ডায়েরিয়ার প্রকোপেও ‘বদভ্যাস’ বদলায়নি বন্যেশ্বর ও দক্ষিণগ্রামের। সোমবারও পুকুরের নোংরা দুর্গন্ধময় জলে যথারীতি বাসন মাজা থেকে কাপড় কাচা কোনওটাই বন্ধ করা যায়নি গ্রামবাসীদের। এমনকী ডায়েরিয়া কাণ্ডের পরও সোমবার নিমের দাঁতন দিয়ে দাঁত মেজে দিব্যি পুকুরে মুখ ধুতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষকেই। রবিবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৪০ জন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ওই গ্রামে। পাশের গ্রাম আথুয়া ও তাঁতিবিড়োলেও রবিবার ৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এক কিশোরীর মৃতু্য হয়েছে ডায়েরিয়ায়। সোমবার গ্রামে নতুন করে আক্রান্তের খবর নেই। তবে রীতিমতো আশঙ্কায় রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে পঞ্চায়েত কর্তা পর্যন্ত সবাই।
গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অসহায় স্বাস্থ্যকর্মী গৌরী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বার বার বলা সত্ত্বেও গ্রামবাসীদের কুঅভ্যাসের বদল ঘটানো যাচ্ছে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখ ধোয়া থেকে স্নান করা, কাপড় কাচা সবকিছুই তারা এখনও সারছেন পুকুরের জলে। অথচ প্রায় সব পুকরের জলই নোংরা। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তাতে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিদিন বলতে হচ্ছে নলকূপের জল ব্যবহার করতে। এমনকী কয়েকজনকে পুকুর থেকে বাসন নিয়ে বাড়িতে ফেরতও পাঠিয়েছি। কিন্তু অবস্থার বদল ঘটেনি। |
শনি ও রবিবার চুন, ব্লিচিং ছড়ানোর জন্য সোমবার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু পুকুরের জল ব্যবহার বন্ধ না হলে পুনরায় ডায়েরিয়া মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।” সাগরদিঘি ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক বিশ্বজিৎ দে বলেন, “ওই গ্রামের বলে নয় সব এলাকায় পুকুরের জল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ব্যবহার করতে হবে নলকূপের জল। এলাকার সব নলকূপ ইতিমধ্যেই ব্লিচিং দিয়ে জীবানুমুক্ত করা হয়েছে।” গ্রামেরই সাথী রবিদাসের একমাত্র শিশু ডায়েরিয়ায় আক্রন্ত হয়েছিল দু’ দিন আগে। সাথীদেবী বলেন, “গ্রামের বেশির ভাগ নলকূপই তো খারপ। যে ক’টা রয়েছে সেখানে কি গ্রামের সবাই বাসন মাজতে পারবে? নলকূপ পাম্প করে বাসন ধোয়া যায় না। কাপড় কাচা অসম্ভব। বাধ্য হচ্ছি পুকুরের জল ব্যবহার করতে।”
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুকুরের জলের ব্যবহার বন্ধ করতে গেলে সব অকেজো নলকূপ সারাতে হবে। তাছাড়া নলকূপের সামনে বাসন মাজা কাপড় কাচা করতে গেলে গোটা দিনটাই চলে যাবে। তাই আগে সক্রিয় হতে হবে পঞ্চায়েত কর্তাদের। তাছাড়া বন্যেশ্বর গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ও ভ্যান ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা অনেকের নেই। বছর তিনেক আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকার সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় একটি অ্যাম্বুল্যান্স দান করেছিলেন। সেটিও খারপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেটি থাকলে গ্রামের মানুষ সুবিধে পেত।” অ্যাম্বুল্যান্সটি রয়েছে গ্রামেরই কংগ্রেস নেতা উজ্জ্বল দেওয়ানের বাড়িতে। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “খারাপ অ্যাম্বুল্যান্সটি সারানো গেলে তাতে অবশ্যই উপকৃত হবেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু সেটি চালানোর জন্য একজন চালক দরকার। তাঁকে অন্তত হাজার পাঁচেক টাকা বেতন দিতে হবে। কে দেবে সেই টাকা?” গুমানি দেওয়ান লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের সম্পাদক সজল দেওয়ান বলেন, “গ্রামের মানুষের পরিষেবা দিতে আমরা তার দায়িত্ব নেতে চাই। এর জন্য ব্যয়ভার বহন করতেও রাজি আছি।” একই কথা বন্যেশ্বর পঞ্চায়েতেরও। পঞ্চায়েত প্রধান বাঁকু মাল বলেন, “ডায়েরিয়া থেকে বুঝেছি গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্সের কত প্রয়োজন।” |