সব নিয়ে সময় কাটাব? কেউ ঝগড়া করে থাকলে ভুল করেছে। তবে ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিধায়ক হিসেবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করব। এর মধ্যে আমার মদত কিংবা গোষ্ঠী-কোন্দলের কথা আসছে কোথা থেকে?”
বিধায়ক তথা বিধাননগর টাউন তৃণমূলের সভাপতি সব্যসাচী দত্তের বক্তব্য, “সুজিত সতীর্থ বিধায়ক, চামেলি সতীর্থ কাউন্সিলর। আমি ভাইস চেয়ারম্যান। পুরসভা সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের কথা আমাকে শুনতে হবে। কিন্তু দিলীপ কে? সে কী পাঁচ নম্বর সেক্টরের ভোটার না কর্মচারী? আমাদের দলে এমন কোনও লোকের কথা আমার জানা নেই। এর মধ্যে গোষ্ঠী-কোন্দল এল কোথা থেকে? কোনও ঘটনা হয়ে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।”
এ দিকে, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্যের সভানেত্রী দোলা সেন বলেন, “পাঁচ নম্বর সেক্টরে আমাদের কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। কেউ নিজেকে সভাপতি বলে দাবি করলে তিনি মিথ্যা বলছেন।”
স্থানীয় কাউন্সিলর চামেলিদেবীর অভিযোগ প্রসঙ্গে দোলাদেবী বলেন, “স্থানীয় কাউন্সিলরের কথায় আপত্তি জানাচ্ছি। শিল্পতালুক পুর-এলাকা নয়।” যদিও চামেলিদেবী পাল্টা বলেন, “দোলাদি জানেন না। শিল্পতালুকে আমার ওয়ার্ডের ভোটার আছেন। এখানে ভোটও হয়।” |