অবৈধ নির্মাণ ভাঙার অভিযান দু’দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিলিগুড়িতে কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের ভূমিকা নিয়ে দুই দলের অন্দরেই ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের একাংশ নিজেদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী-প্রমোটারদের বাড়ি ভাঙার কাজে বাধা দিচ্ছেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের তরফেও কয়েকজন নেতা-কর্মীর ক্ষোভ, কংগ্রেস নেতাদের একাংশও ‘বাছাই প্রোমোটারদের’ বাঁচাতে অভিযান বন্ধ করে অন্যকে দূষছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “একটি বিষয় নিয়ে বার বার বলতে বলতে আমি নিজেই লজ্জিত ও দুঃখিত। হয় মেয়র বলে দিন, বেআইনি নির্মাণ ভাঙা সম্ভব নয়, না হলে বেআইনি নির্মাণের তালিকা প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে অভিযান করা হোক। আর অপ্রাসঙ্গিক কথা বলার কোনও মানে হয় না।” কংগ্রেসের একাংশের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তৃণমূলের কয়েকজন নেতার বাধায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে গৌতমবাবু বলেন, “আমি তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি, উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান, পুরসভার পরিষদীয় দলের নেতা ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। আমি যেখানে ধারাবাহিক ভাবে সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে বলছি। সেখানে তৃণমূল বাধা দিচ্ছে গোছের ভিত্তিহীন কথা বললে হবে? অভিযান চালাতে হবে।” কংগ্রেসের তরফে জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার দাবি করেছেন, তাঁদের দলের কেউ বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বিরুদ্ধে নন। শঙ্করবাবুর দাবি, “বেআইনি নির্মাণের তালিকা রয়েছে সেগুলি ভাঙা হবে। মেয়র তা জানিয়ে দিয়েছেন।” এদিনও মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত কেন অভিযান বন্ধ রয়েছে সেই যুক্তি দেন। তাঁর কথায়, “বিধান মার্কেটে রাস্তার উপরে জিনিসপত্র রেখে কিছু ব্যবসায়ী দোকান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে পুরসভার কর্মীরা এ দিন অভিযানে যান। সে জন্য অভিযান চালানো যায়নি। আগামীতে চালানো হবে।” পুরসভা সূত্রের খবর, শুক্রবার ও শনিবার শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে শহরে চারটি বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়। শনিবার সকালে একটি নির্মাণ ভাঙার পর থেকে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে, শহরের শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, সেবক রোড, চানাপট্টি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অন্তত ১১টি বেআইনি নির্মাণের স্পষ্ট প্রমাণ পুরসভার হাতে রয়েছে। এই ব্যাপারে মেয়র পারিষদ (বিল্ডিং) সীমা সাহার দাবি, “বেআইনি নির্মাণের একটি তালিকা পুরসভার কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওঁকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।” কিন্তু কমিশনার বলেন, “নির্দেশ মেনে আমি কাজ করছি। যে কয়েকটি বিল্ডিং ভাঙতে বলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। আমার কাছে কোনও তালিকা নেই।” এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন কংগ্রেস-তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের অনেকেই। কংগ্রেসের দার্জিলিংয়ের জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্ষীয়ান নেতা প্রশান্ত নন্দী বলেন, “আশা করব, ফের অভিযান চালিয়ে মানুষকে পুরসভা ভরসা দেবে।” তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার প্রবীণ নেতা প্রতুল চক্রবর্তী বলেন, “কয়েকটি ছোট নির্মাণ ভেঙে অভিযান বন্ধ করলে খারাপ বার্তা যাওয়া স্বাভাবিক। এটা নিয়ে লুকোচুরি খেলা ঠিক নয়। পুরসভার কারও কাছে নতি স্বীকার করা উচিত নয়।” |