অন্তত পাঁচ হাজার আবেদন খোলাই হয়নি। অথচ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ পর্যন্ত হয়েছে। ২০১০ সালে জলপাইগুড়ির প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় এমনই প্রমাণ মিলেছে বলে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ দাবি করেছে। সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে ওই বছরে বহু আবেদনপত্র না-খুলে পরীক্ষা পর্ব শুরু করে শেষ হয়ে যায়। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান ধর্ত্তিমোহন রায় বলেন, “এমন মারাত্মক তথ্য পেয়েই আমরা দেরি না করে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এবং তদন্ত কমিটিকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। ওঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।” আবেদনপত্রগুলি নিয়ে কী করণীয় তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। ২০১০ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় ১৪১১টি পদের জন্য প্রায় ৩০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী জমা পড়া আবেদন পত্র ভালভাবে খতিয়ে দেখে নম্বরের ভত্তিতে তালিকা তৈরি করতে হয়। নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রথম বাছাইয়ের লিখিত পরীক্ষায় ডাকতে হয়। জমা পড়া প্রতিটি আবেদন পত্র খুলে খতিয়ে দেখা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্যই বহু আবেদনপত্র খোলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছিল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদই। গত বছর রাজ্যে পালাবদলের পরে অতিরিক্ত জেলাশাসক পর্যায়ের এক আধিকারিককে অস্থায়ী ভাবে সংসদের চেয়ারম্যান পদে বসায় নতুন সরকার। সংসদের স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ হয় চলতি বছরেই নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়েই ‘বির্তকিত’ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। সংসদ জানাচ্ছে, তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন পত্র একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখা থেকে সংগ্রহ করে আবেদনপত্র পূরণ করে বন্ধ খামে ব্যাঙ্কের সেই শাখাতেই জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্তে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বহু আবেদন পত্র সংগ্রহই করা হয়নি। ধূপগুড়ি ব্লকের একটি শাখা থেকে একটিও আবেদনপত্র সংগ্রহ করেনি তৎকালীন সংসদ কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালের জুলাই মাসে জলপাইগুড়ি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেলে খোদ সংসদের তৎকালীন চেয়ারম্যানের স্ত্রী, সিপিএমের জেলা সম্পাদকের পূত্রবধূ, সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদকের মেয়ে, সরকারি কর্মী সংগঠন থেকে শুরু করে সিপিএমের জেলা, জোনাল এবং লোকাল কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের নাম থাকায় জেলা জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। পাশাপাশি সংসদের তদন্তে উঠে এসেছে, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পছন্দের কিছু প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিতে নিয়ম খেলাপ করে একটি আসনের অনুপাতে বেশই সংখ্যক ওবিসি আবেনকারীদের পরীক্ষায় ডাকা হয়। |