গত শনিবার রাতে অসহ্য জ্বর নিয়ে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নিউ শিকারপুরের প্রৌঢ় অনিল মণ্ডল। তিনি হাসপাতালে একটা শয্যা পেয়েছেন ঠিকই, তবে প্রায় সব ওষুধই তাঁকে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। অনিলবাবুর ছেলে সনতের অভিযোগ, ‘‘সব ওষুধই যদি বাইরে থেকে কিনতে হয় তাহলে সরকারি হাসপাতালে আসার থেকে নার্সিংহোমে যাওয়াই ভাল।’’ একই অভিজ্ঞতা বাঁশবেড়িয়ার চম্পা বেওয়ার। পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল বছর দশেকের সুমিতা খাতুন। শুক্রবার সকালে জেঠিমা চম্পা বেওয়া তাকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চম্পা বলেন, ‘‘চিকিসৎককে দেখাতেই তিনি বেশ কয়েকটি ওষুধ লিখলেন। সেগুলো আবার হাসপাতালে নেই। বাইরে থেকে প্রায় শ’পাঁচেক টাকার ওষুধ কিনতে হল। এই হাসপাতালে কি কিছুই পাওয়া যায় না?’’
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। মাঝে মধ্যেই ওষুধ তো দূরের কথা সিরিঞ্জ, স্যালাইন এমনকি ওআরএস পর্যন্ত মেলে না। তখন সবকিছুই রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। সদ্য পেরোনো দুর্গাপুজোর সময় হাসপাতালে ওষুধের ঘাটতি চরমে উঠেছিল। এই কথা কবুলও করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘পুজোর সময় সত্যিই আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম। ওষুধের ঘাটতি ছিল। সম্প্রতি কিছু ওষুধপত্র আসায় ঘাটতি কিছুটা হলেও মিটেছে।’’ কিন্তু ওই ওষুধে কতদিন সমস্যা মেটানো তার কোনও সদুত্তর নেই হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘এই হাসপাতালে রোগীর চাপ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এদিকে আমরা জেলা থেকে যে পরিমাণ ওষুধ চেয়ে পাঠাই তার তুলনায় ওষুধ অনেক কম আসে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেই ওষুধ ফুরিয়ে যায়। যে কারণে ঘাটতিটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।’’
খাতায় কলমে সংখ্যাটা দুই লক্ষ হলেও বাস্তবে কিন্তু করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের উপর প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। অথচ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা মাত্র ৫০। গড়ে প্রায় ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বর্হিবিভাগে নিয়মিত রোগীর সংখ্যা গড়ে প্রায় ৪০০। দৈনিক প্রসূতি ভর্তি হন গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন। সমস্যাটা এখানেই। সীমান্তের ‘সবে ধন’ এই হাসপাতালে যেভাবে পাল্লা দিয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে সেই নিরিখে পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। চিকিসক, নার্স থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, ঝাড়ুদার সবই অপর্যাপ্ত। শয্যা না পেয়ে বহু রোগীকে মেঝেতেই শুয়ে থাকতে হয়। হাসপাতালের নিজস্ব কোনও অ্যাম্বুল্যান্সও নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই অচল হয়ে পড়ে রয়েছে সেটি। দীর্ঘ এই ‘নেই’ এর তালিকাকে কেন্দ্র করে ও হাসপাতালে চিকিৎসায় ‘গাফিলতির’ অভিযোগ তুলে একাধিকবার সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এলাকার মানুষ। তারপরেও পরিস্থিতি কিন্তু একটুও বদলায়নি বলেই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এদিকে হাসপাতাল কতৃপক্ষেরও পাল্টা অভিযোগ, বারবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও স্বাস্থ্যভবনে এইসব সমস্যার কথা জানিয়েও সমাধান তো দূরের কথা। দিনের পর দিন তা আরও বেড়েই চলেছে।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘মিডিয়ার কাছে অভিযোগ না জানিয়ে যেখানে জানালে ওষুধ পাওয়া যায় হাসপাতাল কতৃপক্ষের উচিৎ সেখানেই জানানো। তবে ওষুধের ঘাটতির বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। আর হাসপাতালে নতুন চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের দিকে। সেটা হয়ে গেলেই চিকিৎসকের ঘাটতি আর থাকবে না।’’ |